স্বর্ণশিল্পকে উৎসাহ দিতে সোনা আমদানির উপর রাশ কিছুটা শিথিল করল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পাঁচটি বেসরকারি ব্যাঙ্ককে সোনা আমদানির অনুমতি দিল তারা।
চিনের পরেই সোনার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। এই সিদ্ধান্তে তাই খুশি স্বর্ণশিল্পমহল। তবে আমদানির উপর রাশ আলগাই থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পরে নতুন সরকারই নেবে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। অবশ্য ইতিমধ্যেই চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার জেরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছে শিল্পমহল।
আমদানির অনুমতি পাওয়া নতুন ৫টি ব্যাঙ্ক হল: এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক এবং ইয়েস ব্যাঙ্ক। সোনা আমদানির জন্য যে
৮০ ঃ ২০ শর্ত গত জুলাইয়ে চালু হয়েছিল, তার আওতাতেই ৫টি ব্যাঙ্ককে আমদানির অনুমতি দেওয়া হল। ওই শর্ত অনুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে মোট আমদানির ২০ শতাংশ রফতানি করতে হয় সোনা বা গয়নার আকারে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, এত দিন মাত্র ৬টি ব্যাঙ্ক (মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত) এবং তিনটি সরকারি বাণিজ্য সংস্থা সোনা আমদানি করতে পারত। কিন্তু এর জেরে সোনার জোগানে টান পড়ে, বেড়ে যায় চোরাপথে আমদানি। দাবি ওঠে আমদানি বাড়িয়ে আইনি পথে সোনার জোগান বৃদ্ধির।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের জেরে প্রতি মাসে সোনা আমদানি ২০ টন থেকে বেড়ে ৪০ টনে দাঁড়াবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে শিল্পমহল। নিষেধাজ্ঞা জারির আগে তা ছিল ৭০ টনের মতো। তাদের আশা, বিয়ের মরসুমে সোনার জোগান বাড়লে তার দামও কমতে পারে। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ফেডারেশন-এর পরিচালন পর্ষদের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা এ প্রসঙ্গে বলেন, “এর সঙ্গে আরও ৫টি
ব্যাঙ্ক যোগ হলে সোনা আমদানির পরিমাণ বাড়বে এবং তাতে গয়না ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।” একই মত স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে-র। তিনি জানান, “এই সিদ্ধান্তে গয়না শিল্পের ভালই হবে। আরও বেশি সংখ্যক ব্যাঙ্ককে সোনা আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি আমরা অনেক দিন ধরেই করছিলাম। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপকে তাই স্বাগত জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিতে রাশ টানতেই সোনার আমদানি শুল্ক ২% থেকে দফায় দফায় বাড়িয়ে ১০% করেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে বলা হয়, আমদানির অন্তত ২০% ব্যবহার করতে হবে গয়না বা সোনা রফতানিতে। এর সুরাহা চেয়েই সম্প্রতি সনিয়া গাঁধীরও দ্বারস্থ হয় অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশন।
সনিয়াও স্বর্ণশিল্পের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা তোলার আর্জি জানিয়েছিলেন। তবে গোড়ায় এ নিয়ে ভিন্ন মতই প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। যুক্তি ছিল, চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে পুরোপুরি রাশ না-টানা পর্যন্ত নীতি বদল সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই অবশ্য এই ঘাটতি, এবং পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। আগামী ৩১ মার্চ চলতি ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষ শেষ হলে লেনদেন ঘাটতি ৪,০০০ কোটি ডলারে (২,৪৬,৪০০ কোটি টাকা) দাঁড়াবে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। গত বছর তা ৮,৮০০ (৫,৪২,০৮০ কোটি টাকা) কোটি ডলার ছুঁয়ে নজির গড়ার পরেই সোনা আমদানি নিয়ে কড়াকড়ি করে কেন্দ্র।