বিকাশ রায়কে নিয়ে দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা পড়ে (‘রাতে দোকান খুলিয়ে...’, ৩১-৩), একটি মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল। সালটা বোধ হয় ১৯৬৬। আমি সাউথ সিটি কলেজের ছাত্র। দোলের দিন, বিকেলের দিকে, ঠিক গাঙ্গুরামের মিষ্টির দোকানের কাছে গোলপার্কে একটি রাধাচূড়া গাছের তলায় আমাদের আড্ডার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। সকালে দোল খেলা হয়ে গিয়েছে, এখন শার্টপ্যান্ট পরিষ্কার।
মন্টুর ম্যাগাজিনের দোকান থেকে একটা বই খুলে পড়ছি, হঠাৎ পাশের গলি থেকে একটি পরিচিত ছোট ছেলে পিচকিরি দিয়ে আমার জামাকাপড়ে এক গাদা রং লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালাল। তার পর বেশ কিছুটা দূর থেকে চেঁচাতে লাগল, ‘‘ম্যাজিক! ম্যাজিক! ভ্যানিশ! ভ্যানিশ!’’ নিজের জামাকাপড়ের দিকে তাকাতেই দেখি, রঙের ছোপগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে, শুধু অল্প ভিজে আছে জায়গাগুলো।
ঠিক সেই সময়েই, ক্রিম রঙের ‘ডজ কিংসওয়ে’ গাড়ি থেকে নেমে বিকাশ রায় সোজা গাঙ্গুরামের দোকানে ঢুকলেন। পরিচিত পোশাক— কোঁচানো ধুতি, দুধসাদা গিলে করা পাঞ্জাবি, পায়ে চকচকে পাম্প-শু। এখানে উল্লেখ করি, বিকাশবাবু প্রায় রোজই গাঙ্গুরামের দোকান থেকে মিষ্টি কিনতেন।
হঠাৎ আমার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি খেলে গেল। বাচ্চা ছেলেটাকে টফি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে, ওর পিচকিরিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম রাধাচূড়া গাছের তলায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিকাশ রায় বাইরে আসতেই, ওঁর ধোপদুরস্ত জামাকাপড়ে রং লাগিয়ে দিলাম। অসম্ভব রেগে গেলেন উনি। কাছে এসে ডান হাত তুললেন চড় মারার জন্য। হঠাৎ কী ভেবে মিষ্টির প্যাকেটগুলোকে গাড়িতে রেখে এলেন। এ বার সঙ্গে ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছেন। বললেন, ‘‘দেখে তো মনে হচ্ছে ভাল ফ্যামিলির ছেলে। ভদ্রলোকের পাড়ায় থাকো। অথচ অসভ্যতার সীমা নেই?’’ এরই মধ্যে বাচ্চা ছেলেটি— যার পিচকিরি নিয়েছিলাম— হাততালি দিয়ে বলে উঠল, ‘‘ম্যাজিক, ম্যাজিক! ভ্যানিশ, ভ্যানিশ! ’’ বিকাশবাবু তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও রং নেই, শুধু জলের দাগ, তাও শুকিয়ে যাচ্ছে। ওঁর রাগও গলে জল। তবু বললেন, ‘‘এটা আমি সমর্থন করি না।’’
সুযোগ বুঝে বললাম, ‘‘ঠিক আছে, অন্যায় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দোলের দিন রং দিলাম, মিষ্টি খাওয়াবেন না?’’ ‘‘একদম না’’, উনি বললেন, ‘‘বাড়ি এসে আবির দিলে তবেই খাওয়াব।’’ কথা না বাড়িয়ে আমি আর ছেলেটি পিছন ফিরে চলে যাওয়ার উপক্রম করতেই, বিকাশবাবু ডেকে বললেন,‘‘এই যে ইয়ং ম্যান, গাঙ্গুরামে চলো।’’ দোকানে ঢুকে বললেন, ‘‘এদের সবচেয়ে ভাল মিষ্টি যা আছে দিয়ে দাও।’’ কী আর খাব? বড় চমচম খেলাম দু’জনে। গাড়িতে ওঠার আগে বললেন, ‘‘বুঝেশুনে দুষ্টুমি করবে।’’ এর পর যত বার মিষ্টি কিনতে দোকানে ঢুকতেন, দেখা হলে হাত তুলে বলতেন, ‘‘ভাল আছ তো? দুষ্টুমি কেমন চলছে?’’
