শহরে আয়োজিত ত্রয়োদশ ইনফোকমের শেষ দিন শনিবারে মঞ্চে হাজির পুরস্কারপ্রাপ্ত ছোট ও মাঝারি শিল্পপতিরা। —নিজস্ব চিত্র।
এ বারের থিম অন্ত্রেপ্রেনরশিপ বা শিল্পোদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছিল ইনফোকম ২০১৪। ব্যাঙ্কিং, বিমা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে হাজির সব শিল্পের প্রতিনিধিরাই জানিয়ে দেন, উন্নয়নের চাকা যত জোরেই ঘুরুক না কেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিল্পোদ্যোগের প্রসার জরুরি। আর, শনিবার ইনফোকমের শেষ দিনে শিল্পমহলের দাবি, ছোট ও মাঝারি শিল্পের হাত ধরেই শিল্পোদ্যোগের এই প্রসার ঘটবে।
‘এমপাওয়ারিং এসএমই ফর ইন্ডিয়া ২০২৫’ শীর্ষক আলোচনায় দেশের ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের দিশা হিসেবে উঠে এল ছোট ও মাঝারি শিল্পের গুরুত্ব। সামনে এল এ সব সংস্থার সমস্যাও। বিশ্বের প্রথম সারির পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজির অন্যতম কর্তা অম্বরীশ দাসগুপ্ত জানান, প্রাথমিক পুঁজির বাধা টপকালেও ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়।
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে রিলায়্যান্স কমার্শিয়াল ফিনান্স-এর কর্তা কে ভি শ্রীনিবাসন জানান, ব্যবসা শুরু করার প্রথম ধাপ থেকেই ছোট ও মাঝারি সংস্থাকে বিবিধ বাধার মুখে পড়তে হয়। বড় সংস্থার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে না-পেরে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে একাধিক ছোট সংস্থা। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আইন রয়েছে। রয়েছে অন্যান্য আইনি নিরাপত্তা। এই বিষয়গুলি জেনে রাখা দরকার বলে মনে করেন শ্রীনিবাসন। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য ইতিমধ্যেই তাঁর সংস্থা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঢেলেছে বলে দাবি শ্রীনিবাসনের।
একই সুরে এসবিআই জেনারেল ইনশিওরেন্সের প্রধান ভাস্করজ্যোতি শর্মা জানালেন, নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। বড় সংস্থা বিমা করে রাখার কারণেই অধিকাংশ বিপদ সামলে নিতে পারে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি সংস্থা বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। ফলে সংস্থার আর্থিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের রুজি-রুটির সংস্থানও।
তবে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে বলেই মনে করেন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)-এর কর্তা আশিস চৌহান। তাঁর দাবি, সংস্থার আয় আরও বাড়াতে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই নথিভুক্তির ফলে ঋণ পেতেও সুবিধা হয় বলে তিনি মনে করেন। কারণ শেয়ার বাজারে সংস্থা নথিভুক্ত হলেই বাধ্যতামূলক ভাবে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। ফলে সংস্থা চালানোর ক্ষেত্রেও দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
ইনফোকম এ বছর ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিকে টেলিগ্রাফ এসএমই পুরস্কার দেওয়া চালু করল। স্থানীয় স্টার্টআপ সংস্থা বেঙ্গল স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং, পিন্যাক্ল সফটওয়্যার-সহ ১৪টি সংস্থা পুরস্কার পেল।
অন্ত্রেপ্রেনরশিপ বা শিল্পোদ্যোগের সঙ্গেই উঠে এল নেট নিরাপত্তার প্রশ্ন। হ্যাকিং বা নেটচুরি বিশেষজ্ঞদের দাবি, বড় সংস্থার মতো ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিরও নেট নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। অনায়াসে তথ্য চুরি করে নিতে পারে নেটচোর। ইনফোকমের প্রদর্শনী প্রাঙ্গণ মিলনমেলায় বসেছিল হ্যাকিং নিয়ে আলোচনাসভা ও প্রতিযোগিতা। ইন্ডিয়ান স্কুল অব হ্যাকিং-এর সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, নেট-অপরাধের হিসেবে ভারত পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। তাঁর দাবি, নেট নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রধান কারণ এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব। স্মার্ট ফোনের উপর নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নেট চুরির ঘটনাও। নিজেদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সচেতন হতে হবে গ্রাহকদের। সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত অ্যাপস ডাউনলোড থেকে শুরু করে ফোনের সেটিং-এ দেওয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে বলে তিনি জানান। তাঁর দাবি, নেট নিরাপত্তার হাত ধরে চাকরির বিশাল সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। ন্যাসকমের সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরে দেশে ৫ লক্ষ নেট-নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। এখন এ ধরনের কাজে মাত্র ৪০ হাজার দক্ষ কর্মী রয়েছেন।
ইনফোকমের আলোচনাসভা শনিবারই শেষ হল। প্রদর্শনী চলবে আজ, রবিবার পর্যন্ত। আগামী বছর ৩ ডিসেম্বর থেকে ইনফোকম শুরু হবে।