পুস্তক পরিচয় ১

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদের দীর্ঘশ্বাস

দীপেশের বইটি পড়ে বুঝলাম যে অন্তপ্রায়-ষাট ও আদি-সত্তরের দশকে তাঁদের কাছেও যদুনাথ ছিলেন বিস্মৃতপ্রায়।

Advertisement

জয়ন্ত সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share:

দ্য কলিং অব হিস্টরি/ স্যর যদুনাথ সরকার অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার অব ট্রুথ। দীপেশ চক্রবর্তী। ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান, ৭৯৫.০০

আশির দশকে আমরা যখন ইতিহাসের ছাত্র হলাম, দীপেশ চক্রবর্তীর সুহৃদ গৌতম ভদ্রের ক্লাসে বুঁদ হয়ে গেলাম, তখনও রমেশচন্দ্র মজুমদার, কালিকারঞ্জন কানুনগো, আর পি ত্রিপাঠীদের মতো ঐতিহাসিকদের বাজার যায়নি, কিন্তু স্যর যদুনাথ সরকার তখনই বিস্মৃত, তাঁর চার খণ্ডে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ইতিবৃত্ত বা আওরঙ্গজেবকে নিয়ে লেখা পাঁচ খণ্ডের মেগা-ট্র্যাজেডিটি পড়ে দেখা হয়ে ওঠেনি আর। দীপেশের বইটি পড়ে বুঝলাম যে অন্তপ্রায়-ষাট ও আদি-সত্তরের দশকে তাঁদের কাছেও যদুনাথ ছিলেন বিস্মৃতপ্রায়। সৈয়দ নুরুল হাসান, ইরফান হাবিব, আতহার আলির মতো আলিগড়-ঐতিহাসিকদের গবেষণা তখনই এক প্রাজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসী আলবাট্রসের মতো তার সুবিশাল ডানা মেলে দিয়েছে মুঘল ইতিহাসের উপর, সেই পক্ষপুটের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলেন ‘স্যর’ যদুনাথ, মৃত্যুর ছয় বছর আগে রাঙ্কে, মমসেন, ট্রাভেলিয়ান, ক্রোচে, হাইজিঙ্গা-র মতো নক্ষত্রদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যিনি পেয়েছিলেন অ-মার্কিন হিসেবে আমেরিকান হিস্টরিকাল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্মানিক সদস্যপদের বিরল সম্মান। এই বিস্মরণের ফলে ঢাকা পড়ে গেল ভারতে ইতিহাস চর্চার যে ‘হয়ে-ওঠার’ ইতিহাস, দীপেশের বইয়ে বিধৃত সেই কাহিনিই।

Advertisement

ষাটের দশক থেকেই ভারতীয় ইতিহাস চর্চার ‘তরুণ তুর্কিরা’ সমালোচনায় মুখর হন যে ‘ব্যক্তি’ ও ‘চরিত্র’-এর প্রতি অত্যধিক ঝোঁক দেওয়ার দরুন যদুনাথ ইতিহাসের— বিশেষত মুঘল ইতিহাসের— চালিকাশক্তি হিসেবে সমাজ ও অর্থনীতির গঠনগত কারণগুলিকে এক রকম অবহেলাই করেছিলেন। এই ধরনের ঝোঁক যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকদের লেখাতেও ছিল, তাই এমন কি হতে পারে যে সেই স্বার্থান্ধ ইতিহাসচিন্তার ছায়াতেই আচ্ছন্ন হয়েছিলেন যদুনাথ? না কি তাঁর মাথায় ছিল সাম্রাজ্য ও জাতি বিষয়ে অন্যতর, জটিলতর কোনও চিন্তাকাঠামো— যেখানে ‘ব্যক্তি’ ও ‘নায়কচরিত্র’রা গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব? এই প্রশ্নের উত্তর এই বইয়ে খোঁজার চেষ্টা করেছেন দীপেশ, যা রিথিংকিং ওয়র্কিং ক্লাস হিস্ট্রি-র পর তাঁর প্রথম মোনোগ্রাফ, প্রভিনশিয়ালাইজিং ইয়োরোপ বা হ্যাবিটেশনস অব মডার্নিটি-র মতো প্রবন্ধসমাহার নয়। এ বই যদুনাথের জীবনী নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞান চর্চার নিবিষ্ট বিশ্লেষণে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ অর্ধশতাব্দীর বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলের এক উন্মোচন, যে পরিমণ্ডলে বহু কষ্টে, বহু সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতে ইতিহাস গবেষণা ও রচনার প্রয়াসটি ধীরে ধীরে এক কলকোলাহলময়, তর্কসঙ্কুল জনপরিসর থেকে এক পেশাদার, অ্যাকাডেমিক চর্চার সুরক্ষিত বলয়ে জায়গা করে নিল।

এই সংগ্রামের কেন্দ্রে ছিল বহুবিধ বিষয়— তথ্যের (অতএব ‘সত্যের’) প্রতি ঐতিহাসিকের একনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা, দেশপ্রেম বা আঞ্চলিক স্বাজাত্যবোধের তাগিদে অতিকথন বা বীরপূজার প্রলোভন বর্জন, সর্বোপরি আর্কাইভের ধারণাটিই যখন দূরায়ত, সেই সময়ে গবেষণার জন্য অত্যাবশ্যক সরকারি নথিপত্রগুলিকে হরেক বিধিনিষেধের বেড়া ডিঙিয়ে ভারতীয় গবেষকদের নাগালে এনে দেওয়ার অতীব দুরূহ কাজ। সেই সংগ্রামের পুরোধাপুরুষ যদুনাথ, আর সহকারী তাঁর আজীবন সুহৃদ ও সহচিন্তক, পুণের অনতিদূরে কামশেট-বাসী মরাঠি ঐতিহাসিক গোবিন্দ সখারাম সরদেশাই, ১৯০৭ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে যাঁরা পরস্পরকে লেখেন প্রায় আড়াইশো চিঠি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগেনস্টাইন লাইব্রেরিতে একটি বইয়ের পরিশিষ্ট থেকে দীপেশ হঠাৎ আবিষ্কার করেন এই পত্রপ্রবাহের অস্তিত্ব। ব্যক্তিগত খবরাখবর বিনিময়ের পাশাপাশি তার মধ্যে ধরা আছে ইতিহাসের আকর ও তথ্য, প্রামাণিক ও নির্ভরযোগ্য দলিল খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দুই ইতিহাসবিদের মতামত এবং তার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে ইতিহাস চর্চার এক পেশাদারি ও প্রাতিষ্ঠানিক সারস্বত পরিসরের মধ্যে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেওয়ার এক অজানা ইতিহাস। এই ইতিহাসের যাত্রাপথ, অবশ্যই সহজ হয়নি। যদুনাথ আর সরদেশাইয়ের প্রতিপক্ষও ছিল বহুবিচিত্র— কখনও পুণের ভারত ইতিহাস সংশোধক মণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বনাথ কাশীনাথ রাজওয়াড়ে বা তাঁর শিষ্য দাত্তো বামন পোৎদার, কখনও ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফাত আহ্‌মদ খান, আর শেষের দু’দশকে নবগঠিত ইন্ডিয়ান হিস্টোরিকাল রেকর্ডস কমিশনের সেক্রেটারির স্থলাভিষিক্ত সুরেন্দ্রনাথ সেন, যাঁর মাধ্যমে ঘটে যাবে সরকারি নথিপত্রকে এলিট ঐতিহাসিকদের কুক্ষি থেকে মুক্ত করে আমজনতার নাগালে নিয়ে আসার এক নিঃশব্দ ‘জাতীয়তাবাদী/ গণতান্ত্রিক’ বিপ্লব।

Advertisement

দুই সুহৃদ। যদুনাথ সরকার (বাঁ দিকে) ও গোবিন্দ সখারাম সরদেশাই (ডান দিকে)

যে যদুনাথের মাধ্যমে ভারতে পেশাদার ইতিহাস চর্চারই এক জীবনকাহিনি লিখেছেন দীপেশ চক্রবর্তী, তাঁর নিজের জীবনচর্যা এবং ইতিহাস চর্চার নীতিগুলির মধ্যে সাযুজ্য চমকপ্রদ, বস্তুত একটি বাদ দিয়ে অন্যটি বোঝা অসম্ভব। এক কঠোর ভাবে তথ্যভিত্তিক, সত্যবদ্ধ ইতিহাস লেখার তাড়না ছিল যদুনাথের কাছে নিছক পেশা নয়, বরং এক ‘কলিং’, এক গভীর ভাবে আত্তীকৃত আহ্বান বা সাধনা, যার মাধ্যমে তিনি উপাসনা করেছিলেন এক সর্বজনীন সত্যের, ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্টে যার ভূমিকা ছিল পরিব্যাপ্ত। আকরের সত্যতা, তথ্যের যাথার্থ্য নিয়ে এই আপসহীন খুঁতখুঁতুনির এক অনবদ্য নিদর্শন আছে শিবাজি অ্যান্ড হিজ টাইমস-এ (১৯২০), যেখানে ১৬৬৬ সালে আওরঙ্গজেবের কয়েদখানা থেকে পালাচ্ছেন শিবাজি, মুঘলরা যখন খবর পেয়ে পিছু ধাওয়া করল তাঁর, তখন তিনি পেরিয়ে গিয়েছেন কুড়ি ঘণ্টার পথ। দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯২৯) কুড়ি ঘণ্টা হয়ে গেল চোদ্দো, যদুনাথ আসলে নবলব্ধ সব ম্যাপ ছানবিন করে নিজের আঁকজোক শুধরে নিয়েছেন যে!

অনস্বীকার্য যে, যদুনাথ ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মানস-সন্তান, বস্তুত ইউরোপীয় সারস্বত চর্চার সর্বোত্তম আদর্শগুলিকেই তিনি গ্রহণ করেছিলেন, যার অন্য দিকটি ছিল ইতিহাস চর্চার ভারতীয় জগৎটিকে নস্যাৎ করা। গণ-আন্দোলনের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিও ছিল তাঁর কাছে বিষবৎ পরিত্যাজ্য, আর তার নেতা গাঁধী তো ‘গুজরাতি বানিয়ার এক উন্মাদ সন্তান’, ব্রিটিশ সিংহকে যিনি ল্যাজে খেলাচ্ছেন। এই ধরনের মনন, এমত অবস্থানের জন্য বিশ শতকের প্রথমার্ধ ছিল বড় ভুল সময়, যদুনাথের উপর তাই অনিবার্য ভাবেই দেগে গেল এক ব্রিটিশ-বান্ধব, অ-দেশপ্রেমিকের তকমা। দীপেশ অতি যত্নে দেখিয়েছেন এক আপসহীন ঐতিহাসিককে, যাঁর সত্যবদ্ধ অভিমান তাঁকে ছদ্ম দেশপ্রেম থেকে দূরে সরিয়ে রাখে— যার ফলে সমসাময়িক বহু ঐতিহাসিকের সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, বাংলার প্রতাপাদিত্য বীর-টির কিছু নন, ভুঁইফোড় জমিদার মাত্র, যিনি কোনও দিন সম্মুখসমরে মুঘলদের সামনে পড়েননি। শিবাজিকে মরাঠা ঐক্যের সংগঠক এবং ভারতীয় ইতিহাসের এক মহানায়ক হিসেবে স্বীকার করে নিয়েও তাঁকে নিয়ে মিথ রচনা ও অতিকথনের সমালোচনায় যদুনাথ ছিলেন স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক, জাতপাত, আঞ্চলিক আনুগত্য, হিন্দু-মুসলিম বিরোধের অসংখ্য প্রাকার যে প্রকৃত ‘জাতিগঠন’-এর কাজে শিবাজির অন্তরায় হয়েছিল, সে কথা তিনি রেখেঢেকে বলেননি। এ নিয়ে মরাঠা আঞ্চলিক গৌরবগাথার কথক ঐতিহাসিকদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল মারাত্মক। কিন্তু এই ধরনের বিরোধের ফলেই অবশেষে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে ইতিহাস চর্চায় আকরের নিরপেক্ষ মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা, আর সেই সঙ্গে আলাদা হতে শুরু করে লোকপ্রিয় ইতিহাস আর অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের গতিরেখা।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদের কিছুমাত্র অভাব যদুনাথের ছিল। মধ্য-আঠেরো শতক থেকেই মুঘল সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোম্পানি তাঁদের বেবাক ঠকাতে শুরু করে, সেই শঠতা ও প্রবঞ্চনার নির্মম উন্মোচনে যদুনাথের হাত কাঁপেনি। দীপেশ দেখিয়েছেন, মুঘল, মরাঠা আর রাজপুত ইতিহাসে তাঁর আজীবন অবগাহনের পিছনে কী ভাবে কাজ করেছিল প্রাক-ব্রিটিশ ইতিহাসের মধ্যে এক ঐক্যবদ্ধ, আধুনিক ভবিষ্য-ভারতের সম্ভাবনার বীজগুলিকে খুঁজে বেড়ানর অদম্য তাগিদ। সতেরো শতকের উপান্তকাল থেকে শুরু করে পরের অর্ধশতাব্দীতে এই অঙ্কুরের সামূহিক বিনাশ শুধু ভারতের ইতিহাসের নয়, ঐতিহাসিকেরও ট্র্যাজেডি, আর তাই ‘সাম্রাজ্যের সন্তান’ স্যর যদুনাথ সরকারের সমগ্র কর্মকৃতির মধ্যে, তাঁর সত্যবদ্ধ অভিমানের সমস্ত প্রকাশের মধ্যেও কান পাতলে শোনা যায় এক জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকের প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাস।

খুব চমৎকৃত হয়ে লক্ষ করি, দীপেশের এইটিই সম্ভবত প্রথম বই, যেখানে ঐতিহাসিক হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত ‘আমি’-র কণ্ঠস্বর অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যে যদুনাথের ইতিহাসদর্শনের সঙ্গে তিনি সহমত না হয়েও শ্রদ্ধাশীল, তাঁর সংগ্রাম ও সাধনার সঙ্গে তাঁর সহমর্মিতা বইটির ভাষায় স্পষ্ট। সে ভাষায় মাঝে মাঝে, মুহূর্তকালের জন্য হলেও, শোনা যায় এক প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ ঐতিহাসিক হিসেবে তাঁরও মৃদু দীর্ঘশ্বাস, যাঁর কম্পাঙ্ক ‘হায়’ (Alas) ইত্যাদি শব্দের অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে।

এ বই যেন উত্তর-আধুনিক বিশ্বের এক পুরোধা ঐতিহাসিকের সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিকতার অন্বেষক, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মানস-সন্তান, এক প্রয়াত, বিস্মৃত ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত বোঝাপড়া ও কথোপকথন, যার মধ্যে দিয়ে দুজনেই বুঝতে চেষ্টা করেন একটি গোটা শতাব্দী ধরে একটি ডিসিপ্লিনের বিবর্তনের পথে বিবিধ সম্ভাবনা ও গতিরেখার আবির্ভাব ও অন্তর্ধান। বইয়ের শেষ পরিচ্ছেদে ১০ লেক টেরাসের যদুনাথ ভবনে লেখক ও তাঁর অধীত ঐতিহাসিকের এক কল্পিত কথোপকথনে এই সম্ভাবনাসমূহ ও তাদের মৃত্যুর এক সংক্ষিপ্তসার আছে। সাবজেক্ট এবং লেখকের মধ্যে এমন কথোপকথন আর এক প্রাজ্ঞ ইতিহাসবিদ নেটালি জিমন ডেভিসের উইমেন অন দ্য মার্জিনস-এও পড়েছি, আলাপচারির গ্রন্থনাটি অনবদ্য, দুই প্রজন্মের দুই ঐতিহাসিকের কথাবার্তার আশেপাশে চকিত উঁকি দিয়ে যান একটি পরিচিত গবেষণাকেন্দ্রের পরিচিত ও প্রিয় চরিত্রেরা। আলোচ্য বইয়ের ওই দশটি পাতা পড়লে যদুনাথ মুচকি হাসতেন কি না জানি না, তবে, নিশ্চিত, সরদেশাইকে চিঠি লিখতেন, ‘বুঝলে নানা, ছোকরা ফার্সিটা জানে না বটে, তবে ক্যারেকটারের ব্যাপারটা বোঝে নেহাত মন্দ নয়’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement