দেশের শিল্পোৎপাদনে গতি আনতে অন্তর্বর্তী বাজেটে গাড়ি, ভোগ্যপণ্যের উপর উৎপাদন শুল্কে ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ সরকার। সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। এর পর কী হয়, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল। তাদের স্বস্তি দিয়ে নতুন বিজেপি সরকার বুধবার জানিয়েছে, উৎপাদন শুল্ক ছাড়ের সেই মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে বর্তমান সরকারও ইউপিএ-র মতো একই যুক্তি দিয়েছে। নয়াদিল্লিতে এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে জানিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থার বিচারেই তিনি ওই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এতে কি সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে না? জেটলির বক্তব্য, স্বল্প মেয়াদি ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে সুফল আনবে। তিনি বলেন, “এর ফলে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছি। যদি তা হয়, তা হলে স্বল্প মেয়াদে রাজস্ব ক্ষতি নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।”
গাড়ি ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে বিক্রিতে টান পড়ায় আর্থিক সঙ্কট গ্রাস করে এই দুই শিল্পকে। বিশেষ করে ঝিমিয়ে পড়ে ভারতে উৎপাদন শিল্পের অন্যতম সূচক গাড়ি শিল্প। গত অর্থবর্ষে গাড়ি বিক্রি এতটাই ধাক্কা খেয়েছিল, যা স্মরণকালে ঘটেনি। বাজারে চাহিদা বাড়াতে তাই গাড়ি শিল্পের দাবি মেনে উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। শুল্ক কমায় সেই হারে গাড়ির দামও কমিয়েছিল সংস্থাগুলি। যার ফল কিছুদিন হল মিলতে শুরু করেছে বলে দাবি গাড়ি সংস্থাগুলির। কিন্তু ৩০ জুনের পরে ফের শুল্ক বাড়লে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিল তারা।
এ দিন কেন্দ্র ছাড়ের প্রস্তাব বহাল রাখায় ছোট গাড়ি, স্কুটার, মোটরসাইকেল ও বাণিজ্যিক যানে উৎপাদন শুল্ক রইল সেই ৮ শতাংশে (আগে ছিল ১২%), এসইউভি ২৪% (আগে ৩০%), বড় গাড়িতে ২৪% (আগে ২৭%), মাঝারি গাড়িতে ২০% (আগে ২৪%)। পাশাপাশি, মূলধনী পণ্য ও ভোগ্যপণ্যে এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশেই (আগে ছিল ১২%)।
কেন্দ্রের এ দিনের সিদ্ধান্তে সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স-এর প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কর বলেছেন, “এটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত। এবং সার্বিক ভাবে উৎপাদনমুখী শিল্পের চাহিদা বুঝেই নেওয়া হয়েছে। এটা কেন্দ্রে নতুন নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতাই প্রমাণ করে।” এর ফলে বিক্রি আরও বাড়বে বলেই তাঁদের আশা। মারুতি, হুন্ডাই, টাটা মোটরস, জেনারেল মোটরস, হোন্ডা কার-সহ গাড়ি সংস্থাগুলিও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খুশি। জেনারেল মোটরস-এর কর্তা পি বলেন্দ্রন একই সঙ্গে বলেছেন, “আসন্ন বাজেটে শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ গোটা অর্থবর্ষের জন্যই (অর্থাৎ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত) বাড়ানো হবে বলে আশা করছি।’’
তবে শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি গাড়ি শিল্পের জন্য আরও কিছু পরিকল্পনা কেন্দ্র নেবে বলে আশাবাদী গাড়ি সংস্থাগুলি। উৎপাদন শুল্ক ৩০ জুনের পর থেকে বাড়লে গাড়ির দামও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল হুন্ডাই, হোন্ডার মতো সংস্থা। এ দিন অবশ্য তারা জানিয়েছে, তা না-হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এই কারণে আর গাড়ির দাম বাড়বে না।
গাড়ি শিল্পের মতোই খুশি ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলিও। এলজি ইন্ডিয়া-র অন্যতম কর্তা সঞ্জীব অগ্রবাল বলেন, “এর ফলে এই শিল্পে গতি আসবে।” গোদরেজ অ্যাপ্লায়্যান্সেস-এর কর্তা কমল নন্দী বলেছেন, প্রায় দু’বছর পরিস্থিতি একই ছিল। গত ছ’মাসে ব্যবসা কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে তা আরও বাড়বে বলেই আশা তাঁদের।