নিশানায়। ২০০৭-এ আরবিআইয়ের এক বৈঠকে রেড্ডি এবং সুব্বারাও (বাঁ দিকে)।—ফাইল চিত্র।
গত ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে অর্থনীতির ডামাডোলের জন্য খোলাখুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকেই আঙুল তুলল কেন্দ্রের সমীক্ষা। আর একই সঙ্গে তা বাহবা দিল মোদী সরকারকে।
শুক্রবার অর্থ মন্ত্রকের পেশ করা মাঝ বছরের আর্থিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, “২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রা ও ঋণনীতি। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের অর্থনীতির হাল শক্ত হাতে ধরার কেউ ছিল না।” তবে ২০১৩-র শেষ দিক থেকে পরিস্থিতি বদলেছে বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের করা এই মধ্যবর্তী সমীক্ষা। আরবিআই এবং কেন্দ্রের নেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্যই পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি সমীক্ষাটির।
এ ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন দুই গভর্নর ওয়াই ভি রেড্ডি এবং ডি সুব্বারাওয়ের প্রতিই কটাক্ষ করা হয়েছে বলে মনে করছে সরকারি সূত্র। তার কারণ রেড্ডি গভর্নর ছিলেন ২০০৩-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৮-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আসেন ডি সুব্বারাও। তাঁর থেকে বর্তমান গভর্নর রঘুরাম রাজন নেতৃত্বের রাশ হাতে নেন ২০১৩-র ৪ সেপ্টেম্বর। আর, ২০১৪-র মে মাসে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে মোদী সরকার।
ফলে এটা স্পষ্ট যে, রেড্ডি এবং সুব্বারাওকেই বেহাল অর্থনীতির জন্য কার্যত দোষারোপ করেছে কেন্দ্রের সমীক্ষা। আবার, অর্থনীতিতে প্রশংসা করার মতো পরিবর্তনের সূচনা ২০১৩-র শেষ থেকেই হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে সেখানে, যে-সময়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হয়ে আসেন রাজন।
প্রায় ছ’বছর ধরে অর্থনীতির হাল ক্রমেই খারাপ হওয়ার জন্য তখনকার ঋণনীতিকে দায়ী করেছে সমীক্ষা। সেগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর কারণ হিসেবে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ওই সময়ে সুদ আপাতদৃষ্টিতে উঁচুতে থাকলেও ‘প্রকৃত সুদের হার’ (যা মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে হিসেব করা হয়) একটানা অনেকটা নীচে বেঁধে রেখেছিলেন আরবিআই কর্তারা। তাঁদের কাজের মেয়াদের সময়ে বরাবরই ওই প্রকৃত হার ছিল শূন্যের নীচে। অথচ মূল্যবৃদ্ধি ছিল চড়া। ওই সময়ে একগুঁয়ে মূল্যবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নীচে আদৌ নামেনি। ফলে সুদও আরও বেশি রাখতে হত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরাও। রাজন গভর্নর হওয়ার পর থেকেই প্রকৃত সুদের হার বাড়তে শুরু করে। এক সময়ে তা শূন্যের ওপরে উঠে ইতিবাচক বৃত্তে ঢোকে। এখন তা ২ শতাংশের একটু বেশি (পূর্বাভাস, আগামী ৩ মাস সুদ এই স্তরেই থাকবে)।
সুব্রহ্মণ্যন জানান, গত বছরের জুলাই থেকেই আরবিআই প্রকৃত সুদের হার চড়াতে শুরু করে। সে কথা শীর্ষ ব্যাঙ্ক উর্জিৎ পটেল কমিটির রিপোর্টে আগেই জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সমীক্ষা। কমছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিও, নভেম্বরে যা শূন্যে নামার পরিসংখ্যানও ক’দিন আগেই দিয়েছে কেন্দ্র। সুদকে নমনীয় রেখে এই পথেই যে মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনা সম্ভব, সেটাই আরবিআইয়ের বর্তমান গভর্নর দেখিয়েছেন বলে তাঁকেও শিরোপা দিয়েছে কেন্দ্রের সমীক্ষা।