মতানৈক্য বিদ্যুৎ দফতরের অন্দরে

নিলাম হয়নি বাড়তি জমি, ডিপিএল সেই তিমিরে

উদ্বৃত্ত জমি নিলাম করে সংস্থার আর্থিক হাল ফেরানোর পরিকল্পনা ন’মাস আগেই অনুমোদন করেছে আর্থিক অনটনে জর্জরিত দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)-এর পরিচালন পর্ষদ। কিন্তু সেই রোডম্যাপ কার্যকর করার পথে এক পা-ও এগোতে পারেনি ৫২ বছরের পুরনো এই সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ দফতরের সর্বোচ্চ স্তরে এ নিয়ে মতানৈক্য হওয়ায় গোটা বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

উদ্বৃত্ত জমি নিলাম করে সংস্থার আর্থিক হাল ফেরানোর পরিকল্পনা ন’মাস আগেই অনুমোদন করেছে আর্থিক অনটনে জর্জরিত দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)-এর পরিচালন পর্ষদ। কিন্তু সেই রোডম্যাপ কার্যকর করার পথে এক পা-ও এগোতে পারেনি ৫২ বছরের পুরনো এই সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ দফতরের সর্বোচ্চ স্তরে এ নিয়ে মতানৈক্য হওয়ায় গোটা বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

Advertisement

৫২ বছরের পুরনো সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)-এর বাড়তি জমি নিলাম করে সংস্থার সম্প্রসারণ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য। বেশ কয়েক বছর ধরেই ১৯৬১ সালে তৈরি এই সংস্থার আর্থিক অবস্থা বেহাল। গত অর্থবর্ষের লোকসান ১৫০ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই। সংস্থার ঘাড়ে ঋণের বোঝাও কম নয়। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশনের কাছ থেকে ২৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সংস্থা। সেই ঋণের ২০০০ কোটি টাকা এখনও শোধ হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ৩৫০০ কর্মীর সংস্থাকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধানসূত্র হিসেবে সংস্থার নিজস্ব সম্পত্তি কাজে লাগানোর দিকেই নজর দিচ্ছিল রাজ্য সরকার।

কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও সেই পরিকল্পনা ফাইলবন্দি হয়েই থেকে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ও সচিব গোপাল কৃষ্ণের মধ্যে মতবিরোধের কারণেই প্রাথমিক সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরেও হাত গুটিয়ে বয়ে আছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মন্ত্রী ও সচিব, দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

Advertisement

প্রায় ১৪০০ একর জমির উপরে তৈরি ডিপিএল চত্বরে ছ’টি প্লট নিলামের জন্য চিহ্নিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৭২ একর জমি এই খাতে রয়েছে। তার পিছনে রয়েছে দু’টি যুক্তি। এক মানবিক। দ্বিতীয় বাণিজ্যিক। সরকারি সূত্রের খবর, যে-জমি ফাঁকা রয়েছে বা যে-জমিতে খুব কম সংখ্যক মানুষ রয়েছেন, সেই সব জমিই প্রথমে বেছে নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বাজারের চাহিদা বুঝতে অল্প জমি দিয়েই শুরু করতে চায় তারা।

বাড়তি জমি কতটা, কী ভাবে তার বাণিজ্যিক ব্যবহার করা যায়, সেই পথখুঁজতে পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ট্রানজাকশন অ্যাডভাইজর হিসেবে বর্তমান জমির ব্যবহার, একর প্রতি জনসংখ্যার চাপ ও ‘ফ্রি ল্যান্ড’ বা যে জমি এখনই বিক্রয়যোগ্য, সেই জমি চিহ্নিত করেছে তারা। সরকারি সূত্র অনুযায়ী জমি নিলামের ক্ষেত্রে জমির ব্যবহারের উপর কোনও শর্ত বেঁধে দিতে চায়নি রাজ্য। অর্থাৎ ওই জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কও করা যাবে। আবার স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও আবাসনও করা যাবে।

প্রায় ১৪০০ একর জমি জুড়ে রয়েছে সংস্থার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্মী আবাসন, স্কুল, জলবিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো। রেল লাইনের দু’ধারে সংস্থার জমি ছড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যেতে রেল লাইনের ডান দিকে পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও শ্রমিক আবাসন। ৪০০ একর জমি রয়েছে এখানে। অন্য দিকে, অর্থাৎ রেল লাইনের বাঁয়ে ৯৫০ একর জমি আছে। এখানে আছে অফিসারদের আবাসন, স্কুল, মুরগি খামার, শাল বন, আম বন, বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানা, জলের পাইপলাইন ও বিদ্যুতের লাইন। প্রথম ধাপে নিলামের জন্য চিহ্নিত এই ৯৫০ একর জমির মধ্যেই ছ’টি প্লট রয়েছে।

আর্থিক টানাটানিতে জেরবার রাজ্য রুগ্ণ সংস্থার নিত্য নৈমিত্তিক খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছে। সমাধান হিসেবে সংস্থার বাড়তি জমি নিলাম করে ইতিমধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখেছে সরকার। পথ দেখিয়েছে পরিবহণ দফতর। কলকাতায় ছ’টি ট্রাম ডিপোর জমি নিলামে তোলা হয়েছে। একই পথে হাঁটতে চেয়েছিল ডিপিএল। সেই পরিকল্পনা আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, এখন প্রশ্ন তা নিয়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement