Editorial News

আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সময় এসেছে আজ

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এবং আপনি আরও এক বার জিজ্ঞাসা করি নিজেদের, তোকালাপল্লি গ্রামের নাইটি-ফতোয়াকে আঙুল তুলব কার দিকে? কণ্ঠটাকে জোরে ছাড়ার সময় এসেছে এ বার?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪২
Share:

এক নারী কখন নাইটি পরবেন, কেন নাইটি পরবেন, কী ভাবে নাইটি পরবেন, সেটা যে তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরের বিষয়, সেটা বোঝারই ক্ষমতা হয়নি আমাদের অনেকের। প্রতীকী ছবি।

এ বার আমাদের চিরাচরিত অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে। আমরা, যা কিছুই ঘটুক না কেন, অন্যের দিকে দায় ঠেলে দিতেই অভ্যস্ত। অর্থাৎ এ হেন যে এক কাণ্ড ঘটে গেল, দ্যাখো এর দায় কিন্তু আসলে অন্যেরই। বিবেকের দংশনের সম্ভাবনা কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে ঘুমোলেই হল।

Advertisement

অতএব অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার তোকালাপল্লি গ্রামে যে অভব্য আচরণটা ঘটে গেল তার দায়টাও রাষ্ট্র বা প্রশাসন বা সমাজের দিকে আঙুল তুলে দিলে আমাদের ইতিকর্তব্যও সুসম্পন্ন হল বলে মনে করে নিই আমরা। কী ঘটেছে তোকালাপল্লি গ্রামে? অন্ধ্রের ওই গ্রামের মাতব্বরেরা ফতোয়া জারি করেছেন দিনের বেলায় মহিলাদের নাইটি পরা নিয়ে। কারণ, তাঁদের মতে, নাইটি রাতের পোশাক। দিনের বেলায় নাইটি পরে মহিলারা দোকানে-বাজারে যাবেন বা রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবেন, তা হতে পারে না। তা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সে জন্য রীতিমতো নিদান জারি করেছে মাতব্বরদের কমিটি— সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নাইটি পরতে পারবেন না মহিলারা। এই আধুনিক ভারতে, ‘বেটি বচাও বেটি পঢ়াও’-এর বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েও, এই মাতা-আরাধনার আবহে আমরা এখনও কোনও নারীর পরিধেয়কে সূর্যের উদয় ও অস্তের সঙ্গে মিলিয়ে ফতোয়া দিতে পারি, এর চেয়ে লজ্জার আর কী-ই বা হতে পারে? একটু তলিয়ে দেখলে লজ্জাটাকে আরও বেআব্রু ভাবে দেখতে পারব আমরা। এবং দেখব আয়নার সামনে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এ মধ্যযুগীয় অ-সভ্যতার দায় কার?

প্রথমত লজ্জার, এ দেশের অগণিত মানুষ এই ঘটনায় লজ্জার কোনও কারণই খুঁজে পান না। অর্থাৎ বোধই জাগ্রত হয়নি ভারতাত্মার একটা বড় অংশে। এক নারী কখন নাইটি পরবেন, কেন নাইটি পরবেন, কী ভাবে নাইটি পরবেন, সেটা যে তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরের বিষয়, সেটা বোঝারই ক্ষমতা হয়নি আমাদের অনেকের। যাঁরা বুঝেছেনও তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই দায় চাপাবেন রাষ্ট্র-প্রশাসন-সমাজের উপর। কাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সমাজ? আমি এবং আপনি, আপনি এবং আমি, এ রকমই অসংখ্য আমি-আপনিকে নিয়েই। রাষ্ট্রে প্রতিফলন সেই সমাজেরই, অতএব প্রশাসনেও। আর তখনই আসে নিজের দিকে ফিরে দেখার পালা। আয়নার সামনে দাঁড়ানো।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন


আরও পড়ুন
দিনে নাইটি পরলেই দিতে হবে ২ হাজার টাকা জরিমানা!

এ বার ওই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এবং আপনি আরও এক বার জিজ্ঞাসা করি নিজেদের, তোকালাপল্লি গ্রামের নাইটি-ফতোয়াকে আঙুল তুলব কার দিকে? কণ্ঠটাকে জোরে ছাড়ার সময় এসেছে এ বার? এ রকম অনেক ঘটমান বর্বর কাণ্ডের সাক্ষী থাকছি আমরা। ইতিহাসের প্রশ্নেরও মুখোমুখি হচ্ছি। আমাদের ভূমিকায় আমরা যথাযথ তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement