স্বস্তি শিল্পের • গাড়ি-বাড়ি ঋণে খরচ কমার ইঙ্গিত • সূচক ছুঁল ৩০ হাজার

আচমকাই সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

হোলির আগেই শিল্পমহল ও সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিলেন রঘুরাম রাজন। ঋণনীতি পর্যালোচনার নির্দিষ্ট দিনের মাসখানেক আগেই সুদ কমিয়ে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। ব্যাঙ্কিং মহলের ধারণা, এর জেরে ঋণে সুদ কমলে এক দিকে নগদের খরা কাটিয়ে চাঙ্গা হবে শিল্প, অন্য দিকে সাধারণ মানুষের গাড়ি-বাড়ি ঋণে মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমলে বোঝা কমবে তাঁদেরও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০২:১৫
Share:

হোলির আগেই শিল্পমহল ও সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিলেন রঘুরাম রাজন। ঋণনীতি পর্যালোচনার নির্দিষ্ট দিনের মাসখানেক আগেই সুদ কমিয়ে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। ব্যাঙ্কিং মহলের ধারণা, এর জেরে ঋণে সুদ কমলে এক দিকে নগদের খরা কাটিয়ে চাঙ্গা হবে শিল্প, অন্য দিকে সাধারণ মানুষের গাড়ি-বাড়ি ঋণে মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমলে বোঝা কমবে তাঁদেরও।

Advertisement

বুধবার আচমকাই ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর কথা ঘোষণা করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এর ফলে স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-হারে সুদ নেয়, সেই রেপো রেট দাঁড়াল ৭.৫%। আর, এই সুদ কমানোর খবরেই এ দিন বাজার খোলার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই ৩০ হাজার টপকে যায় সেনসেক্স। নিফটিও পেরিয়ে যায় ৯১০০ পয়েন্ট। তবে তার পরেই মুনাফা তোলার হিড়িকে পড়ে যায় সেনসেক্স, ফের নেমে আসে ২৯ হাজারের ঘরে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাজেট দেখেই সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজন। তিনি আগেই বলেছিলেন, দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা দিলে সুদ কমানোর কথা ভাববে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বাজেটের পরে বিশেষজ্ঞরা সে রকম ইঙ্গিতও দেন।

Advertisement

এ নিয়ে গত দু’মাসে দু’বার শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর কথা ঘোষণা করল। ওই দু’দফায় রেপো রেট কমানো হল মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট। এর আগে ১৫ জানুয়ারি তা ৮% থেকে কমে হয়েছিল ৭.৭৫%। এ বার যে-বিষয়টি দেখার তা হল, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পথে হেঁটে সুদের হার কমায় কি না। এর আগের দফায় রাজন যখন ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছিলেন, তখন কিন্তু গোটা তিনেক ব্যাঙ্ক ছাড়া বাকি কেউই সুদের হার কমানোর রাস্তায় হাঁটেনি।

অবশ্য এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। সমস্ত বিষয় ভেবে দেখে বেস রেট কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’ সুদ কমানো নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি না-দিলেও ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্রের এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর আর কে গুপ্ত।

শিল্পমহলও স্বাগত জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই অপ্রত্যাশিত ‘উপহার’-কে। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও আরবিআই যে হাতে হাত মিলিয়ে চলছে, এটা তারই সঙ্কেত।’’ ফিকি প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি বলেন, ‘‘আশা করব এ বার শিল্প ও সাধারণ গ্রাহককে দেওয়া ঋণে সুদের হার কমাবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি।’’

এ দিকে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত জানার পরে শেয়ার বাজার দ্রুত বেড়ে গেলেও পরের দিকে তা হু হু করে নেমে আসে। এ দিন সকালেই সেনসেক্স ৩০ হাজারের ঘরে চলে গিয়ে ৩০,০২৪.৭৪ অঙ্কে ঠেকে। কিন্তু তার পরেই মুনাফার টাকা তুলে নেওয়ার জন্য লগ্নিকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে। এই দিনের উত্থান ছাড়াও এর আগে টানা চার দিনে সূচক বাড়ে প্রায় ৮৫০ পয়েন্ট। শেয়ার বেচে মুনাফার টাকা তুলে নেওয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ স্বাভাবিক কারণেই হাতছাড়া করেননি লগ্নিকারীরা। যার জেরে বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স আগের দিনের থেকে ২১৩ পয়েন্ট কমে থিতু হয় ২৯৩৮০.৭৩ অঙ্কে। এই দিন লেনদেনের পুরো সময় জুড়ে সেনসেক্স ওঠানামা করেছে প্রায় ৭৩৫ পয়েন্ট।

সূচকের এই পতনকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘এটা না-ঘটলেই বাজারের পক্ষেই খারাপ হত। এ দিন দুম করে সেনসেক্সের ৩০ হাজারে উঠে যাওয়ার যুক্তি ছিল না। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, বাজার এ বার সূচকের লম্বা দৌড় দেখবে। এই দিন বাজার না-পড়লে বরং সূচকের হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। তাই এই সংশোধন শেয়ার বাজারের পক্ষে ভাল লক্ষণ।’’

অন্য দিকে, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম এ দিন ৩৩ পয়সা কমেছে। দিনের শেষে এক ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ৬২.২৫ টাকা। প্রসঙ্গত, এ দিন টাকার দর প্রসঙ্গে রাজন এক বিবৃতিতে বলেন, ডলারে টাকার অত্যধিক চড়া দাম অর্থনীতির পক্ষে সব সময়ে ভাল নয়। এ বছরেই টাকা প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে, যা অন্যান্য এশীয় মুদ্রার তুলনায় বেশি। কিন্তু টাকার দাম খুব বেশি বাড়লে তা আর্থিক বৃদ্ধির হারকে শ্লথ করতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement