Facebook

আত্মঘাতের পথ

ফেসবুকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০২:২৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

ফেসবুকের বিরুদ্ধে এক মার্কিন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে যে অভিযোগটি উঠিয়াছে, তাহা প্রকৃত প্রস্তাবে একটি অভিযোগের গুচ্ছ। তাহার মধ্যে একটি অভিযোগ— প্রত্যক্ষ অভিযোগ— এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে: তাহারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা করিতে স্বঘোষিত নীতি লঙ্ঘন করিতে নির্দ্বিধ। অন্য অপ্রত্যক্ষ অভিযোগগুলি ভারতের বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলি এই রূপ: এক, বিজেপির উচ্চ স্তরের নেতারাও সোশ্যাল মিডিয়াকে ভয়াবহ বিদ্বেষবিষ ছড়াইবার কাজে ব্যবহার করিয়া থাকেন; দুই, ব্যক্তিবিশেষের বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে সমগ্র প্রশাসন বা সরকার প্রতিশোধ লইবে, এক বিপুলায়তন বহুজাতিকের মনেও এমন আশঙ্কা জাগিবার মতো পরিস্থিতি ভারতে তৈয়ার হইয়াছে; এবং তিন, সরকার পক্ষের করা গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ানক আচরণ দেখিয়াও চুপ করিয়া থাকিলে লাভের সম্ভাবনা প্রবল। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নিকট সরকার বা সংসদ যে জবাবদিহি দাবি করিয়াছে, তাহার বহু গুণ জবাব দেওয়ার দায় বর্তমান শাসকদের রহিয়াছে। কিন্তু, সংসদের তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির প্রধান শশী তারুর ফেসবুকের কর্তাদের তলব করায় বিজেপির একাধিক সাংসদ যে ভঙ্গিতে আপত্তি জানাইয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ হয়, তাঁহারা এই অভিযোগের গুরুত্বই অনুধাবন করিতে পারেন নাই। অথবা, সরকারের তরফে এ হেন অন্যায় তাঁহাদের নিকট এমনই স্বাভাবিক যে, ইহাতে অভিযোগ উঠিতে পারে, তাঁহারা ভাবিতে পারেন না।

Advertisement

ফেসবুকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু, অতীতেও বহু বার এই মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনৈতিক আপসের অভিযোগ উঠিয়াছে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফেসবুকের নিকট ভারতের গুরুত্ব বিপুল। শুধু তাহাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বৃহত্তম বাজার বলিয়াই নহে, তাহাদের আসন্ন একাধিক ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্র বলিয়াও। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা করিবার যাবতীয় অধিকার তাঁহাদের থাকিলেও অনৈতিক পথে হাঁটিবার অধিকার নাই। যে বাক্স্বাধীনতার ভিত্তিতে তাঁহাদের সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বব্যাপী ব্যবসাটি দাঁড়াইয়া আছে, তাহা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য শর্ত। শক্তিশালী রাজনৈতিক পক্ষকে বিনা বাধায় বিদ্বেষমূলক প্রচার করিতে দিলে সেই গণতান্ত্রিক পরিসরটিই নষ্ট হইয়া যায়। রাজনৈতিক ক্ষমতা যে তাহাই করিতে চাহিবে, রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্যে তাহা স্পষ্ট। মূল বক্তব্য, ভোটের রাজনীতিতে যে দলের যত জোর, বাক্-পরিসরেও সেই দলের তত দখল থাকা স্বাভাবিক। কোনও প্রকারে বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খণ্ডিত করিবার এই বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলায় ফেসবুক যদি স্বেচ্ছা-দোসর হইতে চাহে, তবে দীর্ঘমেয়াদে তাহা আত্মঘাতীও হইতে পারে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ার সহিত প্রথাগত সমাজমাধ্যমের ফারাকটি প্রকট হইয়া উঠে। ফেসবুক একটি প্ল্যাটফর্ম মাত্র— সেখানে কে কী লিখিতেছেন, তাহার সম্পাদকীয় দায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় না। প্রথাগত সমাজমাধ্যমকে প্রকাশিত প্রতিটি কথার দায়িত্ব লইতে হয়। প্রথাগত সংবাদমাধ্যম যেখানে আইনের নিকট দায়বদ্ধ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের দায় শুধু স্বঘোষিত নীতির নিকট। এক্ষণে, সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়িত্ব লইতে বাধ্য করিবার দুইটি পথ থাকে— এক, আইন করিয়া তাহাদেরও প্রকাশিত সব কথার জন্য দায়বদ্ধ করা যায়; দুই, তাহারা স্বপ্রবৃত্ত হইয়া নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। শুধু নাগরিকের বাক্স্বাধীনতার স্বার্থেই নহে, ব্যবসায়িক স্বার্থেও দ্বিতীয় পথটি অধিক গ্রহণযোগ্য। শাসক দলের পক্ষে থাকিলে আইনের খপ্পরে পড়িতে হইবে না, এই ভরসায় থাকা বিচক্ষণতার পরিচায়ক নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement