দ্য হিস্টরি অব পুরী
ব্রজকিশোর ঘোষ, সম্পা: শেখর ভৌমিক
৪০০.০০
প্রাপ্তি/পরি: আশাদীপ
মেরেকেটে ১৭০ বছর আগের কথা। ১৮৪৮ সালে তাঁর বইতে ব্রজমোহন ঘোষ পুরীর রথযাত্রার হিসেব দিচ্ছেন। কাঠ, দড়িদ়ড়া, রং, রূপকার, ঠাকুরের ভোগ সব মিলিয়ে ১৪৫৩ টাকা খরচ। এটুকুতেই থামলেন না তিনি। আরও জানালেন, কোম্পানি বাহাদুর এই খরচ বাবদ ২৪০০ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। পুরীর রাজা ও পাণ্ডারা প্রায় ৯৪৬ টাকা পকেটস্থ করেছেন।
বঙ্গসন্তান ব্রজকিশোরের বইটিই পুরী নিয়ে কোনও ভারতীয়ের প্রথম ইংরেজি বই। তার দশ বছর আগে অবশ্য বাংলায় ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা’ বেরিয়ে গিয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে অনেকেই কর্মসূত্রে ওড়িশা গিয়েছেন। সরকারি চাকরির সুবাদে ব্রজকিশোরও। বাঙালিই তো আলোকপ্রাপ্ত, ইংরেজি শিক্ষার কার্যকারণ বোধে পুষ্ট। ফলে ব্রজকিশোর জানাচ্ছেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হরেক দুর্নীতি। পাণ্ডাদের বাড়িগুলি অস্বাস্থ্যকর, মহিলাদের সঙ্গে তারা ভব্য আচরণ করে না, তীর্থযাত্রীরা অসুস্থ হলে তাদের রাস্তায় মৃত্যুমুখে ফেলে পালিয়ে যায়। জায়গাটা শোচনীয়। অবশ্যই সব বাঙালির মত এ রকম নয়, ভূমিকায় তার আলোচনা আছে। লেখক জানাচ্ছেন, এখানকার লোকেরা নৌকোয় করে ৩৮ মাইল দূর থেকে কড়ি নিয়ে আসেন। সেই কড়ি পুড়িয়ে কলিচুন হয়। রম্ভা বলে একটা জায়গা থেকে পাথর আনা হয়। ব্রজকিশোর জানতেন না, চিল্কার সৌজন্যে ভবিষ্যতে এই রম্ভা হয়ে উঠবে বাঙালির অন্যতম সফরস্থান।
পুরী নিয়ে ঔপনিবেশিক বাঙালির এক ধরনের দৃষ্টিকোণ জানতে এই বই তাই অবশ্যপাঠ্য। ইতিহাস অবশ্য এর মধ্যে বদলে গিয়েছে। জগন্নাথ কী ভাবে ওড়িয়া ভাষা, জাতীয়তাবাদে প্রভাব ফেললেন তা নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। জার্মান ইতিহাসবিদ হেরমান কুলকে যেমন দেখিয়েছেন, ইংরেজদের ওড়িশা দখলের আগে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতরা চিঠি পাঠিয়ে পুরীর পাণ্ডাদের জানিয়েছিলেন, ইংরেজরা পরমতসহিষ্ণু। জগন্নাথের কোনও অসুবিধা হবে না। শেখর ভৌমিকের ভূমিকা ও চমৎকার সম্পাদনা এই দুষ্প্রাপ্য বইয়ের মর্যাদা বাড়িয়েছে। বইয়ে সংযুক্ত হয়েছে অনেকগুলি মঠের আলোকচিত্র, আর থুইলিয়ারের পুরীর মানচিত্র (১৮৪০-৪১), যেখানে মঠগুলির অবস্থান স্পষ্ট।