প্রতীকী ছবি।
ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামকে সুস্থিত করিবার কাজটি জরুরি। তাহার প্রধান কারণ, ভারতের আমদানির সিংহভাগ এমন ক্ষেত্রে, যাহার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। সেই তালিকার গোড়াতেই যেমন আছে পেট্রোলিয়াম, তেমনই আছে সোনা বা কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ। প্রশ্ন উঠিতে পারে, সোনার আমদানি কমানো সম্ভব নহে কেন? বিস্তারিত উত্তর সম্ভব, কিন্তু বর্তমানে একটি সংক্ষিপ্ত জবাবই যথেষ্ট— নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিলেই সোনার কালোবাজারির প্রবণতা বাড়িবে। অতএব, আমদানি খাতে বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করিয়া চলা ভিন্ন ভারতের উপায় নাই। কাজেই, টাকার দাম সুস্থিত হওয়া দরকার। এক্ষণে একটি কথা বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতিমাফিক চল্লিশ টাকায় ডলার ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে একটি অসম্ভব লক্ষ্য। এমনকি, ৬৫ টাকার স্তরটিও বজায় রাখা যায় কি না, সেই প্রশ্ন থাকিতেছে। অর্থনীতির চেহারা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সহিত তুলনার নিরিখে টাকার দাম কোথায় থাকা বাঞ্ছনীয়, নীতিনির্ধারকরা তাহা স্থির করিবেন। তাহার পর টাকাকে সেই স্তরে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতে হইবে। কিন্তু, তাহা কোন পথে? রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ ছিল, সুদের হার বাড়াইয়া টাকার পতন রোধ করিতে হইবে। ভারতে সুদের হার যদি যথেষ্ট আকর্ষক হয়, বন্ডের ফেরতলাভ যদি বাড়ে, তবে বিদেশি পুঁজি আকৃষ্ট হইবে, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের হারও বাড়িবে। ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটি সেই পথে হাঁটিতে সম্মত হয় নাই। শুক্রবার ব্যাঙ্ক জানাইয়া দিল, সুদের হার আপাতত অপরিবর্তিতই থাকিতেছে।
সিদ্ধান্তটির ভাল-মন্দ বিচার করিবার পূর্বে মাথায় রাখা প্রয়োজন, ব্যাঙ্কের মূল লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা। দুই হইতে ছয় শতাংশের সীমায় খুচরা মূল্যসূচকের বৃদ্ধির হার ধরিয়া রাখাই কর্তব্য। ডলারের দাম লইয়া ব্যাঙ্কের চিন্তা নাই, এমন দাবি করা চলিবে না। গত দুই দফায় ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়াইয়াছে। কিন্তু, তাহারও সীমা আছে। অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যদি আরও জটিল হইয়া উঠে, তখন যাহাতে সুদের হার বাড়ানোর উপায় থাকে, ব্যাঙ্ক সম্ভবত তাহা নিশ্চিত করিতে চাহিয়াছে। আপাতত বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে খানিক হস্তক্ষেপ, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিধি শিথিল করা ইত্যাদি খণ্ডসিদ্ধান্তের পথে হাঁটাই ব্যাঙ্ক ন্যায্য বিবেচনা করিয়াছে। আরও একটি পথ ব্যাঙ্কের সম্মুখে আছে। ভারতে বিদেশি মুদ্রার তহবিলটি যথেষ্ট গভীর। ফলে, প্রয়োজনে ডলার বেচিয়া টাকার দাম ধরিয়া রাখার কাজটি করা যায়। সরকারের নিকটও সম্ভবত সেই পথটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হইবে, কারণ সুদের হার বাড়িলে এক দিকে যেমন শিল্পক্ষেত্রের সমস্যা, অন্য দিকে ভোটের বৎসরে বাজার হইতে টাকা তুলিতে সরকারও সমস্যায় পড়িবে। কিন্তু, সরকার কী চাহিতেছে, তাহা বুঝিয়া সিদ্ধান্ত করিবার দায় ব্যাঙ্কের নাই। বরং, মনে করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, টাকার পড়তি দামের সুবিধা লওয়ার জন্য রফতানির বাজারকে সাহায্য করিবার কাজটি মূলত সরকারের। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলিতেছে, শুধু জিএসটি-র কারণেই ভারতীয় রফতানি ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার পড়তি দামের সুবিধা লইতে পারিতেছে না। সরকার বরং সেই দিকে মন দিক।