পুস্তক পরিচয় ২

দেশজ শিল্পের ঐতিহ্য

বহু দিনের বহু পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নির্মাণগত পদ্ধতি প্রকৌশলে বহু বিবর্তন ঘটিয়ে ভেলা থেকে ডোঙা, ডোঙা থেকে বিভিন্ন ধরনের নৌকা এবং নৌকা থেকে ছোটবড় জাহাজ নির্মিত হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৭
Share:

পশ্চিমবঙ্গের জলযান

Advertisement

লেখক: রঙ্গনকান্তি জানা

২৫০.০০

Advertisement

সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া

পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। এই জল যেমন এক দিকে মানুষের জীবনধারণের অন্যতম প্রধান সম্বল, তেমনই কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা যাতায়াতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রাকৃতিক বাধাকে অতিক্রম করতে মানুষ আদিকাল থেকে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। বহু দিনের বহু পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নির্মাণগত পদ্ধতি প্রকৌশলে বহু বিবর্তন ঘটিয়ে ভেলা থেকে ডোঙা, ডোঙা থেকে বিভিন্ন ধরনের নৌকা এবং নৌকা থেকে ছোটবড় জাহাজ নির্মিত হয়েছে। গ্রন্থকার ভূমিকায় লিখেছেন, ‘জলযান (নৌকা) নির্মাণের কারিগররা এই ভৌগোলিক খণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজও টিকে আছে। আর্থ-সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য অবিরত তারা কাজ করে চলেছে। সেই সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এক দেশজ শিল্পধারার ঐতিহ্য।... আজও বিপুল যান্ত্রিকতার যুগে এই সব কারিগর-প্রযুক্তিবিদরা প্রত্যন্ত গ্রাম্য পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক।’ লেখকের গবেষণালব্ধ বইটিতে বহু ধরনের নৌকার বর্ণনা আছে। আছে নৌশিল্পের বিবর্তন এবং সৌন্দর্যায়ন। মাঝি-মাল্লাদের কথাও বার বার উঠে এসেছে। বইটির সম্পদ পরিশিষ্টগুলি, যেখানে আছে নৌশিল্পীদের সাক্ষাৎকার। আছে নির্মাণ শিল্পের রেখাচিত্র, এবং প্রায় পাতায় পাতায় উনিশ শতকের নানা জলযানের রকমারি চিত্র।

ধাঁধাপুরী

লেখক: সুজন দাশগুপ্ত

২৫০.০০

আনন্দ পাবলিশার্স

হাওড়া থেকে ট্রেনে শ্যাওড়াফুলি যেতে এক জন যাত্রী খেয়াল করলেন যে, ছ’মিনিট অন্তর অন্তর শ্যাওড়াফুলি থেকে ট্রেন হাওড়ার দিকে আসছে। যদি আমরা ধরি যে, হাওড়া-শ্যাওড়াফুলি লাইনের সব ক’টি ট্রেনই সব সময়ে সমান গতিতে চলে এবং দুটো স্টেশনের মধ্যে কোথাও থামে না, তা হলে শ্যাওড়াফুলি থেকে ঘণ্টায় কতগুলি ট্রেন ছাড়ছে? উত্তরটি হল, যাত্রীটি যদি ট্রেনে না উঠে হাওড়া স্টেশনে বসে থাকতেন, তা হলে যে ট্রেনগুলোকে ৬ মিনিট অন্তর আসতে দেখছিলেন, সেগুলোকে ১২ মিনিট অন্তর আসতে দেখতেন। অর্থাৎ শ্যাওড়াফুলি থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৬০/১২ বা ৫টি ট্রেন হাওড়ায় আসছিল।— এ রকমই ৩০১ পৃষ্ঠার আলোচ্য বইটির পাতায় পাতায় বিস্তর মজাদার জটিল ধাঁধা আর গল্পের ছলে ছবিসহযোগে জট খোলার সূত্র দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধাঁধা ব্যাপারটা অনেকের কাছে যেমন প্যাঁচালো, জটিল, তেমনই আবার অনেকের কাছেই জলবৎ তরলং। সে রকমই বইটির লেখক সুজন দাশগুপ্তর কাছেও ব্যাপারটা জলভাত। পাঁচ দশকের আমেরিকা প্রবাসী লেখক যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স, আমেরিকায় পিএইচ ডি। কর্মজীবনের অনেকটা সময় কেটেছে বিখ্যাত গবেষণাগার বেল ল্যাবরেটরিজ-এ। তাঁর ধাঁধাপুরীর গোলকধাঁধা, সত্যি মিথ্যের গোলকধাঁধা, এবং এই বইয়ের নাম অন্য মলাটে বইগুলোকে একত্র করে এই সংকলন। যা পাঠক হাতে পাওয়ামাত্রই মশগুল হয়ে থাকবেন।

...এবং শম্ভু মিত্র

লেখক: অজিত মুখোপাধ্যায়

১০০০.০০

দে পাবলিকেশনস

অজিত মুখোপাধ্যায় সে দিন আকাশবাণীর স্টুডিয়োতে কাজে ব্যস্ত, হঠাৎ স্টেশন ডিরেক্টরের ঘরে তলব। গিয়ে দেখেন শম্ভু মিত্র বসে আছেন, ডিরেক্টর জানালেন যে তাঁকে স্টক মিউজিক ও নানা রকম সাউন্ড এফেক্ট শোনাতে হবে, শোনার পর তিনি যা যা পছন্দ করবেন, সেগুলি একটা টেপ-এ ট্রান্সফার করে দিতে হবে। ‘এটা আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। এত বড় একটা মানুষের সঙ্গে একেবারে একা, মোটামুটি অনেক দিন ধরে কাজটাকে করতে হবে।... কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন শিক্ষা আমি ওনার কাছ থেকে পেয়েছিলাম।’ লিখেছেন অজিতবাবু, তাঁর বইটির দীর্ঘ নাম-প্রবন্ধে। দীর্ঘকাল আকাশবাণী ও দূরদর্শনে চাকরির সুবাদে বহু গুণীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটেছিল তাঁর, ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন অনেকের সঙ্গে, অনেক কিছু শিখেছেনও তাঁদের কাছে। প্রতি মাসে রেকর্ডিংয়ের জন্যে শান্তিনিকেতন যেতে হত, ‘একবার মনে আছে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান ছিল। উনি বললেন আপনারা সকলে এখানে খাওয়া-দাওয়া করে যাবেন... খাওয়া-দাওয়ার থেকে বেশি মজা পেয়েছিলাম কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় কোমরে কাপড় জড়িয়ে হাতা, বালতি নিয়ে জনে-জনে নিজে পরিবেশন করেছিলেন।’ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ সব অভিজ্ঞতা তো ঠাঁই পেয়েছেই এ বইয়ে, সেই সঙ্গে মিশে গিয়েছে স্বাধীনতা, দেশভাগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, জাপানি বোমা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি সংক্রান্ত তাঁর অস্পষ্ট স্মৃতি। ফলে লেখাগুলি ব্যক্তিগত স্মৃতিগদ্যের অলিগলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছে ইতিহাসের সড়কে। আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় এমন স্মৃতিগ্রন্থের বড়ই প্রয়োজন, বিশেষত আত্মবিস্মৃত বাঙালির কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement