Nirmala Mishra

সম্পাদক সমীপেষু: তোমার আকাশ

তাঁর প্রয়াণের সংবাদে মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। যদিও জানতাম, দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৪:৩৮
Share:

সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র।

সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্রর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার শিল্পীমহল। ‘ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে, কখন যে মা গেল চলে, সবাই বলে ওই আকাশে, লুকিয়ে আছে খুঁজে নাও’— আজ থেকে পনেরো বছর আগে রানাঘাটে একটা সঙ্গীতের আসরে গাইতে এসে নির্মলা মিশ্র যখন এই গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন, তখন অনেকের চোখের কোণে জল এসে গিয়েছিল। সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর একের পর এক গানে। তাঁর প্রয়াণের সংবাদে মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। যদিও জানতাম, দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালেও ভর্তি থেকেছেন একাধিক বার।

Advertisement

নির্মলা মিশ্র রেখে গেলেন তাঁর অসংখ্য গান ও গুণমুগ্ধ শ্রোতাদের। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখের যুগেও বাংলা গানের আলাদা ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি। ‘এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না’, ‘তোমার আকাশ দু’টি চোখে’, ‘সবুজ পাহাড় ডাকে’, ‘বলো তো আরশি’ ইত্যাদি গানগুলো যেন চিরদিনের, কখনও পুরনো হওয়ার নয়। বাংলার পাশাপাশি ওড়িয়া ছবিতেও একাধিক গান গেয়েছেন তিনি। অনুতাপ নামের ওড়িয়া ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘নিদাভরা রাতি মধুঝরা জানহা’ গানটি আজও ওড়িয়া গানের শীর্ষে আছে। মৃত্যুর পরেও শিল্পী চিরকালই অমর থাকেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। আমাদের কর্তব্য, শিল্পীর অমর সৃষ্টিগুলোকে সংরক্ষণ করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া

Advertisement

প্রতারণা

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ (২৯-৭) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, তা যথেষ্টই উদ্বেগজনক। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরাসরি আর্থিক লেনদেন, সেই অর্থ শীর্ষস্থানীয় নেতার হাতে পৌঁছে যাওয়া, এই সব ঘটনা শুধু বিস্ময়ের উদ্রেক করে না, অগণিত শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর সঙ্গে সরাসরি প্রতারণার নামান্তর বলা যায়। ঔদ্ধত্য এবং আত্মবিশ্বাসের উত্তুঙ্গ শিখরে অবস্থান না করলে এক জন মানুষের পক্ষে এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। সরকারি স্কুলে নিয়োগপত্র পাওয়ার জন্য অর্থের বিনিময় বিষয়টিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ঘটনা পরম্পরা তাকেই মান্যতা দিয়ে গেল। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে সমস্ত অযোগ্য শিক্ষক এই দুর্নীতির অংশ হিসেবে শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাতে এখনও বহাল রয়েছেন, তাঁদের সকলের অপসারণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে কি?

আরও প্রশ্ন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এটাই কি প্রথম দুর্নীতি? আসলে এই দুর্নীতির সূচনা যে কোন পর্বে শুরু হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা শুধু মুশকিল নয়, দুরূহও বটে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য যুবক-যুবতী এটা জেনেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন যে, কিছু স্বজনপোষণ থাকবেই। দুর্ভাগ্যজনক হল, সেটা কত শতাংশ, কেউ জানতেই পারেন না। আজ যাঁরা সমালোচনায় বিভোর হয়েছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন, এই শিক্ষাব্যবস্থাটিতেই তাঁরা দলীয় কর্মীদের এক সময় কী ভাবে নিয়োগ করেছেন। স্কুল দফতরে এবিটিএ, রাজ্য সরকারি দফতরে কোঅর্ডিনেশন কমিটির আধিপত্য কি শুধুই কমিউনিজ়মে আস্থা রেখে? সম্ভবত নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এগুলিকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুধু বৈভব ও প্রতিপত্তির জোরে বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে অপরাধী তার পক্ষে বিচারের রায় কার্যকর করতে সক্ষম— কথাটি সখেদে জানিয়েছেন ভারতের এক বিচারক। অতএব, ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনও মানে হয় না।

একটু পিছন দিকে ফেরা যাক। তখন কংগ্রেসি নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। ১৯৭৭ সালে জ্যোতিবাবু বসালেন তিনটি কমিশন— বিচারপতি হরতোষ চক্রবর্তী কমিশন, বিচারপতি শর্মাসরকার কমিশন, বিচারপতি অজয় বসু কমিশন! ৩৪ বছরেও সময় পাওয়া গেল না সেই কমিশনগুলির রিপোর্ট সামনে আনার। বামফ্রন্টের পক্ষে সওয়াল করা সবচেয়ে সরব অ্যাডভোকেট মানুষটিকে সেই কথা মনে করিয়ে আজ আর কেউ বিড়ম্বনায় ফেলেন না। কংগ্রেসি জমানার সবচেয়ে কুখ্যাত পুলিশ অফিসার বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে সামান্য পুলিশ সাব ইনস্পেক্টর থেকে উন্নীত হয়ে অবসর নিলেন ডেপুটি কমিশনার হিসেবে। তিনি কত যে তরতাজা যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছিলেন, তার হিসাব নেই। নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েও হাই কোর্টে তিনি জামিন পেয়ে যান, জেল না খেটেই।

আজ সেই সব অবরুদ্ধ ইতিহাস। বলতে বাধ্য হচ্ছি, আইনের চোখে সবাই দোষী সাব্যস্ত হবেন এই নিশ্চয়তা কোথায়, যদি গোটা আইনব্যবস্থাটিকেই প্রভাবিত করা যায়? বর্তমান পরিস্থিতিতেও হয়তো বিচার প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হবে, আখেরে লাভ হবে না কিছুই। সততা শব্দটি আপেক্ষিক বলেই প্রতীয়মান হবে।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

কৃষক আন্দোলন

শুভাশিস চক্রবর্তীর ‘সারা বছরের পাওনা মাত্র দু’-এক ধামা ধান’ শীর্ষক প্রবন্ধের (রবিবাসরীয়, ৩১-৭) প্রেক্ষিতে আমার এই চিঠি। প্রবন্ধকার তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনার সূচনায় ১১৭৬ ও ১৩৫০ বঙ্গাব্দের ভয়াবহ মন্বন্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলার তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতপক্ষে ছিল ভূমিরাজস্ব বিষয়ক ফ্লাউড কমিশনের একটি সুপারিশ। সেই সুপারিশে বর্গাদার বা ভাগচাষির (আধিয়ার) উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের দু’ভাগ প্রাপ্য হয়, কিন্তু জমিদার, জোতদার ও তাঁদের নায়েবদের দুরভিসন্ধিতে সেই সুপারিশ কার্যকর হয়নি। পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহতা প্রশমিত হওয়ার পর তেভাগার দাবিতে বর্গাদারদের সংগঠিত করার জন্য কমিউনিস্ট কর্মীরা ১৯৪৬ সালে বাংলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। জানা যায়, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলা বাদে বাংলার সব জেলাতেই এই আন্দোলন কম-বেশি প্রসারিত হয়েছিল এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভাগচাষিরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরেও বঙ্গদেশের প্রায় ৪৯ জন ভাগচাষি এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস মন্ত্রিসভা ১৯৫০ সালে তেভাগা আন্দোলনের মূল দাবিগুলো গ্রহণ করেছিল। এ ছাড়াও, বাংলার তেভাগা আন্দোলনের মতো তেলঙ্গানা, কেরল, ত্রিবাঙ্কুর প্রভৃতি অঞ্চলে প্রায় একই সময়ে কৃষক-আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির অমৃত মহোৎসবে প্রাক্-স্বাধীনতা কালের সকল রাজ্যের কৃষক আন্দোলনের অমলিন ঐতিহ্য বিস্মৃত হওয়া অপরাধ বলে মনে হয়।

প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি

ঘৃণায় লাগাম

রত্নাবলী রায়ের ‘এত নির্দয় বোধহীন আমরা’ (৩০-৭) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। মানসিক রোগাক্রান্ত মানুষকে আমরা ‘পাগল’ বলে দেগে দিয়ে শব্দটাকে গালাগালির পর্যায়ে নিয়ে গেছি। অথচ, হৃদ্‌রোগ, শুগার, প্রেশারের মতো মানসিক সমস্যাও একটা রোগ। এবং এই রোগ নিরাময়যোগ্য। অন্য রোগের সঙ্গে এই রোগের পার্থক্য হল, ওষুধপত্রের সঙ্গে চাই সামাজিক সাহায্য ও সম্মান। প্রবন্ধে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাগল’ শব্দটা গালাগালি হিসেবে ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে। আসলে প্রান্তিক মানুষকে শ্লেষ, ঘৃণা বর্ষণ করে আমরা আত্মপ্রসাদ লাভ করি। সময় এসেছে এই ঘৃণা ভাষণে লাগাম পরানোর। শুধু আইন করে নয়, চাই সামাজিক চেতনার উন্মেষ।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement