রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঘাড়ে চেপে বসা অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ক্রমশ বেড়ে চলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তবে বৃদ্ধির চাকায় গতি ফিরলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
চলতি আর্থিক বছর শেষের মুখে এবং নতুন অর্থবর্ষের প্রথম দিনে (১ এপ্রিল) ঋণনীতি ঘোষণার ঠিক আগে নয়াদিল্লিতে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই উদ্বেগের কথা জানান রাজন। তাঁর কথায়, “ক্রমশ বাড়তে থাকা অনুৎপাদক সম্পদ অবশ্যই মাথাব্যথার কারণ। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে। তবে অর্থনীতির চাকায় কিছুটা গতি ফিরতে শুরু করায় আশা করি এই সমস্যার সমাধান মিলবে।”
এই মন্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। কারণ, রাজন যখন এই কথা বলছেন, তখন প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে শিল্পমহল সমেত সারা দেশ। তুমুল জল্পনা চলছে আগামী ঋণনীতি ঘোষণার সময়ে তিনি রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যে-হারে আরবিআইয়ের কাছ থেকে ধার নেয়) কমিয়ে সুদ হ্রাসের পথ প্রশস্ত করবেন কি না, তা ঘিরে। তার উপর আবার এই প্রথম ওই নীতি দু’মাস পরে ফিরে দেখছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর আগে তা দেড় মাস অন্তর পেশ করত তারা। শুধু তাই নয়, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানোর পাশাপাশি শীর্ষ ব্যাঙ্ক যাতে বৃদ্ধির হার চাঙ্গা করাকেও একই রকম গুরুত্ব দেয়, তার জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে চাইছে কেন্দ্র। তাই এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কৌশল কী হবে, তার কিছুটা আঁচ ১ এপ্রিলই মিলবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ঋণনীতির ঠিক আগে রাজন যে-ভাবে অনুৎপাদক সম্পদের কথা তুলেছেন, তা-ও চোখ টেনেছে অনেকের। কারণ, মাত্র ছ’মাসের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে তার পরিমাণ বেড়েছে ২৮.৫%। ২০১৩ সালের মার্চে যা ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা ছিল, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৩৬ লক্ষ কোটিতে। চলতি মাসেই প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি (এআরসি) বা সম্পদ পুনর্গঠন সংস্থার কাছে বিক্রি করার কথা জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম তা করছে দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কটি। একই পথে হাঁটছে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও।
দেশে শিল্পের হাল খারাপ হওয়ায় ব্যাঙ্কের ধার শোধ করতে পারেনি বহু সংস্থাই। যার ফলে চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে স্টেট ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে ১১,৪০০ কোটি টাকার। তার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭,৭৯৯ কোটি। শুধু তা-ই নয়, মূলত এর জেরেই চলতি তৃতীয় ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা আগের বারের থেকে কমে গিয়েছে ৩৪%। উল্লেখ্য, প্রতি ত্রৈমাসিকে নিট মুনাফা হিসাব করার সময়ে অনুৎপাদক সম্পদ বাবদ তুলে রাখা টাকা (প্রভিশনিং) ব্যাঙ্কগুলিকে মোট মুনাফা থেকে বাদ দিতে হয়।