Justice

অবিচার

আক্ষেপ, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব যতই থাক, প্রশাসকদের নিকট তাহা কখনওই যথেষ্ট গুরুত্ব পায় নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৩
Share:

বিলম্বিত বিচার অবিচারের শামিল, কথাটি বহুপুরাতন হইলেও বহুমান্য হয় নাই। জরুরি অবস্থা, এমনকি ভয়াবহ অতিমারির আবহেও এই ‘অবিচার’ বেশি দিন চলিতে পারে না। অথচ, কলিকাতা হাই কোর্ট নিয়মিত কাজ শুরু করিলেও জেলা ও মহকুমা আদালতগুলির দরজা এত দিন হুড়কা আঁটিয়া বন্ধ ছিল। বহু বৎসর ধরিয়া বহু মামলায় ভারাক্রান্ত এই আদালতগুলি অতিমারির কারণে দীর্ঘ ছুটি থাকিবার জন্য যে পরিমাণ বকেয়া কাজ জমিয়াছে, তাহা ভাবিতেও চিত্ত শঙ্কিত ও সঙ্কুচিত হয়। কারণ, তাহার পরিমাপ কেবল কর্মদিবস দিয়া হইবার নহে— শেষ অবধি ইহার মূল্য চুকাইতে হইবে মানবজীবন দিয়া। কত বিচারপ্রার্থীর ইতিমধ্যেই কত অপূরণীয় ক্ষতি হইয়া গিয়াছে, কে বলিতে পারে? আদালত খুলিবার অপেক্ষায় কত জীবনের স্বাভাবিক গতিতে ছেদ পড়িয়াছে, কত জন বিচারের আশা ছাড়িয়া অন্যায়ের সহিত আপস করিয়াছে, তাহার হিসাব করা সম্ভব নহে। প্রশ্ন উঠিতে পারে, হাই কোর্ট অনলাইনে কাজ শুরু করিলে নিম্ন আদালতগুলি খুলিতে বিলম্ব কেন? আইনজীবী ও আদালত কর্মীদের টিকাকরণ হইয়াছে, ইহা স্বস্তির সংবাদ। তবে এমন তো নহে যে, এখন কেবলমাত্র দৈহিক উপস্থিতিতে কাজ হইবে। হাই কোর্ট জানাইয়াছে, মামলার শুনানি হইবে তিন প্রকারে— আদালতে উপস্থিতির মাধ্যমে, অনলাইনে, অথবা এই দুইয়ের মিশ্রণে। তবে এত দিন নিম্ন আদালতে অনলাইনে শুনানি হয় নাই কেন? তাহার জন্য যে জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয়, এমনও নহে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অতিশয় দক্ষ হইবারও প্রয়োজন নাই। অতিমারিতে বহু দফতর অনলাইনে নিয়মিত কাজের প্রকরণ রপ্ত করিয়াছে, মহকুমা আদালতও পারিত। সাধারণ নাগরিকের জীবনে জেলা ও মহকুমা স্তরের আদালতের গুরুত্ব বুঝিয়া, অতিমারিতেও সেইগুলির কর্মধারাকে যথাসাধ্য সচল রাখা যাইত না কি?

Advertisement

আক্ষেপ, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব যতই থাক, প্রশাসকদের নিকট তাহা কখনওই যথেষ্ট গুরুত্ব পায় নাই। স্বাধীনতার পর হইতে আদালতগুলির পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করা হয় নাই, কোনও এক প্রকারে বিচার চলিতেছে। আদালত ভবনগুলি তাহার সাক্ষী। অপরিসর কক্ষে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, সকলে কাজ করেন। সাম্প্রতিক তথ্য কেবল আদালত কক্ষের যত ঘাটতি দেখাইয়াছে, তাহা চমকপ্রদ। বলা বাহুল্য, নিম্ন আদালতগুলিতেই পরিকাঠামোর দুর্দশা অধিক। তৎসহ আছে বিচারকের সংখ্যায় ঘাটতি। বর্ধিত জনসংখ্যার নিরিখে নাগরিক ও বিচারকের আদর্শ অনুপাত কষিয়া লাভ কী, যদি পূর্বের শূন্য পদগুলিই পূরণ না হইতে পারে? একবিংশের ভারতে আরও প্রয়োজন ডিজিটাল পরিকাঠামো। সুরক্ষিত পদ্ধতিতে অনলাইনে শুনানির ব্যবস্থা অতিমারি-উত্তর পরিস্থিতিতেও বিচারে গতি আনিবে, আদালত চত্বরে অহেতুক ভিড় কমাইবে। কর্মক্ষেত্র বদলাইতেছে, আদালতই বা অচলায়তন থাকিবে কেন?

আদালতের মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়। আদালত ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ হইতে বিচারপতিদের সুরক্ষা ও সম্মান, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাহা পরিস্ফুট হওয়া প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থার প্রয়োজনের প্রতি অবজ্ঞা, তাহার স্বাতন্ত্র্য খর্ব করিয়া রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, সংসদে যথেষ্ট আলোচনা না করিয়া আইন প্রণয়ন, এই সকলই স্বচ্ছ, দ্রুত বিচারের পরিপন্থী। সর্বোপরি, আদালতের সুবিচার পাইতে হইলে ভয়হীন, চাপমুক্ত বিচারের পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ঝাড়খণ্ডে পথ দুর্ঘটনায় এক বিচারপতির মৃত্যু বস্তুত ‘হত্যা’ হইতে পারে, আশঙ্কা করিয়া সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া মামলা রুজু করিয়াছে। সেই তদন্তেও তৎপরতা দেখায় নাই সিবিআই। এই গয়ংগচ্ছ মনোভাবই বুঝাইয়া দেয়, বিচারব্যবস্থার প্রতি অবহেলা বা অবজ্ঞা কতখানি গভীর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement