Amit Shah

বাধা

অমিত শাহদের বক্তব্য, এই দলবল ভারতকে খণ্ডবিখণ্ড করিতে চাহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share:

এক আরটিআই-এর জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানাইয়াছে, ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ সম্বন্ধে কোনও তথ্য মন্ত্রকের নিকট নাই। অথচ, মন্ত্রকের— এবং, দুর্জনের মতে, গোটা কেন্দ্রীয় সরকারের— হর্তাকর্তাবিধাতা অমিত শাহের মুখে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ বই কথা নাই। তিনি যাহাই করেন, অথবা তাঁহার অনুমোদনে যাহাই ঘটে, সবই এই ‘গ্যাং’-কে শায়েস্তা করিবার মহৎ উদ্দেশ্যে। সরকার যেহেতু কিছুই জানে না, এবং জানাইতেও অক্ষম, ফলে মন্ত্রিমহাশয়ের কথার সূত্র গাঁথিয়াই এই দলটিকে শনাক্ত করিতে হইবে। ‘টুকড়ে টুকড়ে’ নামকরণের কৃতিত্ব অবশ্য অমিত শাহের নহে— এক সংবাদজীবীর। শব্দবন্ধটির অর্থের সম্প্রসারণ ঘটিয়াছে। আদিতে এই নামটি শুধুমাত্র জেএনইউ-এর উদারবাদী ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হইত। এখন, দেশের যে কোনও প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও, উদারবাদী কণ্ঠস্বর শোনা গেলেই তাহাকে ‘টুকড়ে টুকড়ে’ বিশেষণে অভিহিত করা হয়। কানহাইয়া কুমার হইতে রামচন্দ্র গুহ, অমর্ত্য সেন— প্রত্যেকেরই ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সদস্যপদ প্রাপ্তির সৌভাগ্য হইয়াছে।

Advertisement

অমিত শাহদের বক্তব্য, এই দলবল ভারতকে খণ্ডবিখণ্ড করিতে চাহে। যাঁহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতকে টুকরা করিবার কথা তাঁহাদের মুখে কখনও শোনা যায় নাই। তাঁহারা বিভিন্ন অধিকারের দাবি করিয়াছেন— কখনও মনুবাদ হইতে মুক্তির অধিকার, কখনও সকলের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানের অধিকার, কখনও মুসলমানদের সমনাগরিকত্বের অধিকার, কখনও কাশ্মীরে রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নহীন জীবনের অধিকার। এই দাবিগুলি নাগপুরের পাঠশালার ছাত্রদের নিকট দেশদ্রোহই ঠেকিবে, কারণ তাঁহারা দেশ বলিতে বোঝেন হিন্দিভাষী উচ্চবর্ণের হিন্দু পুরুষদের চারণক্ষেত্র। সেই দেশ একমাত্রিক, গৈরিক বর্ণ। যে দাবি সেই একশৈলিক ধারণাকে প্রশ্ন করে, ‘অপর’-এর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে, সেই দাবিই ‘নাগপুরের দেশ’-কে খণ্ড করিতে চাহে। সমস্যা হইল, অমিত শাহরা যখন কথাটি বলেন, তখন তাঁহারা বলিয়া দেন না যে বহুবিচিত্র ভারত তাঁহাদের দেশই নহে— সেই গ্রহণশীল, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ পরিসর লইয়া তাঁহাদের বিন্দুমাত্র শিরঃপীড়া নাই— কানহাইয়া কুমাররা সাভারকর বর্ণিত ‘পিতৃভূমি’-কে বারংবার প্রশ্নের মুখে ফেলন বলিয়াই তাঁহাদের গোঁসা। বলিলে, দেশের সিংহভাগ মানুষ জানিতেন, ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ আসলে তাঁহাদের জন্য মনুবাদীদের খপ্পর হইতে ভারতকে উদ্ধার করিয়া আনিতে চেষ্টা করিতেছে। কে প্রকৃত দেশপ্রেমী, তাহাতে সন্দেহ থাকিত না।

গৈরিকমহলে ইদানীং ‘অধিকার’ লইয়া ভাবনাচিন্তা চলিতেছে বলিয়া আঁচ করা যায়। অধিকারের দাবির বিপ্রতীপে তাঁহারা বসাইয়াছেন রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যের ধারণাকে। সংসদেই হউক বা পরীক্ষার্থী সমাবেশে, সুযোগ পাইলেই তাঁহারা জানাইতেছেন, (রাষ্ট্রের প্রতি) কর্তব্যপালনই সর্বাপেক্ষা মহৎ অধিকার। এই অবস্থানটির মধ্যে কোনও দার্শনিক ভাবনা নাই, কেবল আমূল রাজনৈতিক বিবেচনা আছে। যে রাষ্ট্রের ধারণাকে তাঁহারা প্রতিষ্ঠা করিতে চাহেন, সেই রাষ্ট্র সাভারকরের, গোলওয়ালকরের— সেই রাষ্ট্রে অ-হিন্দুরা যেমন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, নারীরাও তেমনই। সেখানে নিম্নবর্ণের স্থান উচ্চবর্ণের পদতলে। রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যপালনে নাগরিককে বাধ্য করিবার অর্থ, এই আনখশির হিন্দুত্ববাদকে প্রশ্নাতীত স্বীকৃতি দেওয়া। যাঁহারা প্রশ্ন করিবেন, তাঁহাদের যদি কর্তব্যের শৃঙ্খলে বাঁধিয়া ফেলা যায়, এবং সেই কর্তব্যকেই যদি একমাত্র বৈধ আচরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে সব প্রশ্নই অবৈধ হইবে। হিন্দুরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতির পথ রুধিয়া আছে অধিকারবাদীরা, অর্থাৎ কাল্পনিক ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’। অমিত শাহরা সহ্য করিবেন কী ভাবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement