শেষ হল ভর্তুকিতে ডিজেল বিক্রির জমানা।
বাজারের হাতেই ডিজেলের দাম ঠিক করার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আর্থিক সংস্কারের পথে বড় পদক্ষেপ করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। অন্য দিকে, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে ভর্তুকি বহাল থাকলেও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোয় সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া রান্নার গ্যাস বা এলপিজি-তে ভর্তুকি পাওয়ার জন্য আধার কার্ড নয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই যথেষ্ট বলে এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই সরাসরি ভর্তুকি জমা পড়বে এবং তা প্রথম দফায় শুরু হবে ১৫ নভেম্বর থেকে।
ডিজেলে নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ার ফলে এ বার থেকে চাহিদা-জোগান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের ভিত্তিতেই স্থির হবে তার দর। অর্থাৎ ভর্তুকি দিয়ে আর কৃত্রিম ভাবে দাম কমিয়ে রাখা হবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার মাঝরাত থেকেই লিটারে ৩.৩৭ টাকা (কর ছাড়া) কমলো ডিজেল। ইন্ডিয়ান অয়েল জানিয়েছে, কলকাতায় তা ৩.৫১ টাকা কমে হল লিটারে ৬০.৩০ টাকা। এ নিয়ে গত ৫ বছরে এই প্রথম কমলো ডিজেলের দাম। শেষ বার তা কমেছিল ২০০৯-র ২৯ জানুয়ারি। তখন লিটারে ২ টাকা কমিয়ে ডিজেলের দাম বেঁধে দেওয়া হয় ৩০.৮৬ টাকায়। সরকারি পরিসংখ্যান মাফিক তার পর থেকে দর বাড়ে প্রায় ৫৯%।
এ দিনের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত থেকে সার্বিক ভাবে জ্বালানি ক্ষেত্রের সংস্কারের দিকেই কেন্দ্র এগোচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রসঙ্গত, বিগত ইউপিএ সরকার পেট্রোলের দামে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছিল ২০১০-এ। গত জানুয়ারিতেই তারা ডিজেলে ধাপে ধাপে ভর্তুকি তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ডিজেল বিক্রিতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রতি মাসে লিটারে ডিজেলের দর ৫০ পয়সা করে বাড়াতে শুরু করে তারা, যা বহাল রাখে মোদী সরকারও। এই সূত্র মেনে শেষ বার ডিজেল ৫০ পয়সা বাড়ে ১ সেপ্টেম্বর। তার পরই ডিজেল বিক্রি খাতে তেল সংস্থাগুলির ক্ষতি মুছে ফেলা সম্ভব হয়। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে তারা লাভ করতে শুরু করে, এখন যা লিটারে ৩.৫৬ টাকা।
ডিজেলে নিয়ন্ত্রণ তোলার জন্য এটাই উপযুক্ত সময় বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তার কারণ এ বছরেই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট-এর দাম ২৫% কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলে ৮৩ ডলারে। বাজার সূত্রের ইঙ্গিত, এখনই তা আবার ১০০ ডলার ছাড়ানোর সম্ভাবনা কম। ফলে তেল আমদানির বিপুল খরচে রাশ টানতে পেরেছে কেন্দ্র।
জ্বালানি ক্ষেত্রের সার্বিক সংস্কারের অঙ্গ হিসেবেই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ৪৬% বাড়ানোয় সায় দিল মন্ত্রিসভা। এ ব্যাপারে রঙ্গরাজন কমিটির সূত্রে মেনে ইউপিএ সরকার বর্ধিত দর প্রতি দশ লক্ষ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের জন্য ৮.৪ ডলার করায় সায় দেয়। তা সংশোধন করে প্রতি ইউনিটের জন্য ৬.১৭ ডলার করল বর্তমান সরকার। যা ৪.২ ডলারের চেয়ে ৪৬% বেশি। ১ নভেম্বর থেকে নয়া দর চালু হচ্ছে, যার জেরে সিএনজি-র দর বাড়বে কেজি-তে ৪.২৫ টাকা, পাইপে সরবরাহ করা রান্নার গ্যাস ২.৬০ টাকা। প্রতি ডলার মূল্যবৃদ্ধির জন্য ইউরিয়ার উৎপাদন খরচ বাড়বে টনে ১৩৭০ টাকা, গ্যাস ভিত্তিক প্রকল্পের বিদ্যুৎ মাসুল ইউনিটে ৪৫ পয়সা। তবে জেটলি বলেন, গ্যাস উত্তোলনে সংস্থাকে উৎসাহ দিতেই এই মূল্যবৃদ্ধি। মানুষের উপর চাপ কমাতে আগের সিদ্ধান্তের চেয়ে তা কম হারে বাড়ানো হল। উল্লেখ্য, মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি তাদের গ্যাসের জন্য কত দাম পাবে, তা ৬ মাসে ফিরে দেখা হবে।
অবশ্য আপাতত রিলায়্যান্স পুরনো ৪.২ ডলার দামই পাবে। কেজি বেসিনের ধীরুভাই ১ ও ৩ নম্বর গ্যাস ক্ষেত্রে উৎপাদন যত দিন আশানুরূপ না-হচ্ছে, তত দিন তাদের এই দরেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এই ২ গ্যাস ক্ষেত্রে উৎপাদন দৈনিক ৮০ লক্ষ ঘন মিটার, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি ঘন মিটার।