হরিজীবন বন্দ্যোপাধ্যায় নাকতলা
অর্থনীতি, বাস্তব
রিপোর্ট বলছে, ভারতের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। নৈহাটির কাগজমণ্ড তৈরির কারখানায় মৃত ছ’জন শ্রমিক এই ৮০ শতাংশের একটা ‘উপেক্ষণীয় ভগ্নাংশ’। এই ছ’জনের জায়গায় অন্তত ছ’হাজার জন অপেক্ষা করে আছেন আবারও ওই কুয়ায় সুরক্ষা ছাড়া নামবেন বলে। কাগজে সাত শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধির খবর পরিবেশিত হয়। কিন্তু এই হিসাবের ভিত্তি যে এমন কত লক্ষাধিক শ্রমিকের ঘাম, রক্ত আর মৃত্যুর বাস্তবতা, তার হিসাব কে রাখে! অর্থনীতি বলছে, দেশের অধিবাসী আর সংগঠিত উৎপাদন ক্ষেত্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বেঁচেবর্তে থাকার ব্যাপার আছে। সংগঠিত ক্ষেত্র মুনাফার উদ্দেশ্যে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে, যার ক্রেতা দেশের অধিবাসীরা। অধিবাসীদের শ্রম, জমি, জল, জঙ্গল আহরণ করেই এই ক্ষেত্রের উৎপাদন সংগঠিত হয়, যার বিনিময়ে পুঁজিবাদী ক্ষেত্র মজুরি, খাজনা, লভ্যাংশ ইত্যাদি দেয়।
মুশকিলটা হয়, যখন পুঁজিবাদী ক্ষেত্র প্রযুক্তিগত কারণে বা মুনাফা বাড়ানোর তাগিদে শ্রম কেনা বন্ধ করে দেয় কিন্তু জমি, জঙ্গল বা জল আহরণ চালিয়ে যায়। এর ফলে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির উজ্জ্বল ছবি কাগজে শোভা পায় বটে, কিন্তু দেশের মানুষের একটা বড় অংশ তাঁদের জীবন জীবিকা হারিয়ে অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র থেকে উদ্বাস্তু হয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রে এসে ভিড় করেন, যাঁরা মরণ কুয়ায় নেমে প্রাণ দিলেও অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রের কিস্যু যায় আসে না। সুতরাং সাত শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির খবরের পাশে নৈহাটির কাগজ কারখানার ‘ছোট্ট’ খবরটা বার বারই জায়গা করে নেবে।
প্রতীপকুমার দত্ত বোলপুর, শান্তিনিকেতন
শ্রমিক সুরক্ষা
‘বেওয়ারিশ’ (৪-৪) সম্পাদকীয়টিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দুর্দশার চিত্রটি চমৎকার ফুটে উঠেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে এই দুর্দশা মারাত্মক আকার নিয়েছে। মুনাফাই যেখানে মালিকদের উৎপাদনের একমাত্র উদ্দেশ্য, সেখানে একান্ত বাধ্য না হলে শ্রমিকদের পিছনে কিছুমাত্র ‘অতিরিক্ত’ খরচ তাঁরা করতে চান না। সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন তাঁদের এ কাজে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু নানা কারণে তা আজ অনেকখানি দুর্বল। এই অবস্থায় সরকারের ভূমিকাটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেন্দ্র–রাজ্য— সব সরকারই ‘শিল্প–বান্ধব’ হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ফলে সরকারের নেতা–মন্ত্রী–আমলারা শ্রমিকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখেও দেখেন না।
সম্পাদকীয়টিতে, শ্রমিকের নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সমাজতন্ত্রের ‘ভুল চশমা’ দিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যত দিন সমাজতান্ত্রিক শিবির ছিল, তত দিন অন্য রাষ্ট্রগুলিও বাধ্য হয়েছিল শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবি পূরণ করতে। তেমনই আজ সেই শিবিরের অনুপস্থিতি দেশে দেশে শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করেছে, মালিকদের করে তুলেছে বেপরোয়া। সরকারগুলির পক্ষে অনেক সহজ হয়েছে শ্রম আইন শিথিল করা, শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়া। মালিকপক্ষ কিংবা সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে এই ধারাবাহিক আক্রমণ রোখা যাবে কি না, এ বার শ্রমিকদের তা ভেবে দেখতে হবে৷
সমর মিত্র কলকাতা–১৩
রিপোর্টই নেই
‘কিস্যু হয়নি!’ (১২-৪) শীর্ষক খবরে কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত হামলার ঘটনা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে থাকা ওই পরিসংখ্যান মিলছে না।
কিন্তু ঘটনা হল, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর কেন্দ্রের কাছে ওই বিষয়ে কোনও রিপোর্টই পাঠায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য কোনও সরকারি স্তর থেকেও রাজ্য সরকারের কাছে এই সম্পর্কিত কোনও রিপোর্ট আসেনি।
এই রকম ভিত্তিহীন খবরের উদ্দেশ্য পাঠকদের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করা।
অত্রি ভট্টাচার্য প্রধান সচিব, স্বরাষ্ট্র দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রকাশিত খবরে কেন্দ্রের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তবে সেই রিপোর্ট রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর পাঠিয়েছে, এমন কথা লেখা হয়নি।
ভ্রম সংশোধন
‘আজ টিভি’ বিভাগে ইস্টবেঙ্গল বনাম এফ সি গোয়া ম্যাচের বদলে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরুর ম্যাচ লেখা হয়েছে (১৬-৪)। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়