দিল্লি ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
জষ্টি থেকেই শুরু, তার পর আষাঢ়-শ্রাবণ জুড়ে রাজধানীর রাজনৈতিক করিডর আমোদিত আমের সুবাসে। সুদৃশ্য বাক্সে সরকারের পক্ষ থেকে আম যায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশীও আম পাঠায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে। লুটিয়েন্স দিল্লির রসিক মহলে বসে ছোট ছোট আম-আড্ডা। আমকে উপলক্ষ করে জমায়েত হন বিভিন্ন দলের নেতারা। স্বাদ উপভোগ করতে করতেই বর্ষাকালীন অধিবেশনের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা চলে। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বাসভবনের আমের আসরে নিমন্ত্রণ করেছিলেন বিভিন্ন দলের সাংসদকে, বুধবার বিকেলে। তৃণমূল থেকে আমন্ত্রিত ছিলেন বেশ কয়েক জন। সৌগত রায় আর শতাব্দী রায় লোকসভা থেকে তারুরের বাড়ি পৌঁছন সময়মতোই। কিন্তু গিয়ে দেখেন সামনে কোনও গাড়ি নেই, ধু ধু করছে বাংলো। শোনেন, তারুরের রাজ্য কেরলের ওয়েনাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিরাট ট্র্যাজেডি ঘটে যাওয়ায় বাতিল হয়েছে উৎসব। সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আম-হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। সেটি সৌগত-শতাব্দী দেখে বেরোননি বলেই বিপত্তি।
নিশ্চিন্ত: বুধবার সংসদের বাইরে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ও শতাব্দী রায়।
নিলম্বিত ধনখড়
উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ও নিলম্বিত, ‘সাসপেনশন’-এ রয়েছেন! কে কোথা থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করল? কার এত সাহস? চেয়ারম্যান রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, তার পর উপরাষ্ট্রপতি হয়েছেন বলে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীর পদ থেকে সাসপেনশনে রয়েছেন। সিপিএমের সাংসদ জন ব্রিট্টাসের কটাক্ষ, তাই কি বিরোধী সাংসদদের কথায় কথায় সাসপেন্ড করেন?
রাগ, হাসি, ঠোক্করে
লোকসভার বাজেট বিতর্কে শাসক শিবিরের প্রথম বক্তা ছিলেন ত্রিপুরার বিপ্লব দেব। বাঙালি সাংসদের বলার সময়ে বাংলায় তির্যক মন্তব্য করছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের পাশে বসেছিলেন লালুপ্রসাদ কন্যা মিশা ভারতী। তিনিও বিপ্লবকে লক্ষ্য করে মন্তব্য করতে থাকায় হঠাৎ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন স্পিকার ওম বিড়লা। মিশাকে বলেন, “একে তো কোনও বিতর্কে আপনি যোগ দেন না। কিছু বলেন না। উপরন্তু যে বলছে তাঁকে বাধা দিচ্ছেন। বক্তার বলার সময় বসে বসে মন্তব্য করা অসংসদীয় প্রথা।” শুনে তৃণমূলের এক সাংসদ ফুট কাটেন, “তবে কি নিজের আসনে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করা যাবে?” শুনে হেসে ফেলে গোটা লোকসভা। মায় স্পিকারও।
প্রসন্ন: সংসদে ঢুকছেন রাহুল গান্ধী।
হালকা মেজাজে
রেল বাজেট নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতিতে লোকসভার বাইরের লবিতে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ এসে কল্যাণের ঘাড়ে হাত দেন। হালকা মাসাজও করেন তাঁর দুই কাঁধে। মুখ ঘোরাতেই কল্যাণ হকচকিয়ে যান। দেখেন রাহুল গান্ধী দাঁড়িয়ে আছেন কাঁধে হাত দিয়ে। চোখাচোখি হতেই হেসে ওঠেন উভয়েই। পরে রেল বাজেট নিয়ে বলতে গিয়ে স্পিকারের পরিবর্তে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দিকে মুখ করে বক্তব্য রাখছিলেন কল্যাণ। স্পিকার বলেন, “মন্ত্রী নয়, স্পিকারের আসনের দিকে মুখ করে বক্তব্য রাখুন।” কল্যাণ বললেন, “আমাদের রেলমন্ত্রী এত সুপুরুষ। তাই ওঁকে দেখতে দিন।” সারা দিন ধরে রেল-দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধী সাংসদদের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর অশ্বিনীর মুখে তখন স্মিত হাসি।
জোট রসায়ন
বাজেট আলোচনায় রাহুল গান্ধীর আক্রমণাত্মক বক্তৃতা বিপুল অভিনন্দন কুড়িয়েছে। চক্রব্যূহের আমদানি করে তিনি বিঁধেছেন সরকারের শীর্ষ নেতাদের। সাংবাদিকদের জন্য নতুন তৈরি অস্থায়ী খাঁচাসদৃশ কক্ষের দিকে যাওয়ার পথেও পেয়েছেন প্রশংসা। ফিরতি পথে মকরদ্বারের সামনে দেখলেন ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝিকে। রাহুলের বক্তব্য, “যত ক্ষণ না কানিমোঝি বলছেন, আজকের বক্তৃতাকে ভাল বলব না আমি।” কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ডিএমকে নেত্রী হেসে বললেন, “তামিল মানুষ সব সময়ই তোমাকে ভালবাসে।” শুনে খুশিমনে এগোলেন রাহুল।
এক নম্বর দাওয়াই
একে একে একাকার! ১১,১১,১১১ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থই এ বার বাজেটে পরিকাঠামো তৈরির মূলধনি খাতে বরাদ্দ। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকারের এটাই এক নম্বর দাওয়াই। কিন্তু এত এক কেন? এর পিছনে কি সংখ্যাজ্যোতিষ? এক কি কারও পয়া সংখ্যা? অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মুচকি হাসছেন। উত্তরটি দিচ্ছেন না।