দিল্লি ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস সাংসদদের মধ্যে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শের-ও-শায়েরি’র ভক্ত। রাজ্যসভায় দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিল নিয়ে আলোচনায় তিনি কবি বশীর বদ্রের কবিতা আওড়াচ্ছেন। বিজেপি সাংসদদের বলেছেন, বশীরের কথা ভুলবেন না। তিনি বলেছিলেন, “শোহরত কি বুলন্দি ভি পল ভর কা তামাশা হ্যায়, জিস ডাল পে বৈঠে হো, ও টুট ভি সকতি হ্যায়!” অর্থ, খ্যাতির উচ্চতা কয়েক মুহূর্তের তামাশা। যে ডালে বসে রয়েছেন, তা যে কোনও সময় ভাঙতে পারে। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অবশ্য জানতেন না, তাঁকে বঙ্গসন্তান অধীররঞ্জন চৌধুরী টেক্কা দেবেন। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মনু সিঙ্ঘভি ও অধীর চৌধুরী পাশাপাশি বসে সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন। হঠাৎ অধীর বিজেপির বিরুদ্ধে রাহুলের লড়াইয়ের বর্ণনায় বললেন, “না সংঘর্ষ না তকলিফ তো কেয়া মজা হ্যায় জিনে মে, বড়ে বড়ে তুফান থম জাতে হ্যায়, জব আগ লাগি হো সিনে মে!” মুগ্ধ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অধীরের কাঁধ চাপড়ে দিলেন। অধীরও হাসতে শুরু করে দিলেন। মনু সিঙ্ঘভি পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ হলেও, তিনি তৃণমূলের হয়ে মামলা লড়েন বলে অধীরের ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ শায়েরিতে মুছল কি?
সাংবাদিক বৈঠকে অধীররঞ্জন চৌধুরী ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। —ফাইল চিত্র।
চকলেটের প্রস্তাব
অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি বিতর্কের বয়স তখন প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টানা ভাষণে উসখুস করছেন অনেকেই। এমন সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর হাত বাড়িয়ে ছোট্ট চকলেট দিলেন পাশেই উপবিষ্ট রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে। অশ্বিনী খেলেন না। তখন অশ্বিনীর ও-পাশে বসে থাকা অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী খাবেন কি না ইশারায় জানতে চাইলেন অনুরাগ। জিভ কেটে মাথা নাড়লেন হরদীপ। তত ক্ষণে ওই দেওয়া-নেওয়া দেখে ফেলেছেন অনুরাগের ডান পাশের বেঞ্চের গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। হাত বাড়িয়ে চকলেট চাইলেন তিনি। ভরা লোকসভায় পাশের বেঞ্চে চকলেট আদানপ্রদান ঠিক হবে না বুঝে থমকালেন অনুরাগ। কাগজে চকলেটটি মুড়ে শেখাওয়াতের হাতে পৌঁছে দিলেন। মুহূর্তে সেটি উদরস্থ করলেন জলশক্তি মন্ত্রী।
সংসদে আইনজীবী
প্রয়াত রাম জেঠমলানির পুত্র মহেশ জেঠমলানিও দুঁদে আইনজীবী। বিজেপি তাঁকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসাবে রাজ্যসভায় এনেছে। কালো কোট ছেড়ে রাজ্যসভায় তিনি সাদা পাঞ্জাবিতে উদয় হন। কিন্তু অভ্যাস যাবে কোথায়! দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিলের আলোচনায় মহেশ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে ‘ইয়োর লর্ডশিপ’ বলে বসলেন। শুনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করলেন। জেঠমলানি মাফ চেয়ে বললেন, সকালে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। দুপুরে রাজ্যসভায়। একই দিনে মাথায় দু’রকম টুপি চাপালে এমন ভুল হবেই। ধনখড়ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। তিনি বললেন, একই দিনে তিনি তিন জন প্রবীণ আইনজীবীর বক্তৃতা শুনছেন। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, পি চিদম্বরম এবং মহেশ জেঠমলানি। বাড়ি ফিরে প্রত্যেকের বক্তৃতা খুঁটিয়ে পড়বেন। পরে সকলের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে মতামত জানাবেন।
খড়্গের শাসন
দাপুটে: সংসদ চত্বরে মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে রেগে গেলে কাউকেই ধমক দিতে ছাড়েন না। এক দিন রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদদের হট্টগোলে খেপে গিয়ে তিনি নিজেই জোরে ধমক দিয়ে বললেন, “আরে চুপ করে বসুন।” বিজেপি সাংসদরাও বসে পড়লেন। কী করে হল? সেই কৌতূহল মেটাতে মল্লিকার্জুন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে বললেন, বিজেপির বেঞ্চে অর্ধেকই তো পুরনো কংগ্রেসি। পরে মল্লিকার্জুনের খেয়াল হল, ধনখড়ও কংগ্রেসে ছিলেন। হাসতে হাসতে মল্লিকার্জুন তাঁকে বললেন, “স্যর, আর আপনিও!” ধনখড়ও না হেসে যান কোথায়!
দর্শকের দরবারে
বাদল অধিবেশনের শেষ তিন দিনে দর্শনার্থীদের লাইন মনে করিয়ে দিয়েছে কলকাতার ঠাকুর দেখার ভিড়কে। তাঁদের বড় অংশ রাজস্থানের। লোকসভা স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানও রাজস্থানের। তাই দর্শনার্থীদের চটানোর সাহস দেখাননি নিরাপত্তারক্ষীরা। বরং দর্শক গ্যালারি সন্ধে পাঁচটার বদলে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। আসলে পরের শীতকালীন অধিবেশনটি নতুন ভবনে হতে পারে। তাই পুরনো ভবনে অধিবেশন চলার সাক্ষী থাকতে চেয়েছেন আগতদের একটি বড় অংশ। উপরন্তু, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আকর্ষণও কম ছিল না।