Books

গল্পগুলি সব কবিতার ভাষায় সজ্জিত

৬৪৮ পাতার সুসম্পাদিত ও সুমুদ্রিত ‘ভাষানগর’ পত্রিকা। বাংলা ভাষায় এই পত্রিকার অন্যতম গুরুত্ব অনুবাদ কবিতার জন্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

গল্পকার হবেন এমন ভাবনা বা ইচ্ছে কোনওটাই ছিল না। আবার হয়ত বা ছিলও চাপা পড়ে, চেতনার অন্তস্তলে। পঁচিশ বছরে জয় গোস্বামীর লেখা ৩৮টি গল্পের বই গল্পসমগ্র (দে’জ, ৪৯৯.০০)। কবির গল্প লেখার পিছনে যে রমাপদ চৌধুরী এবং সাগরময় ঘোষের প্রবল ইন্ধন ছিল, তা লেখকই জানিয়ে দেন। কবির রচনায় গদ্য সব সময়েই অন্য চেহারা নেয়। গল্পগুলি পড়তে পড়তে মনে হয়, যেন এক কবিতার বই-ই পড়া হচ্ছে। ‘তুমি জানো, শ্রীজাতকিশোর’, ‘মল্লার যেখানে নামে’, ‘ঘোড়াবাবু’, ‘বড় দারোগার বাবা’— ইত্যাদি গল্পগুলো সব কবিতার ভাষায় সজ্জিত। এ এক নতুন গল্পের ভাষা।

Advertisement

৬৪৮ পাতার সুসম্পাদিত ও সুমুদ্রিত ‘ভাষানগর’ পত্রিকা। বাংলা ভাষায় এই পত্রিকার অন্যতম গুরুত্ব অনুবাদ কবিতার জন্য। কিন্তু ‘জানুয়ারি ২০২০’ সংখ্যার গুরুত্ব সে সবের চেয়ে অনেক বেশি, কেন না তরুণ কবিরা এ পত্রিকায় নিজেদেরকে আকীর্ণ করেছেন। সমীরণ দাসের তথ্যবহুল জীবনীসংঘাত ‘সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে’ বা স্বপন চক্রবর্তীর ‘হোয়াটসঅ্যাপ আমি নেই’— ইত্যাদি নানা আয়োজনে ভরা পত্রিকাটি। সম্পাদক সুবোধ সরকার সত্তর দশকের কবি হলেও তাঁর দশকের কবিদের যত দূর সম্ভব দূরে সরিয়ে রেখে ‘পরবর্তী অগণন তরুণের’ জন্য জায়গা করে দিয়েছেন।

চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের এক ফর্মার কবিতাবই এখন হারমোনিয়মে বসলে পাপ হয় (শুধু বিঘে দুই)। উৎসর্গে লেখা আছে, ‘‘কিন্তু জানো সময় ছাড়িয়ে নিয়ে কেউ না কেউ একদিন ঠিক খুঁজে পাবে এই চকমকি বসানো ট্র্যাক। একে অন্যকে বলবে, ‘আরে! ভালোবাসা হয়েছিল বুঝি!’’ সন্ত্রাস, ভয়, প্রণয়, অনিশ্চয়সম্বল কবিতা পাতা আছে এ বইয়ের পথে পথে।

Advertisement

দু’মলাটে আঠারোটা লেখা। বেড়ানো নিয়ে লেখালিখিতে সচরাচর যে এক পোয়া দেখলাম-ঘুরলামের মধ্যে দু’চামচ নিসর্গবর্ণনা মিশিয়ে শেষটায় অমোঘ বিস্ময়চিহ্ন থাকে, তানভীর মোকাম্মেলের ভ্রমণ কথা (ঋত প্রকাশন, ৩৫০.০০) তাকে গোড়াতেই বিদায় জানায়, বরং হয়ে ওঠে গন্তব্য ভূখণ্ডটির ভূগোল-ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক কথকতা। এ ভাবেই লেখকের চোখে ধরা দেয় অউশভিৎজ় কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ডেনমার্কে হ্যামলেটের দুর্গশহর হেলসিঙ্গোর, পুরনো টোকিয়োর গলিঘুঁজি থেকে আমস্টারডামে অ্যান ফ্রাঙ্কের গোপন কুঠুরি। সুইডেনের উপসালা শহরে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা ‘নানি’ থেকে মরক্কোর রাবাত বা মারাক্কেস-এর উট-সহিস মুস্তফা, তানভীরের কলমে হয়ে ওঠেন অপরাজিত সাধারণ্যের আদিরূপ। বাদ যায়নি উপমহাদেশও, হায়দরাবাদ থেকে জিম করবেটের গ্রাম কালাধুঙ্গি, সেরাইকেল্লা থেকে করাচি জেগে থাকে ঔপনিবেশিকতা সামন্ততান্ত্রিকতা ছুঁয়ে গণতন্ত্রের সমসাময়িকতায়। প্রকাশের সারল্য ও লেখার সহজতা বড় সহজ নয়, এই বইয়ের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ওই দুইয়েই।

জন্মদ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে ক্রমাগত যে সব বই বা পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে চলেছে, তেমনই একটি উদ্যোগ এ বারের ‘সংবর্তক’ (সম্পা: সৌরভ রঞ্জন ঘোষ) পত্রিকার ‘বিদ্যাসাগর বিশেষ সংখ্যা’। সংখ্যাটিতে বিশিষ্ট জনের বিবিধ দৃষ্টিকোণে বিদ্যাসাগর সম্পর্কিত রচনাগুলি সাজানো হয়েছে ‘ব্যক্তি ব্যক্তিত্ব ধর্ম ও দর্শন’, ‘ভাষা ও সাহিত্য’, ‘শিক্ষা তথা সমাজ’, ‘সমকালীন দৃষ্টিতে, সম্পর্কের আলোয়’ ইত্যাদি নামাঙ্কিত বিভাগে। প্রয়োজনীয় আরও দু’টি বিভাগ: ‘বহির্বঙ্গে বিদ্যাসাগর’ ও ‘বিদ্যাসাগর: ফিরে পড়া’। প্রথমটি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ও বিদেশে বিদ্যাসাগরের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে, দ্বিতীয়টিতে তাঁর রচনাপঞ্জি ও তাঁকে নিয়ে চর্চা ও বিতর্কসমূহ। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্যের ‘বিদ্যাসাগর এবং বেসরকারি সমাজ’ রচনাটি, যেখানে আছে বিদ্যাসাগরের মোক্ষম মন্তব্যটি: ‘‘বাবুরা কংগ্রেস করিতেছেন, আন্দোলন করিতেছেন, আস্ফালন করিতেছেন। দেশের সহস্র সহস্র লোক অনাহারে প্রতিদিন মরিতেছে তাহার দিকে কেহই দেখিতেছে না।’’

‘‘ওঁর গান আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত। ওঁর রবীন্দ্রসংগীত শুনলে অনেক কাজের মধ্যেও আমি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি।’’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৯) সম্পর্কে বলেছিলেন উত্তমকুমার। জন্মশতবর্ষে পৌঁছে-যাওয়া হেমন্তকে নিয়ে ‘শতবর্ষ স্মারক সংখ্যা’ প্রকাশ করেছে প্রয়াত সমীরকুমার গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘মিলেমিশে’। এতে মান্না দে বলেছেন ‘‘ভগবান এত মিষ্টি গলা কজনকে দেন।’’ শুরুতেই এ-সংখ্যার অতিথি সম্পাদক সৌম্যেন অধিকারী জানিয়েছেন ‘‘নানা গুণীজনের সাক্ষাৎকার ও লেখা, অপ্রকাশিত কিছু ছবি, লিফলেট, পেপার কাটিং ও পোস্টার আমাদের এই সংখ্যাকে ব্যতিক্রমী করবে আশা রাখি।’’ আছে হেমন্তের নিজেরই বেশ কিছু সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন মুহূর্তের স্থিরচিত্র ও জীবনপঞ্জি।

‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার নবপর্যায়ের তিয়াত্তর সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিদায় নিয়েছেন ২০১২-র ২৩ অক্টোবর। তবুও আজও কৃত্তিবাস প্রকাশিত হয়ে চলেছে। এ এক পরম সৌভাগ্যের কথা। বিশেষ করে তরুণ কবিদের কাছে। সুনীল-জায়া স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় এখন এই পত্রিকার সম্পাদক, তাঁকে সাহায্য করার জন্য পরবর্তী কালের বিশিষ্ট কবিরা রয়েছেন, যাঁরা এখনই নিজেদের পরিচয়ে সমুজ্জ্বল। এই সংখ্যায় পঞ্চাশের কবি প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার ও রণজিৎ দাশের গল্প রয়েছে। উল্লেখযোগ্য উপহার ১৯৭১ সালের ডায়েরির পাতায় সুনীলের কবিতার প্রতিমুদ্রণ। স্মরণ অংশে নবনীতা দেব সেন ও গীতা চট্টোপাধ্যায়— পাঠককে স্মৃতিরাতুল করে তুলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement