প্রতিপক্ষ নতুন। কিন্তু সমস্যা পুরনো।
দেড় দশকেরও বেশি পুরনো মালিকানা-জট কাটাতে গিয়ে এ বার নতুন আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে যেতে পারে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ধুঁকতে থাকা এই সংস্থার মালিকানা নিয়ে আইনি সমস্যা মেটাতে শেষ পর্যন্ত চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে রাজ্য। প্রায় ‘মৃত্যুশয্যা’য় চলে যাওয়া এই সংস্থাকে বাঁচাতে পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাতেই সম্ভবত তার রাশ ছাড়তে চলেছে তারা। গত সপ্তাহে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, নিলামে যে-দরে (শেয়ার প্রতি ২৫.১০ টাকা) ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি) হলদিয়া পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার কিনতে চেয়েছিল, ওই একই দামে তা বিক্রি করা হবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে। একই সঙ্গে, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিশেষ কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে রাজ্য।
আর ঠিক এখানেই বেঁকে বসেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। নিলামে একমাত্র দরদাতা সংস্থাটির অভিযোগ, “পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার নিলামের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বিশেষ সুবিধার ওই প্রতিশ্রুতি। কারণ, নিলামে কোথাও এই বিষয়টি জানানো হয়নি। আর্থিক সুবিধার উল্লেখ থাকলে, শেয়ারের মূল্যায়ন অন্য রকম হত। ফলে আলাদা হত দামও।” তাই এখন রাজ্য এই বিশেষ সুবিধার কথা উল্লেখ করায় ক্ষুব্ধ নবরত্ন সংস্থাটি। তাদের প্রশ্ন, দু’ক্ষেত্রে দু’রকম শর্ত রেখে একই শেয়ার বেচা যায় কি? তবে এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করার আগে রাজ্যের চূড়ান্ত বক্তব্য সরকারি ভাবে জানতে চায় তারা। সংস্থার দাবি, এ বিষয়ে রাজ্য তাদের এখনও কিছু জানায়নি। অবশ্য এ নিয়ে রাজ্য বা চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর পাশাপাশি, পুরো বিষয়টির প্রক্রিয়াগত দিক নিয়েও প্রশ্ন তুলছে আইওসি। তাদের দাবি, পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার নিলাম সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া বাতিল না-করে এ ভাবে চ্যাটার্জিদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারে না রাজ্য। আর শেষ পর্যন্ত যদি তা হয়, তা হলে ফের এক প্রস্ত আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা।
গত অক্টোবরে পেট্রোকেমে রাজ্য সরকারের শেয়ার কিনতে নিলামে দর দিয়েছিল একমাত্র আইওসি। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেলেও সেই শেয়ার হাতে পায়নি তারা। মালিকানা নিয়ে রাজ্য বনাম চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আইনি লড়াইয়ের কারণে অদূর ভবিষ্যতে তা পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। বিশেষত যেখানে বিতর্কিত ১৫.৫০ কোটি (রাজ্যের নিজের বলে দেখানো মোট ৬৭.৫০ কোটি শেয়ারের মধ্যেই যা রয়েছে) শেয়ারের মালিকানা নিয়ে আইনি লড়াই এক আদালত থেকে আর এক আদালতে গড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতেই পেট্রোকেমের শেয়ার নিলাম নিয়ে জট কাটাতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চেয়েছিল ইন্ডিয়ান অয়েল। সংস্থার দুই যুযুধান প্রধান অংশীদার রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চেয়েছিল তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, আইনি বিবাদে থমকে থাকা ওই প্রক্রিয়া ফের সচল করতে এটিই একমাত্র কার্যকরী উপায় হতে পারে বলে মনে করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এমনকী এ ধরনের বৈঠকের ভাবনা রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে পৌঁছে দিতে তারা উপদেষ্টা সংস্থা ডেলয়েটের সহায়তা চেয়েছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর। প্রসঙ্গত, এই নিগমের মাধ্যমেই পেট্রোকেমের অন্যতম প্রধান অংশীদার রাজ্য।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল আইওসি। রাজ্য সরকারি সূত্রে খবর, তাতে পেট্রোকেম নিয়ে আইনি লড়াইয়ের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা। জানায়, ওই বিবাদের জেরেই শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। এমনকী শেয়ার নিলাম নিয়ে পরপর মামলা হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা। সামনে এনেছিল ১৫.৫০ কোটি বিতর্কিত শেয়ারের বিষয়টিও। নিলামে রাজ্যের চুক্তিপত্রের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল আইওসি। স্পষ্ট জানতে চেয়েছিল, তাদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ হচ্ছে কি না। কিন্তু সংস্থার দাবি, এখনও তার কোনও উত্তর দেয়নি রাজ্য। যদিও শিল্প দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ফোনে আইওসি চেয়ারম্যান আর এস বুটোলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন অমিত মিত্র।