সম্পাদক সমীপেষু

সুরেশ মৈত্র এবং পরবর্তী কালের শ্রদ্ধেয় গবেষক গোলাম মুরশিদ স্বদেশে এবং বিদেশে ব্যাপ্ত গভীর গবেষণা করেছেন মধুসূদন নিয়ে। তাঁরা বিস্তর শ্রম ও নিষ্ঠায় গবেষণাগ্রন্থ প্রণয়ন করলেও সম্ভবত তাঁরা পুরুলিয়ার পঞ্চকোটে আসেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

কিন্তু কত মনানন্দ তুমি মোরে দিলে...

Advertisement

সুরেশ মৈত্র এবং পরবর্তী কালের শ্রদ্ধেয় গবেষক গোলাম মুরশিদ স্বদেশে এবং বিদেশে ব্যাপ্ত গভীর গবেষণা করেছেন মধুসূদন নিয়ে। তাঁরা বিস্তর শ্রম ও নিষ্ঠায় গবেষণাগ্রন্থ প্রণয়ন করলেও সম্ভবত তাঁরা পুরুলিয়ার পঞ্চকোটে আসেননি। তাঁদের অনুবর্তী তরুণ লেখক শুভাশিস চক্রবর্তী কপোতাক্ষ নদ ও সাগরদাঁড়ির মধুসূদনের বসতবাটি দেখলেও দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তিক বাংলার ঐতিহ্যঋদ্ধ পঞ্চকোটে সম্ভবত আসেননি। শ্রীচক্রবর্তী আনন্দবাজার পত্রিকায় (‘দত্তকুলোদ্ভব’, ১-১০) অনেক তথ্য পরিবেশন করেছেন প্রাগুক্ত দুটি আকরগ্রন্থ থেকে। সেই লেখাটির প্রেক্ষিতে বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়ের একটি পত্র প্রকাশিত হয়েছে। (‘পরেশনাথ না পঞ্চকোট’, সম্পাদক সমীপেষু, ৬-১২) এই পত্র সম্পর্কে দু’একটি বক্তব্য আছে।

দুস্তর উচ্চ আশার কুহকে কবি মধুসূদনের বিদেশ যাত্রা। কিন্তু প্রবল দারিদ্র-হতাশা নিয়ে ব্যারিস্টার মধুসূদনের প্রত্যাবর্তন কলকাতায়। বিদেশি বহু ভাষায় সুঅভিজ্ঞ তীক্ষ্ণধী মধুসূদন ব্যবহারিক বু্দ্ধির অভাবে কলকাতা হাইকোর্টে পসার জমাতে পারেননি। তাই জীবন-সায়াহ্নে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রুক্ষ-বন্ধুর প্রস্তর-আকীর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল পুরুলিয়া শহরে আসেন একটি মোকদ্দমায় বাদীপক্ষের ব্যরিস্টার হিসাবে। তখন আদ্রা পুরুলিয়ায় রেললাইন হয়নি। তাই তিনি বরাকর দিয়ে পুরুলিয়া শহরে এসেছিলেন।

Advertisement

ব্যারিস্টার কবি মধুসূদন সন্দর্শনে পুরুলিয়ার মূলত খ্রিস্টধর্মাবলম্বী জনগণ গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্থানীয় মিশন হাউসে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। মুগ্ধচিত্ত কবি পুরুলিয়া শহরেই রচনা করেন একটি সনেট, যার প্রথম চার পঙক্তি নিম্নরূপ:

পুরুলিয়া মণ্ডলীর প্রতি

পাষাণময় যে-দেশ, সে-দেশে পড়িলে

বীজকুল, শস্য তথা কখন কি ফলে?

কিন্তু কত মনানন্দ তুমি মোরে দিলে,

হে পুরুল্যে!...

সেই বার, পুরুলিয়ার খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মানুষদের অনুরোধে, কবি পুরুলিয়া শহরে রাঁচি রোডের ধারে অবস্থিত গসনার ইভাঞ্জেলিকাল লুথেরান চার্চ-এ বালক কাঙালিচরণ সিংহকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন। দীক্ষান্তে সেই বালকের নাম হয় খ্রিস্টদাস সিংহ। সেই উপলক্ষে কবি রচনা করেন ‘কবির ধর্মপুত্র’ শীর্ষক চতুর্দশপদী কবিতা।

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে উক্ত চার্চের রেকর্ড রুম পরিদর্শন করি। রেকর্ড বুকে দেখি, কবি দীক্ষাদান সূত্রে স্বাক্ষর দিয়েছেন ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি। খ্রিস্টদাস সিংহের রেকর্ড সিরিয়াল নং ৫-১৮৭২। তখন চার্চে জার্মান পাদরি ছিলেন। তাঁর নামযুক্ত স্বাক্ষর H Onach.

উল্লেখ্য, মধুকবির পুরুলিয়া বিষয়ক সনেটটি ‘জ্যোতিরিঙ্গণ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে। উক্ত কবিতাটি রেভারেন্ড সূর্যকুমার ঘোষ পুনঃপ্রকাশ করেন ‘অবকাশরঞ্জন’ পত্রিকায়। তা ছাড়া, কবির ধর্মপুত্র কবিতাটি ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জ্যোতিরিঙ্গণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

মধুসূদন পুরুলিয়া শহরের কোর্টে মামলার কাজ এবং প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কৃত্য সমাধা করে কলকাতায় ফিরে যান। অতঃপর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ব্যারিস্টার কবি মধুসূদন দত্ত পুরুলিয়ায় দ্বিতীয় বার বরাকরের পথে কাশীপুর পঞ্চকোটে আসেন পঞ্চকোট রাজ নীলমণি সিংদেও-এর আমন্ত্রণে আইনি পরামর্শদাতা ও দেওয়ান হিসাবে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস অবধি পঞ্চকোটে থাকার সুবাদে কবি রচনা করেন ‘পঞ্চকোটগিরি’, ‘পঞ্চকোটস্য রাজশ্রী’, ‘পরেশনাথ গিরি’ এবং ‘পঞ্চকোটগিরি বিদায় সঙ্গীত’ কবিতা।

লক্ষণীয়, যে কবি পঞ্চকোটে অবস্থান করে ‘পঞ্চকোটগিরি’ ইত্যাদি কবিতা রচনা করেন, তিনি কী ভাবে পঞ্চকোট পাহাড়কে অজ্ঞতাবশত বা ভুল করে পরেশনাথ গিরি নামে কবিতা লিখবেন?

প্রসঙ্গত, সুরেশ মৈত্র লিখেছেন, বরাকর থেকে পুরুলিয়ার দূরত্ব ৪২ মাইল। এই তথ্য সত্য পুরুলিয়া শহরে আগমন প্রসঙ্গে। কিন্তু মধুসূদন দ্বিতীয় বার পুরুলিয়ার পঞ্চকোটে আগমন করেন। আমরা জানি, বরাকর থেকে কাশীপুর পঞ্চকোটের দূরত্ব প্রায় ২৪ মাইল। কারণ, পঞ্চকোট প্রায় দামোদর নদ তীরবর্তী এবং পুরুলিয়া শহর থেকে যথেষ্ট দূরস্থান। লক্ষণীয়, বরাকর থেকে পুরুলিয়া শহর এবং পঞ্চকোট দূরত্বের বিচারে এক নয়। ক্ষেত্রকর্মজাত অভিজ্ঞতার অভাবে সুরেশ মৈত্র থেকে একালের পত্রলেখক বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় একই ভুল করেছেন।

শান্তি সিংহ। কলকাতা-৫৫

ক্যাশলেস বাস্তব

নোট বাতিলের অনেক আগে থেকেই নেট ব্যাংকিং-এ কাজ করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ্‌স ব্যবহার করছি দৈনন্দিনের নগদ লেনদেন এড়াতে। সরকারি ও বেসরকারি, দুইই। কোনও পরিষেবাই সন্তোষজনক নয়। বেশির ভাগ সময়ই লেনদেনের সময় বিনা কারণে এরর দেখায় এবং লেনদেনও সম্ভব হয় না। সবচেয়ে জঘন্য অবস্থা রেলের অসংরক্ষিত অ্যাপ ইউটিএস-এর। গত ছয় মাসে ৩০ বার চেষ্টা করে এক বার ক্যাশলেস টিকিট কাটতে পেরেছি। ধৈর্য ধরে অনেক অপেক্ষার পর ভেসে উঠেছে— ইট ইজ টেকিং লংগার দ্যান ইউজুয়াল। অত্যন্ত বিরক্তিকর বললে কম বলা হবে। লাইনে নগদেই টিকিট কাটতে হচ্ছে। প্রশ্ন, এই পরিকাঠামো ও পরিষেবাতে নগদহীন লেনদেন মসৃণ হবে?

সুদর্শন নন্দী। রাঙামাটি, মেদিনীপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement