অবশেষে মিলল রফাসূত্র। তুলে নেওয়া হল ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক। ফলে আগামী কাল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা চার দিনের ধর্মঘট আর হচ্ছে না।
যে-সমস্ত শর্তে সোমবার রফা হয়েছে, সেগুলি হল:
• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের বেতন বাড়বে ১৫%।
• প্রতি মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার ব্যাঙ্ক পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
• প্রথম এবং তৃতীয় শনিবার অর্ধ দিবস ছুটি উঠে গিয়ে পুরো সময় ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে।
• এপ্রিল মাসের মধ্যেই নতুন বেতন চুক্তি সই হবে।
• চুক্তি কার্যকর ধরা হবে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর থেকে।
নতুন বেতন চুক্তি কার্যকর করতে ব্যাঙ্ক শিল্পে খরচ বাড়বে ৪৭২৫ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, বেতন সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে গত আড়াই বছর ধরে কর্তৃপক্ষ এবং ইউনিয়নগুলির মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। এ দিন তা শেষ হল। অবশ্য এক সময়ে বেতন সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) ১৩ শতাংশের বেশি বেতন বাড়াতে নারাজ ছিল। অন্য দিকে ইউনিয়নগুলির যৌথ সংগঠন ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ) ১৯.৫০ শতাংশের নীচে বেতন বৃদ্ধি মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল। এই পর্যায়েই টানা চার দিন ধর্মঘট করার ডাক দিয়েছিল ইউনিয়নগুলি। চলতি মাসের ২৫ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ওই ধর্মঘট হওয়ার কথা ছিল। এর ফলে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেটের দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার উপক্রম হয়।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মুম্বইয়ে বৈঠকে বসে আইবিএ এবং ইউ এফ বি ইউ। ইউএফবিইউ-র অন্যতম শরিক এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, “ব্যাঙ্ক শিল্পে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিই আমরা মেনে নিলাম। এর ফলে যতটা বেতন বাড়বে, তাতে আশা করি ব্যাঙ্ককর্মী-অফিসাররা খুশি হবেন।”
বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি এ বার সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করার নিয়ম চালু করার ব্যাপারে জোরালো দাবি তুলেছিল ইউনিয়নগুলি। ঠিক হয়েছে, মাসে দু’টি শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। বাকি দু’টি শনিবার পুরো সময় কাজ করবেন কর্মী এবং অফিসারেরা। এর ফলে এত দিন ধরে প্রতি শনিবার অর্ধ দিবস ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার যে-নিয়ম চালু ছিল, তা উঠে গেল। অবশ্য এই নিয়ম বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্কগুলিও মানবে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। এ ব্যাপারে রাজেনবাবু বলেন, “আমাদের চুক্তিতে যে-সব ব্যাঙ্ক শরিক হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হবে। আইএনজি বৈশ্য, কারুর বৈশ্য ব্যাঙ্কের মতো কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক এর আওতায় রয়েছে। তবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক বা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো বড় বড় বেসরকারি ব্যাঙ্ক এই চুক্তির শরিক নয়। অবশ্য আমার আশা, বাকি ব্যাঙ্কগুলিও এই নিয়ম চালু করবে।”
প্রতি মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার ব্যাঙ্ক পুরোপুরি বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তে মোটামুটি খুশি ইউনিয়নগুলি। অল ইন্ডিয়া স্টেট ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াই সুদর্শন বলেন, “সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করার যে-দাবি আমরা করেছিলাম, এ বার অন্তত তার ৫০% আদায় করতে আমরা সফল হয়েছি। এটাকে ভাল সূচনা অবশ্যই বলা যেতে পারে। পরবর্তী কালে বাকি ৫০ শতাংশ দাবি আদায়েরও আমরা চেষ্টা করব। আমার আশা, আলোচনার মাধ্যমে অন্য দাবিগুলিও মেটানো যাবে।”