সম্পাদক সমীপেষু: প্রতিষ্ঠা ঠিক কবে

১৯৫৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির জিজ্ঞাসার উত্তরে, তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর, কানপুরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share:

ইতিহাস-রঞ্জিত: ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ উদ্‌যাপন উৎসব, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। পিটিআই

সন্দীপন চক্রবর্তীর ‘শতবর্ষ ও শত নষ্ট সুযোগ’ (২১-১০) প্রবন্ধটি এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা বিষয়ে তথ্যগত ভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

Advertisement

১৯৫৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির জিজ্ঞাসার উত্তরে, তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর, কানপুরে। পার্টির তরফে যাঁরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে পি সি যোশী, অজয় ঘোষ, ডাঙ্গে ছাড়াও ছিলেন বাসবপুন্নাইয়া, রণদিভে, এ কে গোপালন (এই শেষোক্ত তিন পরে পার্টি ভেঙে সিপিআইএম-এ যোগ দেন)। এবং এই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষরকারী হিসেবে ছিলেন বি টি রণদিভে। সুতরাং অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির গৃহীত সিদ্ধান্ত ছিল, ১৯২০-তে তাসখন্দে নয়, ১৯২৫ সালেই ভারতের কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু, নিজস্বতা প্রমাণের এক অযৌক্তিক তাগিদেই সম্ভবত, সিপিআইএম, ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়েও, ১৯২০-কে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। আরও মজার ব্যাপার, রাস্তায় ওই দলের ব্যানার লিখেছে: ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে, ওপরে মুজফ্ফর আহমেদ-এর ছবি! তাসখন্দ জায়গাটা তা হলে কোথায়?!

Advertisement

ভিষক গুপ্ত

ইমেল মারফত

তিনি ও ধর্ম

এ কথা ঠিক, বিদ্যাসাগর উপনয়ন ধারণ, পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ সবই করেছেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের জীবনীকার গোঁড়া হিন্দু বিহারীলাল সরকার আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘‘নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বংশধর বিদ্যাসাগর, উপনয়নের পর অভ্যাস করিয়াও ব্রাহ্মণের জীবনসর্বস্ব গায়ত্রী পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন।’’

ধর্ম বিদ্যাসাগরের জীবনকে কোনও মতেই প্রভাবিত করেনি। খোদ রামকৃষ্ণকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তা তিনি(ঈশ্বর) থাকেন থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না। আমার তো কোনও উপকার হল না।’’

রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে লিখেছেন, “বিদ্যাসাগর... আচারের যে হৃদয়হীন প্রাণহীন পাথর দেশের চিত্তকে পিষে মেরেছে, রক্তপাত করেছে, নারীকে পীড়া দিয়েছে, সেই পাথরকে দেবতা বলে মানেননি, তাকে আঘাত করেছেন। অনেকে বলবেন যে, তিনি শাস্ত্র দিয়েই শাস্ত্রকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু শাস্ত্র উপলক্ষমাত্র ছিল; তিনি অন্যায়ের বেদনায় যে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সে তো শাস্ত্রবচনের প্রভাবে নয়।”

আচার্য কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘‘বিদ্যাসাগর নাস্তিক ছিলেন, একথা বোধহয় তোমরা জানো না… ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আমাদের দেশে যখন ইংরাজি শিক্ষার প্রবর্তন হয়, তখন আমাদের ধর্ম বিশ্বাস শিথিল হইয়া গিয়াছিল। যেসকল বিদেশীয় পণ্ডিত বাংলাদেশে শিক্ষকতা আরম্ভ করিলেন, তাঁহাদের অনেকের নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাস ছিল না। ডেভিড হেয়ার নাস্তিক ছিলেন, একথা তিনি কখনও গোপন করেন নাই, ডিরোজিও ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লবের সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার ভাব হৃদয়ে পোষণ করিয়া ভগবানকে সরাইয়া যুক্তির পূজা করিতেন।... চিরকাল পোষিত হিন্দুর ভগবান সেই বন্যায় ভাসিয়া গেলেন। বিদ্যাসাগর নাস্তিক হইবেন তাহাতে আর আশ্চর্য কি?’’

বিদ্যাসাগরের জীবনীকার বিহারীলাল সরকার গভীর আক্ষেপের সঙ্গে লিখেছেন, “ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্তান হইয়া, হৃদয়ে অসাধারণ দয়া, পরদুঃখকাতরতা প্রবৃত্তি পোষণ করিয়া হিন্দু শাস্ত্রের প্রতি, হিন্দু ধর্মের প্রতি তিনি আন্তরিক দৃষ্টি রাখিলেন না কেন?’’ উত্তর বিহারীলাল নিজেই দিচ্ছেন, ‘‘বিদ্যাসাগর কালের লোক। কালধর্মই তিনি পালন করিয়া গিয়াছেন। ইহাতে হিন্দুর অনিষ্ট হইয়াছে, হিন্দু ধর্মে আঘাত লাগিয়াছে।’’ বিদ্যাসাগরের অন্যতম জীবনীকার চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছেন, “তাহার নিত্যজীবনের আচার ব্যবহার, ক্রিয়াকলাপ আস্থাবান হিন্দুর অনুরূপ ছিল না, অপরদিকে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের লক্ষণের পরিচয়ও কখনও পাওয়া যায় নাই।”

বিদ্যাসাগরের সহোদর শম্ভুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “অগ্রজ মহাশয় শৈশবকাল হইতে কাল্পনিক দেবতার প্রতি কখনই ভক্তি বা শ্রদ্ধা করিতেন না।’’

সংস্কৃত কলেজের পঠনপাঠন সম্পর্কে ব্যালেন্টাইনের উত্তর দিতে গিয়ে বিদ্যাসাগর বলেন, ‘‘পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও হিন্দুশাস্ত্রের মধ্যে সব জায়গায় মিল দেখানো সম্ভব নয়। সম্প্রতি দেশে বিশেষ করে কলকাতায় ও তার আশেপাশে পণ্ডিতদের মধ্যে এক অদ্ভুত মনোভাব পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। শাস্ত্রে যার বীজ আছে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যের কথা শুনলে সেই সত্য সম্বন্ধে তাদের শ্রদ্ধা ও অনুসন্ধিৎসা জাগা দূরে থাক, তার ফল হয় বিপরীত অর্থাৎ সেই শাস্ত্রের প্রতি তাদের বিশ্বাস আরো গভীর হয় এবং শাস্ত্রীয় কুসংস্কার আরো বাড়তে থাকে। তাঁরা মনে করেন যেন শেষ পর্যন্ত শাস্ত্রেরই জয় হয়েছে, বিজ্ঞানের জয় হয়নি।’’

বিদ্যাসাগরের সময় থেকে আমরা অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে, হঠাৎ প্রাক্-বিদ্যাসাগর, প্রাক্-রামমোহন যুগে দেশকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার একটা ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত প্রত্যক্ষ করছি। এটিকে প্রতিহত করতে আমাদের পাথেয় হোক বিদ্যাসাগরেরই কথা, ‘‘ধর্ম যে কী, তাহা মানুষের বর্তমান অবস্থায় জ্ঞানের অতীত এবং ইহা জানিবারও কোনও প্রয়োজন নাই।’’

সুকুমার মিত্র

কলকাতা-১২৫

মহান সাভারকর

সাভারকরকে ভারতরত্ন প্রদানের দাবি কি শুধুমাত্র বিজেপির ভোট প্রচারের ‘গিমিক’? সেটা সাভারকরের জীবনই বলে দেবে।

সালটা ১৮৯৯, সাভারকর ১৬ বছরের যুবক। দাদা গণেশ সাভারকরকে সঙ্গে নিয়ে ‘মিত্র মেলা’ বিপ্লবী সমিতি প্রতিষ্ঠা করলেন। ১৯০৪ সালে, যখন তিনি পুণের ফার্গুসন কলেজের ছাত্র, মাতসিনির ‘ইয়ং ইটালি’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সমিতির নামকরণ করলেন ‘অভিনব ভারত’। ১৯০৬-এ আইন পড়ার জন্য তিনি লন্ডন যান। সেখানে ‘মাতসিনি চরিত’ নামে একটি পুস্তক রচনা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মাতসিনির সিক্রেট সোসাইটি ও গেরিলা যুদ্ধকৌশল ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

এর পর তিনি শ্যামজি কৃষ্ণবর্মা প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া হাউস’-এর সদস্য হন। বোম্বাইয়ের বিপ্লবীদের কাছে অস্ত্র ও বোমা তৈরির কৌশল পাচার করার জন্য ‘ফ্রি ইন্ডিয়া হাউস’ নামে সংস্থা তৈরি করেন। তাঁর মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী মদনলাল ধিংরা ১৯০৯ সালে কার্জন উইলি-কে হত্যা করেন। তাঁর পাচার করা পিস্তল দিয়েই অনন্ত লক্ষ্মণ কানহেরি নাশিকের জেলাশাসক জ্যাকসনকে হত্যা করেন।

ইতিমধ্যে তিনি ১৯০৭ সালে, সিপাহি বিদ্রোহের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি পুস্তক রচনা করেন, মরাঠি ভাষায়। ব্রিটিশ সরকার সেটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯০৯ সালে বইটির ইংরেজি অনুবাদ হয় এবং মাদাম ভিকাজি কামা সেটিকে নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্সে প্রকাশ করেন। কিছু কপি ভারতে পাচার করা হয়। লালা হরদয়াল আমেরিকাতে বইটি প্রকাশ করেন। ভারতে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে ভগৎ সিংহ দ্বারা। ১৯৪৪ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাপানে বইটি প্রকাশ করেন। বইটি আইএনএ-র পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয়।

এ দিকে ১৯১০ সালে নাশিক ষড়যন্ত্র মামলায় সাভারকর বন্দি হন এবং বিচারে তাঁর ৫০ বছরের কালাপানির সাজা হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। এমন এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ভারতরত্ন দেওয়া হবে না কেন?

অভিজিৎ বিশ্বাস

কেশাইপুর, নদিয়া

পরিবেশের ক্ষতি

আমাদের সব উৎসবই পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। পুজোর জন্য গাছ কেটে ফেলা হয়, নদীতে প্রতিমা-সহ পুজোর যাবতীয় উপচার ফেলে নদী দূষিত করা হয়। দীপাবলিতে বাজি পুড়িয়ে মারাত্মক বায়ুদূষণ করা হয়। পরিবেশ বাঁচিয়ে উৎসব পালন করা যায় না?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement