লক্ষ্মী যখন আসবে
লেখক: শাঁওলী মিত্র
২০০.০০
সিগনেট প্রেস
এখনও আমরা কত কিছুতেই ভর করে থাকি তাঁর জীবনবিশ্বাসের উপর, যে কোনও জিজ্ঞাসায় আজও তিনি আমাদের আশ্রয়, অবলম্বন। রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে ‘সেই জিজ্ঞাসা থেকেই উৎপন্ন হয় নতুনতর ভাবনার, নতুনতর অনুভবের—’, জানিয়েছেন শাঁওলী মিত্র, ‘সেই থেকেই কিছু কিছু লেখার সূত্রপাত হয়।’ শাঁওলীর এই নতুন বইয়ের বারোটি রচনায় একাধিক স্মৃতিগদ্য যা অনুভবে বিশ্লেষণে অভিনব, তাতে রবীন্দ্রনাটকের আলোচনা, সঙ্গে সে নাটকের চরিত্রাদি, রবীন্দ্রনাথের গান, আর সে গানের শিক্ষক। তাঁকে নিয়ে এই যে স্মৃতির সঞ্চয় থেকে বিশ্লেষণের পথে চলা, তা যেন এক দৈনন্দিনের অনাবিল ভ্রমণ, দিনানুদিনের দগ্ধ জীবনে তাঁর সৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাওয়া। যেমন ‘সুচিত্রাদি, অমল ও শরৎ’ নিবন্ধে শাঁওলীর কলমে ‘ডাকঘর’ নাটকের অনুষঙ্গে উঠে আসে এই কথাগুলি: ‘‘আসলে আমরা তো খুঁজেই পাই না কোন কাজটি আমাদের আসল কাজ। কত তুচ্ছ কাজকে আমরা ‘কাজের কাজ’ আখ্যা দিয়ে জীবন কাটিয়ে দিই। ফিরে ভাবি না সে-কাজ সত্যিই ‘কাজের কাজ’ ছিল কিনা, সেই কাজ আমার বা কারও পক্ষে সত্যিই মঙ্গল বহন করে আনল কিনা।... রবীন্দ্রনাথের অমল তো তাই বলে আমাদের। বলে, কাজ যদি খুঁজে না পায় তাহলে সে আবার কাজ খুঁজে বেড়াবে।’’ দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে ‘জর্জমামা’ লেখাটিতে শাঁওলী তুলেছেন কলকাতায় ’৪৬-এর দাঙ্গার কথা, কী ভাবে রবীন্দ্রগায়ক কলিম শরাফীকে লুকিয়ে রেখেছিলেন শম্ভু মিত্র তৃপ্তি মিত্র আর জর্জ বিশ্বাস, ‘সেই মানসিক বন্ধুত্ব থেকে গিয়েছিল বলেই তো পরে ছেঁড়া তার নাটকে তিনি (দেবব্রত) যুক্ত হয়েছিলেন। চার অধ্যায় নাটকের আবহসংগীত রচনা করেছিলেন।’ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা নিয়ে প্রবন্ধটিতে শাঁওলী খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন ‘তপোবনে একত্র দিনযাপনে যে ছাত্র ও শিক্ষক একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে তা অতি প্রয়োজনীয় বলে তিনি অন্তর থেকে তিনি মানতেন।... তাতে পারস্পরিক সম্পর্কের যে নিবিড়তা তৈরি হয় তা শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অতীব মূল্যবান।’
রবিনাটকের নাট্যকথা
লেখক: সুব্রত ঘোষ
৩৫০.০০
সিগনেট প্রেস
‘তুমি একদল সেরা ছেলেমেয়ে নেবে— একটা আলাদা স্টেজ থাকবে— সেখানে তুমি এক্সপেরিমেন্ট করবে।’ শিশিরকুমার ভাদুড়ীকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি রচনা থেকে প্রসঙ্গটি আমাদের স্মৃতিতে ফিরিয়ে দিয়ে সুব্রত ঘোষ লিখছেন, ‘এই কথাগুলির মধ্য দিয়েই স্পষ্ট বোঝা যায় শিশিরকুমারের নাট্যচিন্তা, তাঁর প্রয়োগদক্ষতা, তাঁর নাট্যনির্মাণ ক্ষমতার উপর রবীন্দ্রনাথের কতখানি আস্থা ছিল।’ সুপরিচিত নাট্যসমালোচক সুব্রতবাবু রবীন্দ্রনাট্য প্রযোজনা, বা কবির যে কোনও রচনার নাট্যরূপের মঞ্চোপস্থাপনার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর বইয়ে। রবীন্দ্রনাথের নাট্যযাত্রাপথের সূচনা থেকে তাঁর নাটক সম্পর্কিত ভাবনা কী ভাবে এগিয়েছে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পরিমণ্ডল থেকে সাধারণ রঙ্গালয়ে কী ভাবে অভিনীত হত তাঁর নাটক, ‘প্রাক-শান্তিনিকেতন পর্ব’ ও ‘শান্তিনিকেতন পর্ব’— তাঁর নাট্যকর্মের এই দুই পর্বের কথা, এমনকী সম্প্রতিকালে তাঁর নাটকের মঞ্চায়ন কোন কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে... সব কিছুরই হদিশ মিলবে এ-বইয়ে। ‘আগামী দিনে যেসব তরুণ নির্দেশক রবীন্দ্রনাট্যে হাত দেবেন তাঁদের কাছে এই বই এক প্রয়োজনীয় পাঠ্য হিসেবে দেখা দেবে।’ জানিয়েছেন জয় গোস্বামী বইটির ভূমিকা-য়।
ঠাকুরবাড়ির সংগীত ভাবনা
সম্পাদক: পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
২০০.০০
আশাদীপ
সাহিত্যের পাশাপাশি ঠাকুরবাড়িতে গান-বাজনার চর্চাও দীর্ঘ কালের। কণ্ঠসঙ্গীতে অনেকেই ছিলেন সুদক্ষ। নানা রকম বাজনাতেও তাঁরা কৃতিত্বের ছাপ রেখে গিয়েছেন— জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যেমন ভাল সেতার-পিয়ানো বাজাতেন, তেমনই এসরাজ ও অর্গানে পোক্ত ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’তে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের পরিবারে গানচর্চার মধ্যেই শিশুকাল হইতে আমরা বাড়িয়া উঠিয়াছি।’’ এই পরিবারে অনেকেই গান লিখেছেন। তাঁরা গানের যথার্থ সমঝদারও বটে। দ্বারকানাথ দেশি-বিদেশি সব ধরনের গানই পছন্দ করতেন। দেবেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী, সরলা, হেমেন্দ্রনাথ— সঙ্গীত রচয়িতার তালিকা দীর্ঘ। তবে অনন্য গুরুদেবের কণ্ঠটিও ছিল অনবদ্য। তাই মহর্ষি অন্য সন্তান-সন্ততিদের নয়, শুনতে ভালবাসতেন রবির গান। বলতেন, ‘‘রবি আমাদের বাংলা দেশের বুলবুল।’’ গানের জন্য পিতৃদেবের স্বীকৃতি, পারিতোষিক-দান রবীন্দ্রনাথকে প্রবল ভাবে প্রাণিত করেছিল। তাই গানের উপর কবির বাড়তি জোর ছিল, আস্থা ছিল, প্রগাঢ় ভালবাসা ছিল— এ তথ্য হয়তো বা কিছু কিছু জানি, কিন্তু জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-দিনেন্দ্রনাথ-ইন্দিরা দেবীচৌধুরাণী বা হেমেন্দ্রনাথের সন্তানসন্ততিদের সঙ্গীত ভাবনার কথা কতটুকু জানি? জানা যাবে, এই দুর্লভ রচনার আলোচ্য সংকলনটিতে। ধারণা গড়ে উঠবে ঠাকুরবাড়িতে যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সঙ্গীতচর্চা চলেছে, সেই ‘সাঙ্গীতিক আবহাওয়া’ সম্পর্কেও।