গত সপ্তাহে ভাল খবরের জোয়ার ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজারকে বাঁচানো যায়নি পতনের হাত থেকে।
ভাল খবরের জেরে যখন উত্থানের সম্ভাবনা ছিল, তখনও সেনসেক্সকে ২৭ হাজারের ঘর ভাঙার পর এক সময়ে ২৬ হাজারেরও ঘর ভেঙে নীচে নামতে দেখেছি। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল বিশ্ব বাজারের উপর আমরা কতটা নির্ভরশীল। ডাও, ন্যাসডাক, ফুট্সি, হ্যানসেং, নিক্কেইতে আঁচড় পড়লে তার দাগ তাৎক্ষণিক ভাবে ফুটে ওঠে সেনসেক্স ও নিফটির গায়ে।
ইউরোপ এবং আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা বুধবার গ্রাস করে বিশ্ব বাজারকে। বৃহস্পতিবার এর বড় প্রভাব পড়ে ভারতে। সেনসেক্স এক ঝটকায় ৩৫০ পয়েন্ট খুইয়ে নামে ২৬ হাজারের নীচে। বিদেশি লগ্নিকারীরা তড়িঘড়ি শেয়ার বেচতে থাকায় বাজার দু’মাসের মধ্যে সব থেকে নিচু জায়গায় চলে আসে। দেশের লগ্নিকারীরা বড় সংখ্যায় বাজারে যোগদান না-করলে কিন্তু আমরা হামেশাই এমন অবস্থার সামনে পড়ব, ভারতীয় অর্থনীতির জোরালো ভিতের বিচারে যা হওয়া উচিত ছিল না।
এ বার দেখব গত সপ্তাহে কী কী ভাল খবর পেয়েছিল ভারতের বাজার।
• সোমবার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিল্যায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। আশার তুলনায় যা অনেকটাই ভাল। বাড়ে আয় এবং লাভ দুই-ই। ১,১৩,৩৯৬ কোটি টাকা আয়ের সুবাদে মাত্র তিন মাসে সংস্থা ঘরে তোলে ৫৯৭২ কোটি টাকার মুনাফা।
• একই দিনে সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৪৬ শতাংশে নেমে আসার খবর পায় বাজার। ২০১২-র জানুয়ারির পরে এটি ন্যূনতম খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। এ রকম একটি খবরের জন্য বাজার বহু দিন ধরে অপেক্ষা করছিল। মূল্যবৃদ্ধি কমলে তবেই তো সুদ কমার সম্ভাবনা জোরালো হবে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৯.৩৫% থেকে নেমে এসেছে ৭.৬৭ শতাংশে।
• মঙ্গলবারের খবর পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার মাত্র ২.৩৮ শতাংশে নেমে আসা। ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৭.০৫%। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি এখন ৫ বছরের মধ্যে সবথেকে নীচে। এই পরিসংখ্যান সুদ কমার রাস্তাকে প্রশস্ত করবে। তবে সেটা এখনই হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। অনেকের ধারণা শীতে ফের দাম বাড়তে পারে।
• আর একটি ভাল খবর টিসিএস, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ভাল ফল প্রকাশ। ইনফোসিসের পরে টিসিএস ভাল ফল করলেও তাতে মন ভরেনি বাজারের। ২৩,৮১৬ কোটি টাকা আয়ের উপর লাভ হয়েছে ৫,২৪৪ কোটি টাকা। ভাল ফল হয় হিরো মোটোকর্পেরও।
শুক্রবার সেনসেক্স ১০৯ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হয় ২৬,১০৯ অঙ্কে। এ বার প্রশ্ন, চলতি সপ্তাহটা কেমন যাবে। এ সপ্তাহেই ধনতেরাস এবং দেওয়ালি। আর্থিক কারণ ছাড়াই প্রথা মতো দেওয়ালির সন্ধ্যায় বাজারে কম-বেশি উত্তেজনা ছড়ায়। আর এ বার তো তার যথেষ্ট কারণ আছে।
যে সব কারণে সোমবার থেকেই বাজার তেজী হতে পারে সেগুলি হল:
• গত সপ্তাহের ভাল খবরগুলির পুরো প্রভাব এখনও বাজারে পড়েনি।
• হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র সাফল্য মোদী সরকারকে আরও পোক্ত করবে। শক্তি জোগাবে সংস্কারের পথে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে পারবে।
• বাজারের কাছে বড় খবর ডিজেলের দামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়া। ভর্তুকি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে শেয়ার বাজার এবং বিদেশি লগ্নিকারীদের বেজায় খুশি হওয়ার কথা। এতে ভারত সরকার এবং তেল পরিশোধন ও বিপণন সংস্থাগুলির বোঝা কমবে। দেশের আর্থিক উন্নয়নে এর ছাপ পড়বে। পাশাপাশি রয়েছে পেট্রোলের পরে ডিজেলের দাম কমার খবর। এর প্রভাবে মূল্যবৃদ্ধির উপর চাপ কমবে এবং কম-বেশি উপকৃত হবে বহু সংস্থা।
অবশ্য ছোট মেয়াদে সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে কী হবে তা নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই। তেলের দাম এখন ৪ বছরে সবচেয়ে নীচে। বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হলে দাম ফের উঠতে পারে। তখন কিন্তু ভর্তুকি থাকবে না। ভর্তুকি তুলে নিতে আদর্শ সময়টিকে বেছেছে মোদী সরকার। তাই এর প্রভাব তাৎক্ষণিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে অবশ্য চলতি সপ্তাহে বাজার চাঙ্গা থাকবে বলেই আশা। তা হলে দেওয়ালির আকাশ একটু বেশিই আলোকিত হবে। অন্য দিকে বিশ্ব বাজারে সোনা দুর্বল থাকলেও প্রাক ধনতেরাস পর্বে ভারতে দর বেড়েছে। তবে গত ২/৩ বছরের তুলনায় দাম বেশ কম থাকায় ধনতেরাসের রাতে বউবাজারে ও অন্যত্র ভিড় উপচে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দাম কমা ও ফ্যাশন পাল্টানোর কারণে পিছিয়ে থাকবে না রুপোর গয়নাও।