দ্রাবিড় পরিচিতির লড়াইয়ের প্রধান মুখ ছিলেন করুণানিধি। —ফাইল চিত্র।
তামিলনাড়ুর কিং লিয়ার চলে গেলেন। সেই কালো চশমা| সেই তামিল স্টাইলে সাদা ধবধবে ধুতি। পায়ে সাদা চটি। দ্রাবিড় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন| পাঁচ বার মুখ্যমন্ত্রী। চোদ্দো বছর বয়সে গানবাজনা আর নাটকের জগৎ থেকে তিনি রাজনীতিতে চলে আসেন! এর পর টানা প্রায় আট দশক ধরে তিনি চেন্নাইয়ের রঙ্গমঞ্চে! কিন্তু গোটা দেশের রাজনীতির যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি, তিনি ছিলেন তার ধারক এবং বাহক।
পেরিয়ার-এর শিষ্য ছিলেন তিনি। আন্নাদুরাইয়ের প্রধান সেনাপতি। হিন্দি বিরোধী আন্দোলন, দ্রাবিড় পরিচিতির লড়াইয়ের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি নিজেই।
১৯৬৭ সালটি ভারতের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর। সে বছর কংগ্রেসকে সরিয়ে ডিএমকে ক্ষমতায় এল। আন্নার মন্ত্রিসভার পূর্তমন্ত্রী হন করুণানিধি। ধীরে ধীরে এক দিকে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, আবার অন্য দিকে দলের প্রধান কোষাধ্যক্ষ হয়ে ওঠেন। তামিল চলচ্চিত্রে করুণানিধি ছিলেন এক নবীন স্ক্রিপ্ট রাইটার আবার তিনি তামিল থিয়েটারেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন।
করুণানিধির সঙ্গেই ছিলেন এমজিআর। তিনিও জনপ্রিয় ফিল্মতারকা। কিন্তু করুণানিধির সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে| অবস্থা এমন হয়ে যে দল ভেঙে যায়। এমজিআর নতুন দল গঠন করেন। এমজিআর-এর কাছ থেকে দলের মশাল গ্রহণ করেন জয়ললিতা।
ধীরে ধীরে তামিলনাড়ুর রাজনীতির প্রধান দুই রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়ে ওঠে এডিমকে আর ডিএমকে।জয়ললিতা আগেই চলে গিয়েছেন। এ বার চলে গেলেন করুণানিধি। এ বার দ্রাবিড় রাজনীতির রথের রশি কার হাতে থাকবে? এ বার দিল্লির সঙ্গে তামিলনাড়ুর এই দ্রাবিড় নেতৃত্বের সম্পর্ক কী হবে?
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে করুণানিধির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। —ফাইল চিত্র।
কামরাজ জামানায় কংগ্রেসের সঙ্গে তামিল গৌরবকে যুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছিল। কামরাজের পর মুপানারকেও দেখেছি আমরা তামিল পরিচয়সত্তার সঙ্গে যুক্ত রাখতে পেরেছিলেন কংগ্রেসকে! পরে সেই মুপানরও আলাদা দল গড়েছিলেন, তামিল মনিলা কংগ্রেস। রাজীব গাঁধীর হত্যার পর তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়| জৈন কমিশন যখন রাজীব হত্যা নিয়ে তদন্ত করে তখন করুণানিধি নিজেই এক জন অভিযুক্ত। সে জায়গা থেকে পরে অনেক পরিবর্তন আসে। কমিশনের অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টে করুণানিধিকে ছাড় দেওয়া হয়| তখন আডবাণী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অর্জুন সিংহ, প্রণব মুখোপাধ্যায়, নটবর সিংহ প্রমুখ যান তাঁর কাছে শুধু এই অভিযোগ জানাতে যে, করুণানিধিকে রেহাই দেওয়ায় তাঁরা অসন্তুষ্ট। তাঁরা চাইছেন, কমিশনের রিপোর্ট আবার রিভিউ করা হোক!
ডিএমকে তখন বিজেপির সঙ্গে। পরে সেই ডিএমকে-কে শরিক হিসেবে গ্রহণ করে নেন সনিয়া গাঁধী। দিল্লির রাজনীতিতেও কখনও সমর্থন কখনও বিরোধিতা, এই রাজনীতিটাও খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে চালিয়েছে ডিএমকে!
সেই করুণানিধি চলে গেলেন! অখণ্ড ভারতকে রক্ষা করার স্বার্থেই প্রয়োজন দ্রাবিড় রাজনীতির টিকে থাকা। স্তালিনের উপর তাই এখন এক বড় চ্যালঞ্জ।