সম্পাদক সমীপেষু

রামচন্দ্র গুহ (‘ক্ষমতার স্বার্থ...’, ১৫-৬) ঠিকই বলেছেন, শিল্পী বা লেখকদের প্রতি অবিচার করলে প্রতিবাদ জানানোর মতো কোনও শিল্পীসংস্থা না থাকাটা দেশের পক্ষে দৈন্যদশা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০০:০৪
Share:

পেন নেই, তা কিন্তু নয়

Advertisement

রামচন্দ্র গুহ (‘ক্ষমতার স্বার্থ...’, ১৫-৬) ঠিকই বলেছেন, শিল্পী বা লেখকদের প্রতি অবিচার করলে প্রতিবাদ জানানোর মতো কোনও শিল্পীসংস্থা না থাকাটা দেশের পক্ষে দৈন্যদশা।

ভারতে লেখক সম্প্রদায় কিছুই করেননি, তা কিন্তু নয়। যখন মহম্মদ আখলাক, নরেন্দ্র দাভোলকর, এম এম কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারেকে হত্যা করা হয়, তখন পিইএন পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিবাদ হয়েছিল। কলকাতার একটি লেখিকা সংগঠন ‘সই’-এর পক্ষ থেকে সভাপতি হিসেবে চিন্তাশীল মানুষদের কাছ থেকে ১০১টি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলাম এবং বিভিন্ন খবরের কাগজ সেটা প্রকাশ করেছিল। সেই প্রতিবাদপত্রের সূত্র ধরে গুজরাতে লেখকদের মধ্যে একটি নতুন প্রতিবাদের পালা শুরু হয়েছিল। সেখানে আমাদের চিঠিটির উদ্ধৃতি দিয়ে গণেশ দেভি, মেহুল শ্রীমালীরা এক গুজরাতি প্রতিবাদী লেখকগোষ্ঠী সৃষ্টি করেন। তাঁরাও খবরের কাগজে এবং রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন। এবং নিহত লেখকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়ে আসেন। ফল হয়নি কিছুই, তবুও প্রতিবাদ কিন্তু হয়েছিল।

Advertisement

‘ভারতে সাহিত্যিক-শিল্পীর স্বার্থ ও স্বাধীনতা’ রক্ষার প্রসঙ্গে আলোচনায় রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, ‘লক্ষণীয়, লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনাল-এর ভারতে কোনও শাখাই নেই।’ কথাটি ঠিক নয়। ১৯২১-এ ইংল্যান্ডে গঠিত আন্তর্জাতিক লেখকগোষ্ঠী পেন ইন্টারন্যাশনাল (পিইএন)-এর একটি ভারতীয় শাখা কিন্তু মুম্বই (তখন বম্বে) শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। থিয়োসফিক্যাল সোসাইটির প্রধানা সোফিয়া ওয়াডিয়ার প্রচেষ্টায়। নবগঠিত ভারতীয় পেন-এর সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই শাখাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সরোজিনী নাইডু, সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণন, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ।

এর পরের বছরেই ১৯৩৪-এ কলকাতায় পেন-এর বঙ্গীয় শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শাখাটিরও প্রথম সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বহু বছর ধরে পেন-এর সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন মণীন্দ্রলাল বসু, নরেন্দ্র দেব, রাধারানি দেবী, অন্নদাশংকর রায়, লীলা রায়, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কালিদাস নাগ, লীলা মজুমদার, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। বিদেশ থেকে এই পেন-এ অতিথি হয়ে এসেছেন পঞ্চাশের দশকে চিনের কবি লু কান জু, ষাটের দশকে এসেছেন স্টিভেন স্পেন্ডার এবং আরও অনেকে। মাঝে কিছু কাল দি পেন, ওয়েস্ট বেঙ্গল নামে এই বঙ্গীয় শাখাটি একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল বটে কিন্তু কয়েক বছর হল আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কলকাতায় প্রতি মাসে সদস্যদের সাহিত্যসভা ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝে মাঝে পিইএন-এর সাহিত্যসভা ডাকা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পিইএন নিয়মিত একটি বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে আর কয়েকটি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। একটি পত্রিকাও প্রকাশ করে। পশ্চিমবঙ্গের এই সাহিত্য প্রতিষ্ঠানটি সুদীর্ঘ তিরাশি বছর নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির সেবক।

নবনীতা দেবসেন।
সভাপতি, পিইএন, ওয়েস্ট বেঙ্গল

এখনও অনীহা কেন?

রাজ্যের চর্মশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যবসায়ী এই রাজ্যে শিল্প স্থাপনে অনীহা প্রকাশ করে তাঁদের প্রস্তাবিত প্রকল্প, যার বিনিয়োগমূল্য প্রায় ২০০০ কোটি টাকা এবং যার সঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত, অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর-এ সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। শুনছি অন্য রাজ্যে তাঁদের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল বা এসইজেড-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত।

শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ছিলাম প্রশাসক হিসেবে। আশির দশকের মাঝামাঝি অফিসাররা, প্রায় প্রতি দিন জঙ্গি ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের শিকার হয়েছি, প্রাণ হাতে করে কারখানার ভিতর দিন কাটিয়েছি, অত্যাচারিত হয়েছি, মার খেয়েছি, ঘেরাও হয়ে থেকেছি। এই রকম একটা দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে যাঁরা এই রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য চলে গিয়েছেন, তাঁরা প্রাণের তাগিদে গিয়েছেন। কোনও শিল্প-শিকারির প্রলোভনে পড়ে তাঁরা কিন্তু রাজ্য ছেড়ে যাননি।

গোপাল মুখোপাধ্যায়।
কলকাতা- ৯৭

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement