রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আদালতে বলিয়াছে, তাহারা কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও নষ্ট করিবার রূপরেখা স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে জানাইয়াছে। কোভিড-বর্জ্য নষ্ট করিবার কেন্দ্রগুলির উপর নজর রাখিতেছে এবং তাহাদের কাজের হিসাব রাখিতেছে পর্ষদ। প্রশ্ন উঠিয়াছে, কোভিড-বর্জ্যের কতটুকু অংশের বিধিসম্মত বিনষ্টি হইতেছে? পর্ষদের হলফনামায় প্রকাশ, সারা রাজ্যে সংগৃহীত কোভিড-বর্জ্যের পরিমাণ চার লক্ষ কিলোগ্রামও নহে। পরিবেশকর্মীদের দাবি, এতগুলি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং কোয়রান্টিন কেন্দ্র হইতে যে পরিমাণ সংক্রমিত আবর্জনা প্রত্যাশিত, তাহার তুলনায় ইহা সামান্য। আশঙ্কা, কোভিড-বর্জ্যের একটি বড় অংশ সাধারণ বর্জ্যের সহিত মিশিতেছে, ও রোগ ছড়াইতেছে। কোভিড-বর্জ্য আলাদা রূপে চিহ্নিত না হইলে ঝুঁকি বাড়িয়া যায় সাফাইকর্মীদেরও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ, সর্ব স্তরের সাফাইকর্মীদের মাস্ক, গ্লাভস, বুট, এবং অপর সকল প্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া দরকার। বস্তুত বহু প্রকার প্রাণঘাতী রোগই ছড়াইতে পারে বর্জ্য হইতে। অতিমারির কালে সকল সাফাইকর্মীর যথোচিত সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রয়োজন।
অপর প্রশ্নটি বিধিসম্মত বিনষ্টির সামর্থ্য লইয়া। সারা রাজ্যে ছয়টি ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি’ কাজ করিতেছে, জানাইয়াছে পর্ষদ। পশ্চিমবঙ্গে জেলার সংখ্যা তেইশ, কেবল মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা দশের অধিক। সেখানে এই সংখ্যা কি যথেষ্ট? যে সকল জেলায় একটিও বিধিসম্মত বিনষ্টির কেন্দ্র নাই, সেখানে কী প্রকারে তাহা নষ্ট করা হইবে? সম্ভবত সামর্থ্যের স্বল্পতার জন্যই এ বিষয়ে সতর্কতার প্রচারও যথেষ্ট হয় নাই। তাহার ফলে কোভিড-বর্জ্যের পৃথকীকরণের ন্যায় অত্যাবশ্যক বিষয় লইয়া কাহারও হেলদোল নাই, অথচ মৃতদেহ বহিবার প্রসঙ্গে সকলে আতঙ্কিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ কিন্তু বলিতেছে, কোভিড-আক্রান্ত, অথবা সম্ভাব্য কোভিড-আক্রান্তদের দেহ বহনকারীরা পিপিই, মাস্ক, চশমা প্রভৃতি সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিলে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা হইবে। আজ পিপিই দুর্লভ নহে, মৃতদেহ বহিবার এবং সৎকারের বিধিগুলিও পুরসভার অধীনস্থ সৎকার পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিবিধ কর্তৃপক্ষের অজানা থাকিবার কথা নহে। তবু আতঙ্ক তৈরি করিয়া, একঘরে করিয়া পরিবারগুলিকে বিপন্ন করা হইতেছে। অথচ যেখানে দুশ্চিন্তার প্রকৃত কারণ রহিয়াছে, যথা হোম কোয়রান্টিনে আবদ্ধ রোগীর আত্মীয়দের বর্জ্য হইতে সংক্রমণ, সাফাইকর্মীদের সংক্রমণ, আবর্জনার স্তূপ হইতে সর্বসাধারণে সংক্রমণ— সেগুলির প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে উদ্যোগ উপেক্ষিত।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধের চেষ্টা বার বার মনে করাইতেছে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাকে চিরকালই তাচ্ছিল্য করা হইয়াছে। বিলাসবহুল আবাসনেও মন্দ নিকাশি ব্যবস্থার জন্য রোগ ছড়াইতেছে, সমৃদ্ধ শহরগুলিতেও আবর্জনা নিষ্কাশনের যথাযথ পদ্ধতির অভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িতেছে। স্বাস্থ্য যে কেবল হাসপাতালের শয্যা বাড়াইবার এবং অধিক চিকিৎসক নিয়োগ করিবার বিষয় নহে, তাহা সুষ্ঠু নিকাশি ও বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থারও বিষয়, তাহা স্পষ্ট হইতেছে। এই শিক্ষা গ্রহণ করিলে অনেক রোগ হইতে বাঁচিতে পারে সমাজ।