রাজ্যের ঝুলিতে আসবে বাড়তি অর্থ

কমিশনের সুপারিশ মেনে বাড়ছে কেন্দ্রীয় করের ভাগ

রাজ্যের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতা। উন্নয়নের জন্য আরও অর্থ। কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন। লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হওয়া থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার সেই কথা রেখেই রাজ্যের হাতে বাড়তি তহবিল তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২২
Share:

সাংবাদিক সম্মেলনে জেটলি। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতা। উন্নয়নের জন্য আরও অর্থ। কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন। লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হওয়া থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার সেই কথা রেখেই রাজ্যের হাতে বাড়তি তহবিল তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মোদী সরকার।

Advertisement

শিয়রে বাজেট। আর তার মাত্র চারদিন আগে আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানালেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে আগামী অর্থবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের ৪২% রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেবে কেন্দ্র। যার সঙ্গে অনুদান ও অন্যান্য অর্থ সাহায্য যোগ করলে কেন্দ্রের আয়ের অর্ধেকের কাছাকাছি অর্থ চলে যাবে রাজ্যের সিন্দুকে।

এতদিন কেন্দ্রীয় কর বাবদ যা হাতে আসত, তার ৩২% বিলি হত রাজ্যগুলির মধ্যে। এর আগেও অর্থ কমিশনের সুপারিশে ওই কর থেকে রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এক লাফে এতখানি বাড়ার ঘটনা এই প্রথম। কমিশনের হিসেবে, চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে মোট ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। আগামী বছর ওই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার কোটিতে।

Advertisement

এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আজ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন, কেন্দ্রের হাতে আগের তুলনায় কম অর্থ থাকলেও, রাজ্য পাচ্ছে বেশি। ফলে তারা নিজেদের প্রয়োজন মতো উন্নয়ন খাতে তা খরচ করতে পারবে। এর আগে যোজনা কমিশন ভেঙে নীতি আয়োগ গড়ার পিছনে মোদীর যুক্তি ছিল, দিল্লিতে বসে তৈরি করা একই উন্নয়নের মডেল সব রাজ্যের জন্য খাটে না। আজকের চিঠিতে মোদী লিখেছেন, “আমরা যে এক মডেল সকলের জন্য খাটানোর নীতি থেকে সরে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে নেওয়াই তার প্রমাণ।”

জেটলির বক্তব্য, অধিকাংশ রাজ্যই হাতে আরও বেশি অর্থ পেতে চাইছিল। দাবি উঠেছিল, কেন্দ্রীয় অনুদানভিত্তিক প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে সেই অর্থও রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার। যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি নকশা ভেঙে দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলি স্থানীয় এলাকার চাহিদা অনুযায়ী চালানো যায়।

এখন একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার মতো ৬৬টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চলছে। জেটলি বলেন, “রাজ্যের জন্য এতটা অর্থের বন্দোবস্ত করায় ৬৬টি-র মধ্যে ৩০টিই তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। তবে গরিবদের জন্য প্রকল্পগুলিকে কেন্দ্রও অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পে আবার আইনি দায়বদ্ধতা আছে। তাই এগুলি আমরা চালানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ৮টি প্রকল্প রাজ্যের হাতে দেওয়া হবে।” প্রধানমন্ত্রীও একই সুরে মুখ্যমন্ত্রীদের লিখেছেন, “রাজ্যের হাতে বাড়তি অর্থ দেওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে। মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ভবিষ্যতেও একসঙ্গে কাজ করব।”

মোদী-জেটলির এই সিদ্ধান্তের পর এ বার প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যগুলির হাতে এত বেশি অর্থ তুলে দিলে কেন্দ্রীয় রাজকোষের চেহারাটা কী হবে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে রাজকোষ ঘাটতি? এ বছর যার লক্ষ্য ৪.১ শতাংশে বেঁধেছেন জেটলি। এবং তা ছুঁতে বদ্ধপরিকর বলে বারবার দাবিও করেছেন। এমনকী আজ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার পরেও তাঁকে সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। যদিও আগামী বছরের রাজকোষ ঘাটতি কী হবে, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

রাজ্যগুলির অবশ্য দাবি, আপাতত ঘাটতির কথা ভুলে সরকারি লগ্নি বাড়াক কেন্দ্র। তবেই বৃদ্ধির হার বাড়বে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ঘাটতি বাড়লে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলি ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নেবে। যা দেশে বিনিয়োগ টানার পথে বাধা হবে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনেরও সুপারিশ, আগামী বছর রাজকোষ ঘাটতি ৩.৬ শতাংশে নামাক কেন্দ্র। পরের বছর ৩ শতাংশে। কমিশনের মতে, অর্থনীতির হাল ফিরছে। বৃদ্ধির হার বাড়ছে। কর ক্ষেত্রের সংস্কার হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। তাই কেন্দ্রের উচিত ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের আগেই রাজস্ব ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রেও কমিশনের সুপারিশ তিনি মানবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেটলি শুধু বলেন, “শনিবারের বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement