আপাতত কিছুটা স্বস্তি টেলিকম শিল্পে।
মঙ্গলবার টেলিকম ট্রাইব্যুনাল (টিডিস্যাট) রায় দিল যে, একটি সার্কেলে (ইন্ট্রা সার্কেল) কোনও টেলিকম সংস্থার হাতে থ্রিজি পরিষেবার স্পেকট্রাম না থাকলেও, সেখানে অন্য সংস্থার স্পেকট্রাম ব্যবহার করে ওই পরিষেবা দিতে পারবে তারা।
এই গাঁটছড়া বাঁধার উদ্যোগে আপত্তি তুলে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নোটিস পাঠায় কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট)। নির্দেশ দেয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জোট ভাঙার। আর তারই বিরুদ্ধে টিডিস্যাটের দ্বারস্থ হয় তিন সংস্থা এয়ারটেল, ভোডাফোন এবং আইডিয়া। সেই সূত্রেই এ দিনের এই রায়। তা ছাড়া, বিভিন্ন সার্কেলে একে অপরের সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য ওই তিন সংস্থাকে যে ১,২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, তা-ও এ দিন খারিজ করে দিয়েছে টিডিস্যাট। জানিয়েছে, আগামী দিনে রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স এবং রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি সংস্থাগুলি এ ধরনের জোট বাঁধলে, তাদের ক্ষেত্রেও এই রায় প্রযোজ্য হবে।
২০১০ সালে থ্রিজি পরিষেবার জন্য কেন্দ্র যে স্পেকট্রাম নিলাম করে, তার চড়া দরের কারণে কোনও সংস্থাই দেশের সব সার্কেলে এই পরিষেবার লাইসেন্স পায়নি। এয়ারটেল ১৩টি, ভোডাফোন ৯টি এবং আইডিয়া ১১টি সার্কেলে এই পরিষেবার জন্য স্পেকট্রাম জেতে। এর পর ওই তিন সংস্থা নিজেদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত এলাকার বাইরেও থ্রিজি পরিষেবা দিতে পরস্পরের সঙ্গে জোট বাঁধে। যেমন, এয়ারটেল কলকাতায় এই পরিষেবার জন্য স্পেকট্রাম না-জিতলেও, রাজ্যের বাকি এলাকায় (রেস্ট অব বেঙ্গল বা আরওবি) তা পেয়েছিল। আবার আইডিয়া এ রাজ্যে কোথাও লাইসেন্স পায়নি। কলকাতার জন্য ভোডাফোন ও আরওবি-র জন্য এয়ারটেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে তারা। ভোডাফোনের অবশ্য দু’জায়গাতেই লাইসেন্স ছিল।
কিন্তু এতে আপত্তি তুলে ওই তিন সংস্থাকে গাঁটছড়া ভাঙার নির্দেশ দেয় ডট। এ ভাবে নতুন গ্রাহককে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করতে বলে তারা। তবে সেই সময় সংস্থাগুলি যে গ্রাহকদের এই পরিষেবা দিতে শুরু করেছিল, তাঁদের তা চালু থাকে। ডটের এই নির্দেশের জেরে জোট বাতিল করে টাটা টেলি এবং এয়ারসেল-ও।
এর বিরুদ্ধেই আদালতে যায় এয়ারটেল, ভোডাফোন এবং আইডিয়া। প্রথমে দিল্লি হাইকোর্ট ডট-এর পক্ষে রায় দেয়। তিন সংস্থা আবার তার বিরুদ্ধে আবেদন জানায় সুপ্রিম কোর্টে। আর্জি জানায়, বিষয়টি টিডিস্যাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গত সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট এতে সম্মতি দেয়। আর এ সবের পর এ দিন বিচারপতি আফতাব আলমের নেতৃত্বাধীন টিডিস্যাটের বেঞ্চ টেলিকম সংস্থাগুলির পক্ষেই রায় দিয়ে বলেছে যে, ওই তিন সংস্থার গাঁটছড়া লাইসেন্স-চুক্তির পরিপন্থী নয়।
এ নিয়ে টেলিকম মন্ত্রক কিছু না-বললেও, সরকারি আইনজীবী মণীষা ধীর বলেছেন, এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হবে কিনা, রায় খতিয়ে দেখার পরই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্টো দিকে, টেলিকম সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল রাজন এস ম্যাথুজ বলেন, “আশা করি ফের আদালতে যাওয়ার বদলে এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে সায় দেবে কেন্দ্র।” তাঁর দাবি, নিলাম-চুক্তিতেই এই ব্যবস্থার কথা বলা ছিল। ফলে গাঁটছড়া বেঁধে সংস্থাগুলি অনিয়ম করেনি। তা ছাড়া, থ্রিজি পরিষেবা বিস্তৃত হলে আখেরে গ্রাহকদেরই লাভ। বিকল্প সংস্থা বেছে নেওয়ার সুযোগও বাড়বে তাঁদের। কিন্তু তা হলে সংস্থাগুলি স্পেকট্রাম সর্বত্র কিনতে ঝাঁপাবে কেন? ম্যাথুজের দাবি, সব সংস্থাই স্পেকট্রাম নিজের হাতে রাখতে চায়। কিন্তু দর চড়া হওয়ায় বাধ্য হয়েই গাঁটছড়া।