প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের।
ওমিক্রনের সিঁদুরে মেঘ দেখে অল্পবিস্তর আশঙ্কায় ভুগছে সব মহল। তার আগেই অবশ্য মূলত গত বছরের নিচু ভিতের তুলনায় দেশের বৃদ্ধির হারকে হাতিয়ার করে অর্থনীতির চাকা ঘোরার দাবি করেছে মোদী সরকার। কিন্তু আতসকাচের নীচে দেখলে যে আসলে দেশ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে, তা স্পষ্ট হবে বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের।
সোমবার দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার সভায় ও পরে অমিতবাবুর দাবি, ‘‘আমি শঙ্কিত, কারণ দেশ প্রায় স্ট্যাগফ্লেশনের মুখে। তা মোকাবিলার পদ্ধতি অজ্ঞাত।’’ উল্লেখ্য, মন্থর বা থমকে যাওয়া বৃদ্ধির মধ্যেই বেকারত্ব (১০.৪৮%) ও মূল্যবৃদ্ধি (পাইকারি বাজারে ১৪.২%) লাগাম ছাড়ালে তাকে বলে স্ট্যাগফ্লেশন। আর এই পরিস্থিতির জন্য নোট বাতিল, তড়িঘড়ি জিএসটি চালু থেকে শুরু করে করোনাকালে চাহিদার বদলে জোগান বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়ে মোদী সরকারের ধারাবাহিক ‘ভুল’ নীতিই দায়ী বলে তোপ দেগেছেন তিনি।
অমিতবাবু বলেন, বেহাল অর্থনীতির সূত্রপাত হয়েছিল করোনার আগে, এখনও তা বহাল। এতে ক্রমশ বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য। এখন তাঁর ‘বন্ধু’ নির্মলা সীতারামনও বেসরকারি লগ্নি বাড়েনি বলে স্বীকার করছেন। এই কারণে সভায় হবু হিসেব পরীক্ষকদের কাজের সময়ে অর্থনীতির প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সেই সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, করোনার শুরুতে চাহিদা বাড়াতে মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়িয়েছিল রাজ্য। তার পরে আবাসনে স্ট্যাম্প ডিউটি, সার্কল রেট হ্রাসের মতো পদক্ষেপে চাহিদা বাস্তবায়িত হওয়া সহজ হয়। কিন্তু কেন্দ্র গোড়ায় শিল্পকে কর ছাড় বা ঋণের যে সুবিধা দিয়েছিল, চাহিদার অভাবে তারা তা লগ্নিতে বাস্তবায়িত করতে পারেনি। উপরন্তু সে ভাবে সাহায্য না-পেয়ে বহু ক্ষুদ্র-ছোট সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। তাঁর কথায়, এখন সরকারি দফতর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দ্রুত মূলধনী লগ্নির জন্য নির্মলাকে চিঠি দিতে হচ্ছে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হতেও সময় লাগবে। এমনকি সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, জাতীয় আয়ে নীচের স্তরের ৫০% মানুষের অংশীদারি মাত্র ১৩%। ভুল নীতির জন্য আগামী দিনে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তাঁর।