বিমার আওতায় আরও বেশি মানুষকে আনতে বিপণন ব্যবস্থা ঢেলে সাজছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইআরডিএ। এর জন্য ব্যাঙ্ক মারফত বিমা বিক্রির নিয়ম-কানুন রদবদল করতে ও এজেন্ট কমিশন বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগী বলে জানিয়েছেন আইআরডিএ-র সিনিয়র জয়েন্ট ডিরেক্টর সুরেশ মাথুর। তাঁদের লক্ষ্য বিমা পলিসি বিক্রি বাড়িয়ে এই শিল্পকে আরও চাঙ্গা করা।
পাশাপাশি, সম্প্রতি কলকাতায় বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত বিমা নিয়ে এক সভায় যোগ দেওয়ার পরে মাথুর জানান, ‘‘সম্প্রতি বিমা আইনে যে-সব সংশোধনী আনা হয়েছে, তার ফলে ৩৯টি ধারায় পরিবর্তন করতে হবে। ওই পরিবর্তনগুলি কার্যকর করে খুব শীঘ্রই সংশোধিত বিমা আইন প্রকাশ করা হবে।’’
একটি ব্যাঙ্ক যাতে একাধিক বিমা সংস্থার প্রকল্প বিক্রি করতে পারে, তার জন্য খুব শীঘ্রই আইআরডিএ নির্দেশ জারি করতে চলেছে। এত দিন একটি ব্যাঙ্ক শুধু একটি বিমা সংস্থার প্রকল্পই বিক্রি করতে পারত। অথচ বিমা প্রকল্প বিপণনের অন্যতম মাধ্যম হল ব্যাঙ্ক। এর ফলে বেশ কিছু বিমা সংস্থা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাদের প্রকল্প বিপণন করার সুযোগ পাচ্ছিল না বলে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছে। তারা দীর্ঘ দিন ধরেই একটি ব্যাঙ্ককে একাধিক বিমা সংস্থার প্রকল্প বিক্রি করতে দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আইআরডিএর কাছে দরবার করছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারও চায়, দেশের আরও মানুষকে বিমার আওতায় আনতে। বর্তমানে দেশের মাত্র ৫ শতাংশের মতো মানুষ বিভিন্ন বিমা প্রকল্প কিনে থাকেন। একটি মাত্র বিমা সংস্থার প্রকল্প বিক্রির এই বিধিনিষেধ ব্যাঙ্কগুলির উপর থেকে তুলে নিলে প্রকল্প বিপণন বাড়ানোর পক্ষে তা বিশেষ কার্যকর হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল।
পাশাপাশি, বিমা এজেন্টদের কমিশন সংশোধনের ব্যাপারেও পদক্ষেপ করবে আইআরডিএ। কিছু দিন আগে বিশেষ করে ইউনিট লিঙ্কড প্রকল্প (ইউলিপ)-এর ক্ষেত্রে এজেন্টদের কমিশনের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয় আইআরডিএ। এটিকে বিমা শিল্পে শ্লথগতির অন্যতম কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন ওই সভায় হাজির বজাজ অ্যালায়াঞ্জের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও অনুজ অগ্রবাল। তিনি বলেন, এর ফলে ইউলিপ বিক্রি করার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন এজেন্টরা। বছর দু’য়েক ধরে বিমা শিল্পে বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার এটি প্রধান কারণ।
তবে ভারতে স্বল্প সঞ্চয়ের হার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিমা শিল্পের হাল ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষ আশাবাদী বিমা বিশেষজ্ঞরা। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের পরবর্তী সভাপতি এবং কেপিএমজি-র পার্টনার অম্বরীশ দাশগুপ্ত বলেন, বর্তমানে দেশে বিমা শিল্পে প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয় বছরে ৪ লক্ষ কোটি টাকা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৭ লক্ষ কোটি টাকায় উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর জন্য এমন বিমা প্রকল্প তৈরি করা উচিত, যা সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারবেন।
বিমার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাও এই শিল্পের সম্প্রসারণের পথে বড় বাধা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অনুজবাবু বলেন, বিভিন্ন সংস্থাকে তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন (সিএসআর)-এর জন্য মুনাফার একটি অংশ খরচ করতে হয়। এর আওতায় বিমা নিয়ে মানুষকে সচেতন করার বিষয়টিও আনা জরুরি। তাতে বিমা সংস্থাগুলি সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে। বিমা সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানান অনুজবাবু।