কেন্দ্রের মধ্যবর্তী আর্থিক সমীক্ষা পেশ

৫.৫% বৃদ্ধির পূর্বাভাস

‘আচ্ছে দিন’ আসছে। পরপর দু’বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে থাকার পরে চলতি আর্থিক বছরে তা ৫.৫ শতাংশে পৌঁছবে। মাঝ বছরের আর্থিক সমীক্ষায় আজ তেমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। তবে ‘আচ্ছে দিন’-এর পূর্বাভাস দিলেও খুব তাড়াতাড়ি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে কেন্দ্র নিজেও আশা করছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০২
Share:

সমীক্ষা পেশের পরে। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

‘আচ্ছে দিন’ আসছে।

Advertisement

পরপর দু’বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে থাকার পরে চলতি আর্থিক বছরে তা ৫.৫ শতাংশে পৌঁছবে। মাঝ বছরের আর্থিক সমীক্ষায় আজ তেমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক।

তবে ‘আচ্ছে দিন’-এর পূর্বাভাস দিলেও খুব তাড়াতাড়ি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে কেন্দ্র নিজেও আশা করছে না। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাস, অর্থাৎ এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৫ শতাংশই। অর্থ মন্ত্রকের হিসেব, গোটা বছরেও তা একই থাকবে। যার অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও বৃদ্ধি খুব বেশি হারে এগোবে বলে অর্থ মন্ত্রকও আশা করছে না। কারণ অবশ্যই শিল্পে খরা। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন ৪.২% হারে কমেছে। অবশ্য, অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, আগামী কয়েক বছরেই বৃদ্ধি ৭ থেকে ৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

Advertisement

আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-পূর্বাভাস দিয়েছিল, মাঝ বছরের আর্থিক সমীক্ষাও সেই পথেই হেঁটেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বলেছিল, বৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। গড় বৃদ্ধির হার ৫.৫%। বাজেটের আগে আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, বৃদ্ধির হার ৫.৪ থেকে ৫.৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বছরের অর্ধেক পেরোনোর পরেও অর্থ মন্ত্রকের আশা কমের দিকেই।

নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শিল্পমহলে আশা ছড়িয়েছিল, দ্রুত আর্থিক সংস্কারের কাজ হবে। সরকারের ছ’মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরে শিল্পমহল কিছুটা হলেও অধৈর্য। বিনিয়োগকারীরা এখনও নতুন লগ্নি করতে শুরু করেননি। আজ অর্থ মন্ত্রকও মেনে নিয়েছে, লগ্নি যথেষ্ট হারে আসছে না। নতুন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “বেসরকারি লগ্নি বাড়ার কোনও স্পষ্ট ছবি দেখা যাচ্ছে না।” ১৮ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প আটকে রয়েছে। যার ৬০ শতাংশই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। তবে স্বস্তির কারণ মূল্যবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্যে নেমে এসেছে। এই ষাণ্মাসিক আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মাস খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.১ থেকে ৫.৮ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।

অরুণ জেটলির সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা। সুব্রহ্মণ্যনের অবশ্য দাবি, সরকার লক্ষ্যমাত্রার গণ্ডি পেরোবে না। কিন্তু ঘাটতিকে বেঁধে রাখতে ব্যয় ছাঁটাই করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সমস্যা হল, বেসরকারি শিল্প সংস্থাগুলি লগ্নি করছে না। কাজেই কেন্দ্রকেই লগ্নি ও চাহিদা বাড়াতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি কমায় সরকার স্বস্তি পেলেও সমস্যা হল, কর আদায়ও কমেছে। কর বাবদ আয়ের ক্ষেত্রেও জেটলি অনেক বেশি আশা করে ফেলেছিলেন বলে আর্থিক সমীক্ষার ইঙ্গিত।

মনমোহন সরকারের শেষ জমানায় বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি অর্থনীতির সবথেকে বড় চিন্তার কারণ হয়েছিল। এ দিনের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ঘাটতি চলতি বছরে ২ শতাংশে থাকবে। সোনার আমদানি নভেম্বরে ৫০০% বেড়েছে। ফলে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু তেলের দাম কমে যাওয়ার সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, মার্কিন অর্থনীতির ওঠা-পড়া ভারতীয় অর্থনীতিতে আর সেই ভাবে ধাক্কা দিতে পারছে না।

খুশি শেয়ার বাজার। মুম্বই থেকে সংবাদ সংস্থার খবর: দেশের অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত মেলায় শুক্রবার আরও ২৪৫ পয়েন্ট উঠে গেল সেনসেক্স। থিতু হল ২৭,৩৭১.৮৪ অঙ্কে। চলতি অর্থবর্ষে ৫.৫% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনার সাহস জুগিয়েছে বলে দাবি বাজার সূত্রের। পাশাপাশি ধুঁকতে থাকা বিমান সংস্থা স্পাইসজেট আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে তৈরি হওয়া প্রত্যাশাও জ্বালানি জোগায় বাজারে। এক ধাক্কায় প্রায় ২০% বেড়ে ১৫.৮০ টাকায় থিতু হয় সংস্থাটির শেয়ার দর। তবে এ দিন বাজার বাড়ার পেছনে আরও কতকগুলি কারণ কাজ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, ফেড সুদ না-বাড়ানোয় এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার চাঙ্গা হওয়া।

ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম অবশ্য এ দিন ১৯ পয়সা পড়েছে। ফলে বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলার দাঁড়িয়েছে ৬৩.৩০ টাকায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement