উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল।—নিজস্ব চিত্র।
নয়া শিল্পোদ্যোগী তৈরি করতে এ বার ময়দানে নামছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৈদ্যুতিন পণ্য ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদনে উৎসাহ দিতে কেন্দ্র তৈরি করছে ‘ইলেকট্রনিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইনফোকম ২০১৪-র থিম অন্ত্রেপ্রেনরশিপ বা শিল্পোদ্যোগ-এর পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব আর এস শর্মা। বৈদ্যুতিন পণ্যের ক্ষেত্রে দেশের ক্রমবর্ধমান বাজারের দিকে নজর রেখেই কেন্দ্র এই তহবিল গড়ার পরিকল্পনা করেছে বলে দাবি শর্মার। তিনি জানান, বর্তমানে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বৈদ্যুতিন পণ্য আমদানি করে ভারত। ২০২০ সালে এই অঙ্ক চার গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ৪০০ কোটি। এখনও পর্যন্ত মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এই ছবিটা বদলে দিতেই নতুন তহবিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বেসরকারি উদ্যোগ-পুঁজি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এগোতে চায় কেন্দ্র। শর্মা জানান, যে সব প্রকল্পে টাকা ঢালা হবে, তাতে সামান্য অংশীদারি নেবে সরকার। তাঁর দাবি, সরকারের উপস্থিতি বেসরকারি উদ্যোগ-পুঁজির আস্থা বৃদ্ধি করবে। অন্য দিকে, তহবিলের পরিমাণও বাড়বে।
তবে শুধুই শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে নয়, উন্নয়নের লক্ষ্যে যে-কোনও বিষয়ে নয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানানো উচিত বলে মনে করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ দিন ত্রয়োদশ ইনফোকমের উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানের মূল বিষয় শিল্পোদ্যোগ নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “শুধুই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সীমিত নয় উদ্যোগের সংজ্ঞা। আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজে আসতে পারে নানা উদ্যোগ।” তাঁর দাবি, চেনা পথের বাইরে হেঁটে নতুন দিশা দেখানোর মধ্যে থেকেই উঠে আসবেন ভবিষ্যতের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোগপতি।
মূল থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই গোটা অনুষ্ঠানের সুর বাঁধা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি জগতের এই রাজসূয় যজ্ঞে একাধিক আলোচনাসভার বিষয় শিল্পোদ্যোগ। এ কথা জানিয়ে এবিপি প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ইনফোকমের চেয়ারম্যান ডি ডি পুরকায়স্থ বলেন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ফ্লিপকার্ট, মেক মাই ট্রিপ-এর মতো স্টার্ট-আপ সংস্থার সাফল্য শুধু দূর থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকছে না বর্তমান প্রজন্ম। নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করতে এগিয়ে আসছে তারা। দেশের আর্থিক উন্নয়ন ও তুলনামূলক ভাবে সহজলভ্য পুঁজি উদ্যোগপতিদের উৎসাহী করছে। আর এই নতুন ধারাকে গুরুত্ব দিতেই ইনফোকমের এ বারের থিম বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের জায়গা আরও মজবুত করতে শিল্পোদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন ন্যাসকমের প্রাক্তন কর্তা কিরণ কার্নিক, শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্কা, ভারতে ভোডাফোনের প্রধান মার্টিন পিটার্স, টেক মহীন্দ্রার কর্তা মনোজ চুঘ, কগনিজ্যান্টের প্রধান রামকৃষ্ণন চন্দ্রশেখরন-সহ ইনফোকমের অন্য বক্তারা।
ইনফোকমের মঞ্চ থেকে উঠে এসেছে দু’টি বিষয়। শিক্ষার প্রসার ও সংস্থার মধ্যে থেকেই শিল্পোদ্যোগের বিকাশ। মার্টিন পিটার্স শিক্ষার বিস্তারের দিকে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, উন্নত মানের শিক্ষা না-থাকলে মার খাবে উদ্ভাবনী শক্তি ও শিল্পোদ্যোগের বাস্তবায়ন। অন্য দিকে মনোজ চুঘ ও রামকৃষ্ণন চন্দ্রশেখরন মনে করেন, সংস্থার মধ্যে থেকেও শিল্পোদ্যোগ শুরু করা যায়। শুধুমাত্র ওপরওয়ালার নির্দেশ মানা নয়, নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সংস্থার মধ্যেই তৈরি হতে পারে নয়া উদ্যোগ।
শুধুই কর্পোরেট মহল নয়। একই সুরে বাজারে অন্যতম সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের লেখক চেতন ভগৎও বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ও সেই সঙ্গে স্বকীয় ভাবনা-চিন্তার বাস্তবায়নই তরুণ প্রজন্মকে নয়া দিশা দিতে পারে। অন্য কিছু করার ইচ্ছে সকলের মধ্যেই থাকে। কিন্তু বাঁধাধরা জীবনের বাইরে পা দিতেই দু’বার ভাবেন। সেই দ্বিধা কাটিয়ে ইতিবাচক মনোভাবই জীবনে নতুন পথের সন্ধান দিতে পারে।
ইনফোকম আলোচনাসভার পাশাপাশি মিলনমেলা প্রাঙ্গণে প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল।