অর্থ তালুকে লগ্নি টানতে মুম্বইয়ে রতন টাটার ‘ভাঙা’ উদ্ধৃতি ধার করতেও পিছপা হয়নি রাজ্য। ওই একই লক্ষ্যে রাজ্যে টাটাদের লগ্নির উল্লেখ করতে ভোলেননি শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। জেলায়-জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়ার আহ্বানকে প্রায় অভ্যেস করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ খাস কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে জমি কিনেও চার বছরে সেখানে ক্যাম্পাস গড়তে পারেনি এইচএসবিসি। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেখানে ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে দেয়নি কেএমডিএ। ফলে সেখানে বহুজাতিকটির প্রকল্পের কাজ শুরু এখনও বিশ বাঁও জলে।
২০০৫ সালে রাজ্যে পা রাখে এইচএসবিসি-র তথ্যপ্রযুক্তি শাখা। প্রথমে ভাড়া নেওয়া জমিতে সার্ভিস সেন্টার গড়ে কাজ শুরু করে তারা। ২০১০ সালে সাড়ে তিন একর জমি নেয় নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে। সেখানে জমি নিয়েছিল আরও দুই সংস্থা রোল্টা এবং এইচসিএল। রাজ্যের নির্ধারিত দামেই (একর-পিছু ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা) জমি লিজ নেয় তিন সংস্থা।
ওই নোনাডাঙা ক্যাম্পাসে ৪,০০০ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল এইচএসবিসি-র। রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, জমি পাওয়ার ৫ বছরের মধ্যে প্রকল্প চালুর কথা ছিল তাদের। কিন্তু তা এখনও সেই তিমিরেই। কারণ, প্রতিশ্রুতি দিয়েও ওই জমিতে নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো প্রাথমিক পরিকাঠামোটুকু তৈরি করে দেয়নি রাজ্য। ফলে প্রকল্পের কাজ এগোনোও সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ তিন সংস্থারই।
এখন এইচএসবিসি-র ক্ষেত্রে এই সংকট আরও তীব্র হওয়ার কারণ এ রাজ্যে তাদের অন্য জমি নিয়েও তৈরি হওয়া জটিলতা। কলকাতায় পা রাখার পর যে তিন একর জমির উপর তারা সার্ভিস সেন্টার তৈরি করেছিল, তার মালিক ছিল এলঅ্যান্ডটি। বাড়ি তৈরির খরচ বয়েছিল এইচএসবিসি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এখন তাদের সেই প্রাথমিক ন’বছরের চুক্তি শেষ। এলঅ্যান্ডটি জমি বিক্রি করে দেওয়ায় বদলে গিয়েছে তার মালিকানাও। সংস্থার দাবি, এখন নিত্যনতুন বাড়তি শর্ত জুড়ে দিচ্ছে বর্তমান মালিক। ফলে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। তাদের আক্ষেপ, এত দিনে নোনাডাঙা ক্যাম্পাস হয়ে গেলে, এই সমস্যা অনেকটাই লাঘব হত।
সাধারণত, সারা বিশ্বেই লিজে জায়গা নিয়ে অফিস চালায় এইচএসবিসি। কিছুটা তার ব্যতিক্রম হিসেবে এ দেশে কলকাতাতেই প্রথম জমি কিনে ক্যাম্পাস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কিন্তু চার বছর পেরিয়েও তা গড়া হল না। শিল্পমহলের একাংশ তাই বলছেন, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী অর্থ তালুকে লগ্নি টানতে মরিয়া। এমনকী ‘প্রতিপক্ষ’ টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার রাজ্যের প্রতি আস্থার উদাহরণ দিতেও পিছপা নন। অথচ সেখানে কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে কেনা জমি স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে চার বছর পড়ে থাকে কী ভাবে? এর পর মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আস্থা রেখে জেলার পার্কেই বা টাকা ঢালবেন কে?
উল্লেখ্য, গোড়া থেকেই নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে টানাপড়েন ছিল তথ্যপ্রযুক্তি ও নগরোন্নয়ন দফতরের। জটিলতা ছিল ‘ট্রান্সফার ফি’ নিয়ে। পরে নগরোন্নয়ন দফতর প্রাপ্য ছেড়ে দেওয়ায় তা মেটে। কিন্তু তিন সংস্থারই অভিযোগ, তা-ও পরিকাঠামো হয়নি। অভিযোগের উত্তর অবশ্য কেএমডিএ দেয়নি।