নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে বেসরকারি সংস্থার জমি ‘দখল’ করে রাস্তা তৈরি করছে কে এম ডি এ। অভিযোগ, রাস্তার কাজের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা রোল্টা ইন্ডিয়ার জমির অস্থায়ী বেড়া ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার জন্য তড়িঘড়ি রাস্তা তৈরি করতে গিয়েই ঘটেছে এই কাণ্ড। আর সেই সিদ্ধান্তের মাশুল গুনছে সংস্থা। এই রোল্টা ইন্ডিয়াই কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি প্রকল্পের অন্যতম লগ্নিকারী।
নোনাডাঙাতেই তৈরি হচ্ছে আর একটি প্রকল্প। বিজ্ঞানী মণি ভৌমিকের নামে মণি ভৈমিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে রোল্টার জমির উপরেই কাজ শুরু করে দিয়েছে কেএমডিএ। সমস্যার সূত্রপাত এখানেই। সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়তোষ ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, জমির মালিক রোল্টা নয়, কেএমডিএ। এই যুক্তি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তাদের দাবি, রীতিমতো স্ট্যাম্প ডিউটি মিটিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করেছে সংস্থা। সমস্যার সমাধানে কেএমডিএ-কে একাধিক চিঠিও দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। অভিযোগ, তার উত্তর দেয়নি কেএমডিএ।
২০১০ সালে ২৫০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে জমি লিজে নিয়েছে ব্যবসা ৪৪ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা সংস্থা রোল্টা। চার বছর কেটে গেলেও ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাবে নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে প্রকল্প শুরু করতে পারেনি রোল্টা-সহ তিনটি সংস্থা। খোদ তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মতো নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি কেএমডিএ। ফলে এই পার্কে আটকে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও কমপক্ষে ১২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ।
নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ২০১০ সালে জমি পেয়েছে এইচ এস বি সি, রোল্টা ও এইচ সি এল। রাজ্য সরকারের নির্ধারিত দামেই জমি লিজে নেয় তিন সংস্থা। একর প্রতি এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা দরে জমি পায় তারা। ২০০৮-’০৯ সালের মন্দা কাটিয়ে সে সময়ে ছন্দে ফিরছিল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। স্থগিত হয়ে যাওয়া সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ফের বাস্তবায়িত করতে চাইছিল সংস্থাগুলি। একই পথে হাঁটতে চাইছিল এইচ এস বি সি, রোল্টা এবং এইচ সি এল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী জমি পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্প চালু করে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে প্রকল্পের কাজ এগোনো যায়নি বলে অভিযোগ সংস্থাগুলির।
নোনাডাঙায় সাড়ে তিন একর জমির উপর ক্যাম্পাস তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে এইচ এস বি সি। জমি নেওয়ার সময়ে তারা জানিয়েছিল, চালু হওয়ার পরে এখানে কর্মী সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজার। ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নোনাডাঙায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে ক্যাম্পাস গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে রোল্টা ইন্ডিয়ার। পাঁচ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। দেড় একর জমির উপর নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে চায় এইচসিএল।
বিশেষ আর্থিক অঞ্চল নয়। ছোট ছোট জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়ে তুলতে একাধিক মঞ্চ থেকে বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ খাস কলকাতা শহরেই এ রকম একটি প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের প্রশ্ন, যে-রাজ্যে ইনফোসিসের মতো বড় বিনিয়োগ আটকে রয়েছে, সেই রাজ্য এ ধরনের প্রকল্প খোয়ানোর ধৃষ্টতা দেখায় কী করে?
এর আগেও দুই দফতরের মধ্যে এই পার্ক নিয়ে চাপান উতোর চলেছে। পুর দফতরের অধীন কে এম ডি এ-র কাছ থেকে এই জমি নিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। হস্তান্তরের পরে ওই তিন সংস্থাকে জমি লিজে দেয় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। সমস্যার শুরু সেখানেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দুই দফতরের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী কোনও বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়ার সময়ে ‘ট্রান্সফার ফি’ বাবদ কিছু টাকা কে এম ডি এ-কে দেওয়ার কথা। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সে সময়ে ওই টাকা দেয়নি। তা নিয়ে তখন বিশেষ মাথা ঘামায়নি পুর দফতরও।
পরে এই সমস্যা মাথা চাড়া দেয়। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব কে এম ডি এ-র। কিন্তু ট্রান্সফার ফি বাবদ টাকা না-পাওয়ায় কাজে হাত দেয়নি তারা। দফায় দফায় আলোচনার পরে অবশেষে এই সমস্যা মেটে।