ধ্বংসের ধারাবিবরণী

বড় সংস্থাকে ডুবিতে দিলে মুশকিল, এত টাকার মন্দ ঋণ অর্থনীতির পক্ষে সুসংবাদ হইবে না। সম্পত্তি বিক্রিবাটা করিয়া যদি ঋণের একটি অংশও শোধ করিয়া দেওয়া যায়, ভাল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share:

একটি বাণিজ্যিক সংস্থা দেনার দায়ে ডুবিতে বসিয়াছে। বাজারে মোট ঋণের পরিমাণ ৯১,০০০ কোটি টাকা। পক্ষকালের আতঙ্কের পর সরকার সংস্থাটির পরিচালকমণ্ডলীকে সরাইয়া নূতন বোর্ড নিয়োগ করিয়াছে— কোন পথে এই সঙ্কট হইতে নিস্তার পাওয়া যায়, তাহার সন্ধান চলিতেছে। এক অর্থে, আইএলঅ্যান্ডএফএস-কে কেন্দ্র করিয়া যাহা ঘটিতেছে, তাহা অস্বাভাবিক নহে। বড় সংস্থাকে ডুবিতে দিলে মুশকিল, এত টাকার মন্দ ঋণ অর্থনীতির পক্ষে সুসংবাদ হইবে না। সম্পত্তি বিক্রিবাটা করিয়া যদি ঋণের একটি অংশও শোধ করিয়া দেওয়া যায়, ভাল। তবু, ভারতীয় অর্থনীতির কোথায় কী খামতি, বর্তমান কুনাট্য তাহার মোক্ষম উদাহরণ। প্রথমত, সংস্থাটি এতখানি অ-লাভজনক হইয়া গেল কী ভাবে? ভুল পরিচালনা, বাজারের চলন বুঝিতে ব্যর্থতার ন্যায় অভ্যন্তরীণ ত্রুটির সম্ভাবনার কথা অস্বীকার না করিয়াও একটি অন্য দিকে নির্দেশ করা প্রয়োজন। পরিকাঠামো সংস্থার লাভযোগ্যতা বহুলাংশে নির্ভর করে সরকারের নীতির উপর। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সমূহ ব্যর্থতা সংস্থাটির বহু প্রকল্পেরই লাভযোগ্যতা, এমনকি সম্ভাব্যতা, কাড়িয়া লইয়াছে। মনমোহন সিংহের জমানার ‘নীতিপঙ্গুত্ব’ লইয়া যাঁহারা দিনে-রাতে ব্যঙ্গ করিতেন, তাঁহারা সাড়ে চার বৎসরে কী করিলেন, ভোটের মুখে এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করা বিধেয়।

Advertisement

দ্বিতীয় প্রশ্ন নজরদারির। সংস্থাটির আর্থিক অবস্থা এক দিনে খারাপ হয় নাই। গত মাসে যখন আইএলঅ্যান্ডএফএস বাজারের ঋণ পরিশোধে তাহাদের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করিল, তাহার বহু পূর্বেই সংস্থার ব্যালান্স শিটের সেই তথ্যটি জানাইয়া দেওয়ার কথা ছিল। কেন জানা যায় নাই, গুরুতর আর্থিক অপরাধের তদন্তকারী সংস্থা এখন তাহা অনুসন্ধান করিতেছে। দোষীদেরও খোঁজ মিলিবে বলিয়া আশা করা যায়। কিন্তু, ঘটনাক্রম সত্যম কম্পিউটার সার্ভিসেস এবং তাহার তৎকালীন মালিক বাইরাজু রামলিঙ্গ রাজুর স্মৃতি ফিরাইয়া আনিতেছে। স্পষ্টতই, এখনও ভারতে কোনও সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্যভঙ্গের খবরটি নির্দ্বিধায় গোপন রাখা সম্ভব। প্রশ্ন হইল, দুর্নীতি ও আর্থিক কারচুপির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিয়া যাঁহারা দিল্লির মসনদে আসীন হইয়াছিলেন, তাঁহারা তবে কোন যুদ্ধটি লড়িলেন?

তৃতীয় প্রশ্ন এলআইসি-কে লইয়া। দেশের বৃহত্তম বিমা সংস্থা আইএলঅ্যান্ডএফএস-এর অন্যতম বড় অংশীদার। সংস্থাটি দেশের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বটে। এ ক্ষণে, ডুবিতে বসা আইএলঅ্যান্ডএফএস-কে উদ্ধার করিতে এলআইসি যদি ফের টাকা ঢালিতে চাহে, তাহা ভ্রান্ত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য হইতে পারে, কিন্তু সরকারি দুর্নীতির উদাহরণ হিসাবে রাজনৈতিক প্রশ্ন হইয়া উঠিবে কেন? তাহার উত্তরও নরেন্দ্র মোদীদেরই দিতে হইবে। কারণ— এক, এলআইসি-র নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে, বিমার প্রিমিয়াম হিসাবে আদায় হওয়া তিন লক্ষ আঠারো হাজার কোটি টাকার নিয়ন্ত্রণও অতএব সরকারের ইচ্ছাধীন; এবং দুই, ইতিপূর্বে বহু বার এলআইসি ডুবিতে বসা সংস্থায় টাকা ঢালিয়াছে। সেই লগ্নিতে রাজনৈতিক গন্ধ প্রকট ছিল। ফলে, এলআইসি-র বিনিয়োগ-সিদ্ধান্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নাই। এই অবিশ্বাস বহুলাংশে বর্তমান সরকারের নিজস্ব অর্জন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement