‘আত্মরক্ষায় ঢাল পদ্মবনে’ (১৮-৫) নিবন্ধটি বড়ই একপেশে। পালাবদলের পর শুধুমাত্র বামপন্থীরা পদ্মশিবিরে ভিড়েছেন বললে সত্যের অপলাপ হবে। আত্মরক্ষার তাগিদে অনেকেই শাসক দলে নাম লিখিয়েছেন। এর সঙ্গে পদের প্রলোভন তো ছিলই। সবং এবং কাটোয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়কদের কথা লেখিকা কি বিস্মৃত হয়ে গেলেন? অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও তাঁদের এক জনকে নিয়ে কী ভাবে বেড়াল-ইঁদুর খেলা চলেছিল! সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্কেত না পাওয়ায় পুলিশ রীতিমতো অন্ধ হয়ে ছিল। পালাবদলের ঠিক পরেই যাঁরাই শাসক দলে ভিড়েছেন, তাঁদের অনেককেই রাতারাতি দলের সম্পাদকমণ্ডলীতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। স্বধর্মে স্থিত থাকার অভ্যাস শুধু কি বামপন্থীরাই হারিয়েছেন? স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকারের কথা বলে, বাকিরা কি দাগি এবং দুর্নীতিগ্ৰস্ত অন্য দলের নেতাদের হাত ধরতে যাননি? বিজেপির মোকাবিলা করতে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা কোনও গঠনমূলক কর্মসূচি নয়, এক দিকে রামনবমী, হনুমানজয়ন্তী হাইজ্যাক করেছেন, নগরকীর্তনে বেরোচ্ছেন এবং অন্য দিকে সরকার ইমাম ভাতা, দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলোকে অনুদান দিচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যা অনভিপ্রেত। বামপন্থীদের প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। কিন্তু যাঁদের আনা হল, তাঁদের আচার-আচরণ এবং কাজেকর্মে সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে, কান পাতলেই মালুম হয়।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
রাম ও বাম
এই বঙ্গে বিজেপি যদি এগজ়িট পোলের হিসেব অনুযায়ী আসন পায়, তা হলে বুঝতে হবে, রাম ও বামের একটা সংমিশ্রণ হয়েছে এই ভোটে। সিপিএম বামপন্থাকে বিসর্জন দিয়ে, শুধুই ভোট পলিটিক্সকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভাবছে, তৃণমূলকে হারিয়ে বিজেপি এলে, অপশাসনের ফলে যখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জনসাধারণের বিরাগভাজন হবে, তখন সেই পথ দিয়ে বামফ্রন্ট আবার মসনদ দখল করতে পারবে। এটাও ভাবা দরকার, তত দিনে ‘হিন্দু কমিউনিস্ট’রা পূর্ণমাত্রায় বিজেপির কর্মী হয়ে উঠবে। মনে রাখা দরকার, ভোট-রাজনীতি মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে না এবং গণ-আন্দোলনই মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের একমাত্র পথ।
গৌতম দাস
মালদহ
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হতাশ হবেন না
‘সব সমীক্ষায় আবার মোদী’ (২০-৫) শিরোনাম পড়ে মনে হচ্ছিল, কালো হরফগুলো যেন হতাশায় ম্রিয়মাণ। মাসের পর মাস মোদী-বিরোধী হাওয়া তুলতে গিয়ে বাস্তবকে ব্রাত্য রেখে যে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন থেকে মশলাদার প্রবন্ধ, খবর ছাপা হয়েছিল, তা বিফলে গেল? তবে কি মানুষ এ সব বিশ্বাস করেননি? না, এত হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন, এ সব সমীক্ষার গালগল্প তিনি বিশ্বাস করেন না। দাঁড়ান, এখনও তো সাম্প্রদায়িক মোদীর ‘ইভিএম’ মেশিনের কারচুপি ধরা পড়েনি সমীক্ষায়!
মিহির কানুনগো
কলকাতা-৮১
দশচক্রে
দশচক্রে বিদ্যাসাগর নির্বাচনের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি দল অধিক মনোযোগী হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ১৭ বার নির্বাচনী প্রচারে এসেছেন। টাকা ও মিডিয়া ব্যবহারে বিজেপি অন্য দলকে টেক্কা দিয়েছে এবং সর্বোপরি নিজেদের শাসনকালের রিপোর্ট কার্ডের পরিবর্তে, কখনও উগ্র জাতীয়তাবাদ, কখনও সেনা-আবেগ, কখনও মেরুকরণ, কখনও পরিবারতন্ত্রকে আক্রমণ করেছে। অমিত শাহের রোডশো-কেন্দ্রিক ধুন্ধুমার সেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী পরিবেশিত হয়েছে। টিএমসিপির বিক্ষোভ প্রদর্শন সেখানে ইন্ধন জুগিয়েছে। ওখানে বিদ্যাসাগরের পরিবর্তে মাইকেল বা বাল্মিকীর মূর্তি থাকলেও, তা সে দিন ভূলুণ্ঠিত হত। মূর্তির এই নিগ্রহ কোনও আদর্শগত বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল বলে মনে হয় না। যে ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর হয়, শিক্ষকদের ঠেঙানো হয়, সে রকমই রাজনৈতিক পতাকাতলে থাকা ঠেঙাড়ে বাহিনীর আরও এক কীর্তি।
নকশালদের দৃষ্টিকোণ ছিল— সমাজসংস্কার প্রশ্নে বিদ্যাসাগর শাসক ইংরেজদের ওপর নির্ভর করতেন। সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের সঙ্গে তিনি বিরোধে অবতীর্ণ হননি। তিনি শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যাপক জনশিক্ষা প্রসারে ব্রতী হননি। মূলত এলিটিস্ট এডুকেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তাই তাঁকে নকশালরা বলেছিল “প্রতিক্রিয়াশীল এবং সাম্রাজ্যবাদ ও মুৎসুদ্দি পুঁজির দালাল।’’ এই কারণেই তাঁর মূর্তি আক্রান্ত হয়েছিল। মূর্তি ভাঙার উল্লাসে মত্ত বিপ্লবীরা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথিতযশা ইংরেজির অধ্যাপক পি সি ঘোষ-এর আবক্ষ মূর্তিকে, মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষের মূর্তি ভেবে চুরমার করেছিল।
রাজনীতির এই সব বহুমাত্রিক সম্ভবনা দেখেই বোধ হয় খুশবন্ত সিংহ লিখেছিলেন, "It’s a circus, politics is at best a source of shock and amusement."
সরিৎশেখর দাস
নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
কোটেশন অবধি
বাঙালির পড়াশোনা, জ্ঞানচর্চার মান তলানিতে ঠেকেছে। কিছুই করার নেই, তাই বাঙালি রাজনীতি করে। আর অত্যন্ত নিচু মানের, কদর্য রাজনীতি করে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রেক্ষিতে এ রাজ্যের সংবাদপত্রগুলির খবর পরিবেশন দেখে মনে হল, বাঙালির সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রতিভূ নির্ধারিত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে যে হিংসা-উন্মত্ত বাংলাকে ভারতের মানুষ দেখেছেন, তার কথা ছেড়েই দিলাম। কারণ বিদ্বজ্জনেরা বলবেন, ও সব সিপিএমও করেছে। তার চেয়ে বরং বলা যাক, শিক্ষাঙ্গনের কথা। কলেজে কলেজে ভর্তির সময় তোলাবাজির কথা। তৃণমূল ছাত্র সংসদ পরিচালিত বিভিন্ন কলেজে সোশ্যালের নামে চটুল নাচগানের কথা। শিক্ষক পেটানোর কথা। ২৭ দিন ধরে অনশনরত এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কথা। ডিএ-র ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘ঘেউ ঘেউ করবেন না’ বলার কথা। পুলিশ ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রনেতার মৃত্যুর কথা, যা মাননীয়ার ভাষায় ‘স্মল ইনসিডেন্ট’। দাড়িভিটে পুলিশের গুলিতে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা। আর কত বলব? তবে বলতেই হয়, এ বার নির্বাচনের প্রচারসভাগুলিতে যে কদর্য ভাষায় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণ করেছেন, তার কথা।
উপরের নিদর্শনগুলোর কোনটা, বিদ্যাসাগর তো দূরে থাক, বাংলার কোনও মনীষীর জীবন-কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ? বাঙালি এখন ট্র্যাফিক সিগনালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনে, মাঝে মাঝেই রবি ঠাকুর, নজরুলের কোটেশন ঝাড়ে। কিন্তু তাঁদের আত্মস্থ করা এবং তাঁদের দেখানো পথে হাঁটা যে বড় কঠিন। তাই দৌড় ওই কোটেশন পর্যন্তই। না হলে যে ক্ষমতায় থাকা যায় না।
সুশোভন সরকার
কলকাতা-২৫
কান্নার ভান
আজ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙল বলে পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছি! কিন্তু কলকাতার বুকে, বাংলার বুকে যে হারে বাংলামাধ্যম বিদ্যালয়গুলির অবলুপ্তি ঘটে চলেছে, যার মধ্যে এমনকি তাঁর হাতে গড়া বিদ্যালয়ও আছে, তা নিয়ে আমরা ভাবি না, কারণ বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অনুরাগ কমে গিয়েছে। তবে আর তাঁর মূর্তিতে মালা পরিয়ে বা মূর্তি গড়ে কী হবে?
অশেষ দাস
সোদপুর