মনমোহন সিংহ
মনমোহন সিংহ গোটা দেশের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠলেন যেন সংসদে। নরেন্দ্র মোদীদের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় নেই হয়তো। কিন্তু বিধেয়টা বেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। উদ্দেশ্য সাধনের প্রক্রিয়াটি যে সুনিয়োজিত নয়, গোটা দেশেই এই অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ যেন সেই জন-অনুভূতির প্রতিফলন হয়ে ধরা দিল।
যাবতীয় আর্থিক দুর্নীতির ভিত্তিমূলে ধাক্কা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ক্লেদমুক্তি যখন লক্ষ্য, তখন সরকার আপামর ভারতবাসীর সমর্থন পাবে, সে নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু যে পথে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে, সে পথ আদৌ ফলপ্রদায়িনী হবে, না পর্বতপ্রমান হয়রানি শেষে মূষিকবৎ ফল প্রসূত হবে, তা নিয়ে নাগরিকের মনে সংশয়ের পরিসর এবং অবকাশ ক্রমশ বাড়ছে।
মুদ্রা সঙ্কটের ধাক্কায় বাণিজ্যিক আদান-প্রদান অন্তত পক্ষকালব্যাপী বিপর্যয়ের মুখে। কৃষি ক্ষেত্র বিপুল অনিশ্চয়তায়। ভারতীয় মুদ্রার আন্তর্জাতিক মূল্যে আশঙ্কাজনক পতন। প্রধানমন্ত্রী যে পঞ্চাশ দিন চেয়ে নিয়েছেন, সেই পঞ্চাশ দিন ধরে এই নেতিবাচক সূচকগুলি অক্ষুণ্ণ থাকলে কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির উপর গভীর ঋণাত্মক ছাপ পড়ার আশঙ্কা থাকেই। কিন্তু সে আলোচনা আসলে অর্থনীতির গভীরের চর্চা। সাধারণ নাগরিকের দৈনন্দিন চর্চা আরও সরল স্তরে। ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি সুবিন্যস্ত হওয়া উচিত ছিল না কি? দেশের এক সুবৃহৎ বিস্তারে আচমকা যে ভাবে দিনাতিপাত দুষ্কর হয়ে উঠেছে, বিরাট এক জনগোষ্ঠীকে সেই পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়া কি কিছুতেই এড়ানো যেত না? সাধারণ নাগরিকের দৈনন্দিন চর্চা এখন এই প্রশ্নগুলিকে ঘিরেই।
নগরে, শহরে বা শহরতলিতে ব্যাঙ্ক বা এটিএমের সামনে যে সব দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে রোজ, সেই সারিবদ্ধ জনতাকে দেখে কিন্তু সমস্যার আঁচ পাওয়া যাবে না মোটেই। নোট বিভ্রাট শুরুর পর থেকে সমস্যা ঠিক কতটা প্রাবল্যে হানা দিয়েছে রোজকার জীবনে, সুন্দরবনের বাসন্তী-গোসাবায় গেলে বা জঙ্গলমহলের বলরামপুর-বেলপাহাড়িতে গেলে বা ডুয়ার্সের ক্রান্তি-নাগরাকাটায় গেলে তার হদিশ মেলে। সেই ভারতটাই কিন্তু সুবিস্তীর্ণ ভারত, নগর-শহর-শহরতলিটা নয়।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে সেই সুবিস্তীর্ণ ভারতের উদ্বেগটাই ধ্বনিত হয়েছে। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও পর্বতপ্রমাণ অব্যবস্থায় যে কোটি কোটি সংসারে নাভিশ্বাস আজ, সাধারণ্যে সে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে জোরদার। সাধারণ মানুষের সেই সাধারণ তত্ত্বকথাতেই যেন এ বার এক অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের সিলমোহর পড়ল।