কর্মফল

সবার জন্য স্বাস্থ্য— এই আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারে ভারত সম্মতি দিয়াছিল চার দশক আগে। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভগ্নদশাকে আক্রমণ করিতে হইলে সে কথাটি স্মরণ করা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share:

—ফাইল চিত্র।

সবার জন্য স্বাস্থ্য— এই আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারে ভারত সম্মতি দিয়াছিল চার দশক আগে। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভগ্নদশাকে আক্রমণ করিতে হইলে সে কথাটি স্মরণ করা হয়। কিন্তু ‘দেশ’ কি কেবলই দেশের সরকার? দেশবাসীর কি কোনও ভূমিকাই নাই? পরিবেশ নির্বিচারে দূষিত করিয়া তীব্র রোগভোগের যে বিপুল আয়োজন চলিতেছে নাগরিক পরিসরে, তাহাকে কেবল ‘সরকারি ব্যর্থতা’ বলিলে মিথ্যাভাষণ হয়। যেমন কর্ম তেমন ফল, এই নিষ্ঠুর সত্যকে উড়াইয়া দিবার উপায় নাই। সম্প্রতি এক গবেষণা তাহা তথ্য দিয়া প্রতিষ্ঠা করিল। হরিয়ানায় কৃষিজীবীরা গ্রামের পর গ্রামে ফসলের গোড়া পুড়াইয়া ফেলেন। দগ্ধকণার মারাত্মক দূষণক্ষমতা সম্পর্কে বারংবার সতর্ক করিয়াছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা জারি হইয়াছে, ফসলের বর্জ্য সরাইবার জন্য অনুদানও ঘোষিত হইয়াছে। চাষিরা নিবৃত্ত হন নাই। উপগ্রহ-লব্ধ ছবি দেখাইতেছে, এক একটি জেলায় দিনে একশোরও বেশি আগুন জ্বলিতেছে। তাহার ফল, সে রাজ্যে জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশেরও অধিক শ্বাসকষ্টে ভুগিতেছেন, হাসপাতালের শরণাপন্ন হইয়াছেন। অপর দিকে অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা তামিলনাড়ু, যেখানে ফসলের গোড়া পুড়াইবার রীতি নাই, সেখানে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক হাজারে এক জন। গবেষকদের সিদ্ধান্ত, যেখানে খেতে অগ্নিসংযোগ অধিক, সেই সব জেলার বাসিন্দাদের শ্বাসনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হইবার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।

Advertisement

এই গবেষণাটি দেখাইল, পঞ্জাব-হরিয়ানায় খেতে অগ্নিসংযোগ কেবল দিল্লিতে দূষণ ও শ্বাসকষ্টের কারণ, তাহা নহে। গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যও দূষণে বিপর্যস্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের মধ্যে এই তথ্যটির প্রচার প্রয়োজন। কারণ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতে সম্প্রতি ফসলের অবশিষ্ট পুড়াইবার বদভ্যাসটি চালু হইয়াছে। বায়ুদূষণের অপর যে দুই প্রধান উৎস, তাহাও নাগরিকের স্বেচ্ছাচার হইতে উদ্ভূত। একটি গাড়ির দূষিত ধোঁয়া, যাহার কারণ পুরাতন প্রযুক্তি, মন্দ জ্বালানি ব্যবহার। অন্যটি আতসবাজি পুড়াইবার নেশা। গবেষকদের হিসাব, কেবল আতসবাজির দূষণের জন্য অসুস্থতা ও তজ্জনিত কর্মদিবস হারাইবার কারণে বার্ষিক ক্ষতির অঙ্ক পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। অপর দিকে, খেতে অগ্নিসংযোগ-জনিত দূষণ হইতে ক্ষতির পরিমাণ দুই লক্ষ কোটি টাকারও অধিক। নাগরিকের মন্দ অভ্যাস, ভ্রান্ত রীতির জন্য এই বিপুল ক্ষতি বহন করিতেছে ভারত। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দের বৃদ্ধি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু অবাধে দূষণ করিয়া কিছু লোক রোগের প্রকোপ বাড়াইবে, ইহা মানিয়া লওয়া যায় না।

চিনের শহরগুলিতেও দূষণ মাত্রা ছাড়াইয়াছিল। কিন্তু ২০১৭ হইতে ২০১৮, এই এক বৎসরে সেই দেশে বাতাসে ক্ষতিকর কণার ঘনত্ব কমিয়াছে। একটি কারণ, দূষণসৃষ্টিকে ফৌজদারি অপরাধ সাব্যস্ত করিয়াছে চিন। ভারতে আজও দূষণ রোধের আইনগুলি উপেক্ষা করিতেই লোকে অভ্যস্ত। তাহারও ফল ফলিয়াছে। ‘গ্রিনপিস’-এর একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত কুড়িটি শহরের পনেরোটিই ভারতে। সরকার কঠোর হউক, প্রস্তাব গবেষকদের। কিন্তু চিনে যাহা সম্ভব, গণতন্ত্রে তাহা কঠিন। আর সরকারের অভিভাবকত্বের উপর নির্ভর করিয়াই বা থাকিতে হইবে কেন? সত্তর বৎসর কাটিয়াছে, এই বার সাবালক হউক ভারতের নাগরিক। দূষণের প্রতিরোধে তৎপর হউক জনসমাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement