RJD

প্রচারপর্বের বার্তা

বিহারের মণ্ডল রাজনীতির পরিসরেও তিনি শুধু কুর্মি-মহাদলিত জাতিপরিচয়ভিত্তিক রাজনীতিতে গণ্ডিবদ্ধ থাকেন নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৬
Share:

ছবি পিটিআই।

নীতীশ কুমার বিহারে আরও এক বার মুখ্যমন্ত্রী হইবেন কি না, এনডিএ জোট জয়ী হইবে কি না: এই সব উত্তরের জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু, নির্বাচনের প্রচারপর্ব বলিয়া দিতেছে, এক দিক দিয়া তিনি পরাজিত হইয়াছেন— জিতিয়াছেন তাঁহার এনডিএ-সঙ্গী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সহিত যৌথ জনসভায় দাঁড়াইয়া নীতীশ কুমার নিজের উন্নয়ন নীতির কথা বলেন নাই; বরং দাবি করিয়াছেন, এনডিএ ক্ষমতায় ফিরিলে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নীতির মাধ্যমে বিহারের উন্নয়ন করিবেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিহারে যে মোদী-ঢেউ উঠিয়াছিল, নীতীশ কুমার তাহাকেই বিধানসভায় কাজে লাগাইতে চাহেন, ইহা অতিসরল ব্যাখ্যা। ২০১০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, এই এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবেই নীতীশ কুমার জানাইয়াছিলেন যে, বিহারে নরেন্দ্র মোদী প্রচারে আসুন, ইহা তাঁহার কাম্য নহে। ২০১৩ সালে এনডিএ ত্যাগ করিয়াছিলেন তিনি, ২০১৫ সালের নির্বাচনে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’ করিয়াছিলেন। সবই নাকি ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গায় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার তাঁহার অসন্তোষের প্রকাশ। ২০০২ সালের ঘটনাক্রম পাল্টাইয়া যায় নাই; নিজের ভূমিকা লইয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুঃখপ্রকাশ করিয়াছেন, তেমন দাবিও করা মুশকিল। তবুও নীতীশ কুমারকে চতুর্থ দফা মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রত্যাশায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিকট আত্মসমর্পণ করিতে হইল। ঠিকই, রাজনীতিতে কেহ চিরকালীন শত্রু নহেন— সম্ভাব্যতার শিল্পে অনেক কিছুই ঘটিতে পারে। সে কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু, মোদীর নিকট নীতীশের এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের একটি গভীরতর দ্যোতনা আছে।

Advertisement

দেশ জুড়িয়া যখন নরেন্দ্র মোদীর বিজয়রথ ছুটিতেছে, তখনও নীতীশ কুমার তাঁহাকে অগ্রাহ্য করিয়া নিজের রাস্তায় চলিতে পারিয়াছিলেন একটি কারণেই— তিনি নিজের রাজনীতিকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দিতে পারিয়াছিলেন। উন্নয়নের পরিচয়। বিহারের মণ্ডল রাজনীতির পরিসরেও তিনি শুধু কুর্মি-মহাদলিত জাতিপরিচয়ভিত্তিক রাজনীতিতে গণ্ডিবদ্ধ থাকেন নাই। এক দশক পূর্বে বিহারে কার্যত একটি সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়াছিল তাঁহার উন্নয়ননীতির তিনটি সূত্র ধরিয়া— এক, সড়ক ব্যবস্থর উন্নতি, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলকেও সড়ক সংযোগের মাধ্যমে বাজারের সহিত জুড়িয়া লওয়া; দুই, সাইকেল প্রদান, যাহার ফলে গরিব মানুষের চলমানতা বৃদ্ধি পাইয়াছিল বহু গুণ; এবং তিন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি। নীতীশ জানিতেন, এই উন্নয়ন কর্মসূচিই ভোট আনিয়া দিবে, মোদীর প্রয়োজন হইবে না।

এই দফায় তাঁহার আত্মসমর্পণের মূল কারণ কি ইহাই নহে যে, বিহারে উন্নয়ন পথ হারাইয়াছে? সাধারণ মানুষের নিকট বলিবার মতো কিছুই তাঁহারা করিয়া উঠিতে পারেন নাই? প্রায় সব প্রাক‌্‌নির্বাচনী সমীক্ষাই বলিতেছে, বিহারে এনডিএ ফের জয়ী হইবে। কিন্তু, সেই সাফল্য যদি আসেও, তাহা নীতীশ কুমারের সাফল্য নহে। বরং, তাহা একটি প্রতিস্পর্ধী রাজনীতির মৃত্যুসংবাদ। যে সর্বজনীন উন্নয়নভিত্তিক রাজনীতির মডেলটি নীতীশ কুমার খাড়া করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন, এই বারের বিধানসভা নির্বাচনে তাহার চিহ্ন মুছিয়া যাইল। বিহারের নির্বাচনে বিজেপি তাহার চেনা ছকে প্রচার করিতেছে— সেই পাকিস্তান, সেই চিন, সেই প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতা। এবং, অতি অবশ্যই, সেই নরেন্দ্র মোদী-কেন্দ্রিকতা। রাজ্যের ভূগোল ও বাস্তবতা আজ অকিঞ্চিৎকর, রাজ্যগুলির পরিসর কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিতে সঙ্কীর্ণ। ইতিমধ্যে বিহারে নীতীশ কুমারের প্রতিস্পর্ধী মডেলটির পরাজয় এবং প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রিক নির্বাচনী প্রচার এক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির পক্ষেও দুঃসংবাদ কি না, ইহাই প্রশ্ন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement