কর্ণধার কিশোর বিয়ানি।
কর্নাটকের পরে পশ্চিমবঙ্গ। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নিজেদের লগ্নির দ্বিতীয় গন্তব্য হিসেবে এ রাজ্যকেই বেছে নিল কিশোর বিয়ানির ফিউচার গোষ্ঠী। ৫০০ কোটি টাকা লগ্নিতে খড়গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে গড়ে উঠবে ‘মেগা ফুড পার্ক’।
বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক সাব-কমিটি এই প্রকল্পের জন্য ফিউচার গোষ্ঠীকে ৬০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিন বৈঠকের পর শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, “প্রকল্পে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কাজ পাবেন ১৫ হাজার মানুষ। দেড় লক্ষের বেশি চাষি ফসল বিক্রি করেও উপকৃত হবেন।”
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে খুশি গোষ্ঠীর কর্ণধার কিশোর বিয়ানি। সরকারি ঘোষণার পর এ দিন তিনি বলেন, “এটা আমাদের দ্বিতীয় ফুড পার্ক। বেঙ্গালুরুতে প্রথমটি শেষের পথে। দু’মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।” তবে প্রকল্প এখনও পরিকল্পনা স্তরেই আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। বিষয়টি নিয়ে আরেক দফা আলোচনা করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে বৈঠক হওয়ার কথা।
কলকাতা থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল দেশের ৯৫টি শহরে ছড়িয়ে থাকা কিশোর বিয়ানির ফিউচার গোষ্ঠী। তাদের হাত ধরেই ভারতে সংগঠিত খুচরো ব্যবসার শুরু। ‘প্যান্টালুন’, ‘বিগ বাজার’, ‘ই-জোন’-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছাতার তলায় বিপণি চালু করে তারা। পরে অবশ্য প্যান্টালুন অন্য সংস্থাকে বিক্রি করা হয়।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে লগ্নিকারীদের প্রথম পছন্দ পশ্চিমবঙ্গ। বছর দুয়েক আগে বণিকসভা সি আই আইয়ের এক অনুষ্ঠানে খোদ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে এই শিলমোহর দেয়। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের দাবি, নয়া প্রকল্পের জন্য যত দরখাস্ত জমা পড়ে, তার ৭০ শতাংশই চায় এ রাজ্যে পা রাখতে। যার প্রধান কারণ এখানে সব্জির ফলন। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই সুবিধা বিনিয়োগে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে এ রাজ্য বরাবরই পিছিয়ে। রয়েছে সংরক্ষণ ও বিপণন পরিকাঠামোর অভাব। তার সঙ্গে সমস্যা রয়েছে বাজারের সঠিক খবর জানার ক্ষেত্রেও। সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর মতে, বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা কতটা হতে পারে তা নিয়েও ভাল ধারণা নেই কৃষকদের। যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিশেষ এক ধরনের আলুর চাহিদা ৭৫ হাজার টন। অথচ এ রাজ্যে তার ফলন মাত্র ৪৩ হাজার টন।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরের জন্য বিক্রির মাত্র ১৫% কৃষকদের হাতে যায়। ৪০,০০০ কোটি টাকার বেশি কৃষিপণ্য বিক্রি হলেও মাঝেই হারিয়ে যায় ৩০ হাজার কোটি।
এ দিন অমিতবাবুও দাবি করেন, খড়গপুরে মেগা ফুড পার্ক হলে রাজ্যের ফল, শাক-সব্জি উত্পাদনকারীরা নায্য দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন। বাংলার চাষিদের ফসল বিদেশেও পৌঁছে যাবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ৬০ একরের মেগা ফুড পার্কের পরিকাঠামো এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজে ফিউচার গোষ্ঠী নিজেরা ১৫০ কোটি টাকা লগ্নি করবে। এ ছাড়া ২৫টি অন্যান্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে আরও কিছু সংস্থা ঢালবে প্রায় ৩৫০ কোটি। ফিউচারই তাদের এই পার্কে নিয়ে আসবে।
বিয়ানি বলেন, খড়্গপুরে দ্রুত জমি মিলেছে। প্রকল্পের কাঁচামাল জোগান দেবেন স্থানীয় কৃষকরা। তাঁদের থেকেই পণ্য কিনে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। ফলে রাজ্যের চাষিরা উপকৃত হবেন।