শিল্পের নানা শাখায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ

যে বাঙালির শিক্ষার এত গর্ব, সে বাঙালিই আজ সবচেয়ে বেশি শিল্প-সাহিত্যের আস্বাদনে নিজেকে দীক্ষিত ক’রে তোলায় অনুৎসাহী। দেবেশবাবুর বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধগুলি পড়তে-পড়তে এ কথাগুলিই বার বার ঘাই মারে মাথার মধ্যে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রবন্ধ সংগ্রহ/ দেবেশ রায়

Advertisement

সম্পাদক: সমরেশ রায় ও স্বপন পাণ্ডা

৫০০.০০

Advertisement

এবং মুশায়েরা

‘আধুনিক মানেই অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণতা তার চরিত্র।’ এমন বাক্যাদি দেবেশ রায়ই লিখতে পারেন, যিনি বাংলা উপন্যাসের আধুনিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নিরন্তর। যেমন তিনি লিখছেন, কমলকুমার মজুমদার কেন পাঠক ও সমালোচকের সমর্থন পান না, ‘তার কারণ কমলকুমারের প্রকরণ নয়, ভাষা নয়, বিষয় নয়। তার কারণ কমলকুমার মজুমদার সাহিত্যে ক্লাসিকধর্মে বিশ্বাসী আর সম্প্রতিকালে সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতা আমরা হারিয়েছি, ক্লাসিকসের পঠনঅভ্যাস থেকে আমরা বঞ্চিত।’ আরও তলিয়ে আমাদের পঠনঅভ্যাস নিয়ে অপ্রিয় তিক্ত অথচ সত্যি কথাগুলিও লিখতে ভোলেন না: ‘এতো বই বেরয়, এতো বই বিক্রি হয়, এতো সরকারী বেসরকারী লাইব্রেরি— এতো সভ্য, পত্রিকাগুলির এতো গ্রাহক... এতো পাঠক সত্ত্বেও যদি কোন লেখক পাঠকের কাছে পৌঁছতে না পারেন... তাহলে দোষ নিশ্চয়ই লেখকের... এতো সুন্দর গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকতে কে আর চায় নিজেকে কোন বিশেষ লেখকের জন্য তৈরি করতে, শিক্ষিত করে তুলতে।’ যে বাঙালির শিক্ষার এত গর্ব, সে বাঙালিই আজ সবচেয়ে বেশি শিল্প-সাহিত্যের আস্বাদনে নিজেকে দীক্ষিত ক’রে তোলায় অনুৎসাহী। দেবেশবাবুর বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধগুলি পড়তে-পড়তে এ কথাগুলিই বার বার ঘাই মারে মাথার মধ্যে। যদিও এ কথাগুলি খেয়াল করানোর জন্যে লেখা নয় তাঁর প্রবন্ধগুলি, বরং আবহমান বাংলার এক শ্রেষ্ঠ আখ্যানকারের শিল্পের নানান শাখায় স্বচ্ছন্দ বিচরণের গহন নথি যেন লেখাগুলি। প্রতিটি লেখায় তাঁর তীক্ষ্ণধী কলম শিল্প বা সাহিত্য বিচারের নতুন দৃষ্টিকোণ, নতুন তাৎপর্য তৈরি ক’রে দেয়। কবিতা, ছবি, নাটক, চলচ্চিত্র, সংস্কৃতির রাজনীতি, গ্রামশি ও মার্কসবাদ... কী নিয়ে-না লিখেছেন! রবীন্দ্রনাথের গান ও সমকালীনতা নিয়ে বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটিই বিস্মিত করে আমাদের: ‘‘কখনো সঙ্গীত সেই সমকালীন বিষাদকেই ধরতে চায় আবার কখনো সময়ের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো অতীতের স্তরে সেই সমকালীন বিষাদকে আমরা আবিষ্কার করি। ‘দিন যায় রে দিন যায় বিষাদে— স্বার্থ কোলাহলে, ছলনায়, বিফলা বাসনায়।’... সঙ্গীতের ভিতর ইতিহাস ঢুকে পড়ে অনেক জটিল অপ্রত্যক্ষতায়।’’

অলৌকিক গল্পসমগ্র

লেখক: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

৩৫০.০০

আনন্দ পাবলিশার্স

অলৌকিক রসের গল্প সবসময়ই বাঙালিকে টানে। আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা হলে তো কথাই নেই। ১৯১৫ সালে শরদিন্দুবাবু ষোলো বছর বয়সে তাঁর জীবনের প্রথম ছোটগল্প— একটি অলৌকিক কাহিনি— রচনা করেন। গল্পটির নাম ‘প্রেতপুরী’। এই গল্পেই ভূতজ্ঞানী বরদার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেন লেখক। প্রথম দিকে তাঁর ভূতের গল্পগুলি মূলত বরদারই কাহিনি। অধিকাংশ গল্পের পশ্চাৎপট মুঙ্গের শহর ও বিহারের গ্রামাঞ্চল। বরদার গল্প বলার এক নিজস্ব ভঙ্গি ছিল। গোড়াতেই চমকপ্রদ একটা কথা বলে সে শ্রোতাদের হতবুদ্ধি করে দিত, তার পর সামলে ওঠার আগেই গল্প শুরু করত। এক কৌতূহলী পাঠকের প্রশ্নের উত্তরে মৃত্যুর কয়েক মাস আগে লেখকের জবানি— ‘ভূতের গল্প সম্বন্ধে আমার একটু দুর্বলতা আছে। বরদা চরিত্র কাল্পনিক। নতুন কোনও আইডিয়া না পেলে ভৌতিক গল্প আর লিখব না। আসলে বরদাই আমাকে ছেড়ে গেছে, আমি বরদাকে ছাড়িনি।’ লেখকের শেষ অলৌকিক গল্প হল ‘কামিনী’ (১৯৬৫)। এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে তাঁর রচিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে ৩১টি অলৌকিক গল্প নিয়ে প্রকাশিত হল বইটি। গল্পগুলিতে অলৌকিকের মধ্যে মানবিক রস মিশে আছে, যা পাঠককে একমুহূর্ত অন্যমনস্ক হতে দেবে না।

রামদাস সেন/ সময়, জীবন ও সাহিত্য

লেখক: গৌরী ঘোষ

৬৯৫.০০

সোপান

‘রামদাস সেন (১৮৪৫-১৮৮৭) বাংলাসাহিত্যের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যকার। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর রচনাবলী, যার মধ্যে ভারততত্ত্ব বিষয়ক একাধিক প্রবন্ধগ্রন্থ এবং বুদ্ধদেবের জীবনী ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি কাব্যগ্রন্থও— বাংলা সাহিত্যকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছে।... উল্লেখযোগ্য এই কৃতিত্ব সত্ত্বেও বাংলাসাহিত্যে ও সংস্কৃতি-চর্চার ক্ষেত্রে তিনি অনেকখানি উপেক্ষিত ও প্রায়-বিস্মৃত।’ আলোচ্য বইটির মুখবন্ধে লিখেছেন নির্মলকুমার দাশ। বহরমপুরের ধনাঢ্য সেন-পরিবারের স্বশিক্ষিত, বিদ্যোৎসাহী এই সংগ্রাহক ও গবেষকের প্রতিষ্ঠা আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত ভারততত্ত্ববিদ হিসাবেই। ‘বঙ্গদর্শন’-এর সূচনাপর্বে তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের সহযোগী। তাঁর গ্রন্থাগার ছিল সাহিত্যসেবীদের মিলনক্ষেত্র। গৌরী ঘোষ বিপুল পরিশ্রমে এই প্রায়-বিস্মৃত মানুষটির নষ্টকোষ্ঠী উদ্ধার করেছেন। প্রায় সাতশো পৃষ্ঠার এই আকরগ্রন্থের প্রথমেই তিনি দেশকালের চিত্র আলোচনা করে রামদাসের সমকালের বাংলা সাহিত্যে স্বদেশবোধ ও ভারতবিদ্যা চর্চার প্রেক্ষিতটি তুলে ধরেছেন, ফলে রামদাসকে সামগ্রিকতায় বোঝা সহজ হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তাঁর জীবন ও সাহিত্যকৃতি নিয়ে। দুষ্প্রাপ্য পত্রিকার পৃষ্ঠা থেকে একটি একটি করে প্রবন্ধ তুলে ইতিহাস চর্চায় রামদাসের অনন্যতা বিশ্লেষণ করেছেন। বাদ যায়নি গদ্যশৈলীর কথাও। পরিশেষ অংশে সংযোজিত হয়েছে দুর্লভ আলোকচিত্র (মুদ্রণমান যদিও আশানুরূপ হয়নি), বইয়ের আখ্যাপত্র ও গ্রন্থতালিকা। সব মিলিয়ে উনিশ শতকের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement