জীবন উজ্জীবন এবং...
সলিল চৌধুরী
৩৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং
সলিল চৌধুরীর বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ছিলেন ডাক্তার। অসমের শিবসাগর জেলার লতাবাড়ি চা-বাগানের সাহেব ম্যানেজার তাঁকে ‘কাম হিয়ার ডার্টি নিগার’ বলে ডাকায় তিনি এক ঘুসিতে সেই সাহেবের তিনটি দাঁত ভেঙে দেন। এ ঘটনার পর তিনি সোজা চলে যান সেখানকার চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. মালোনি-র কাছে, তিনি ছিলেন আইরিশ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর তাঁর ছিল সহানুভূতি। ফলে তাঁর সাহায্যেই জ্ঞানেন্দ্রনাথ সপরিবার পালিয়ে আসেন কলকাতায়, সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁর দেওয়া কলের গান আর শ’খানেক ইংরেজি বাজনার রেকর্ড। সলিল লিখছেন ‘‘আমার বাবার একাধারে এই দুঃসাহস আর আত্মসম্মানজ্ঞান, অন্যদিকে অসম্ভব সংগীতপ্রীতি আমার পরবর্তী জীবনকে গড়ে তুলতে অনেকখানি সাহায্য করেছে। জ্ঞান হওয়া থেকে এইসব সিম্ফনি রেকর্ড আর হঠাৎ হঠাৎ বাবার দরাজ গলায় আলাপ আমার চৈতন্যে মিশে গেছে।’’ সলিলের ‘জীবন উজ্জীবন’ প্রথম ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছাপা শুরু হয় পূর্ণেন্দু পত্রী-র হাতযশে, পরে গ্রন্থিতও হয়, কিন্তু দীর্ঘ দিন তা পাঠকের নাগালে ছিল না। সেই স্মৃতিকথনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই সলিলের বেশ কিছু লেখাপত্র আর দু’টি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার সংযুক্ত করে নতুন ভাবে বেরোল জীবন উজ্জীবন এবং...। সম্পাদক প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রয়াত শল্যচিকিৎসক ডা. সমীরকুমার গুপ্ত, অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী ও সলিলকন্যা অন্তরা-র সহযোগিতা ছাড়া এ-উদ্যোগ অসম্ভব থেকে যেত। এই আত্মকথন শুধু যে সলিলের প্রতিভাময় উত্থানের হদিশ তা নয়, এ দেশের স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী অস্থির সময়েরও রূপরেখা। কমিউনিস্ট পার্টি-র গণনাট্য সঙ্ঘ আর তার প্রতিবাদী শিল্পরীতিরও ইতিহাস। সলিল লিখছেন, ‘‘বস্তুতই এগারো-বারো বছর বয়স থেকেই আমি লিখতে শুরু করি। খাতার পর খাতা আমি কবিতা লিখে ভরিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু সেটা ছিল আমার একান্ত গোপন। একমাত্র আমার মা ছিলেন এগুলির পাঠিকা।... সেগুলি যে কোথায় কবে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে... তার জন্য আমার কোনো দুঃখও নেই। কিন্তু পরবর্তীকালে ৪৭-৪৮ সালে গণনাট্যের জন্য লেখা আমার নাটক ‘এই মাটিতে’, ‘জনান্তিকে’ এবং ‘সংকেত’ ইত্যাদি নাটকগুলির পাণ্ডুলিপি যে কোথায় হারিয়ে গেল। ছাপা হয়নি কোনোটাই, কারণ প্রথম অভিনয়ের পরেই নাটকগুলি সদ্য-স্বাধীন কংগ্রেস সরকার নিষিদ্ধ করেছিলেন।’’