ফাইল চিত্র।
রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ মাসের ১৫ তারিখ থেকে রোজকার আয়-ব্যয়ে নজর রাখার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের দাবি, অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগের ১৭ দিন দৈনিক ভিত্তিতে ঘাটতির হিসাব কষে চলার কারণ আগাম সতর্কতা। রাশ হাতের বাইরে বেরোচ্ছে দেখলেই চটজলদি ঠেকানো হবে।
এমনিতেই ঘাটতি নিয়ে চাপে কেন্দ্র। আয় এবং খরচের বহর দেখে বাজেটে সামান্য হলেও বাড়াতে হয়েছে (জিডিপি-র ৬.৮% থেকে ৬.৯%) তার লক্ষ্যমাত্রা। তার উপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে শেয়ার বাজার যে রকম নড়বড়ে, তাতে এ মাসে বাজারে প্রথম বার এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি (আইপিও) করে টাকা তোলার পরিকল্পনা বানচাল হতে বসেছে। সে ক্ষেত্রে আইপিও আসবে এপ্রিল থেকে শুরু নতুন অর্থবর্ষে (২০২২-২৩)। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলে, চলতি অর্থবর্ষের (২০২১-২২) শেষ মাসে এলআইসির হাত ধরে যে প্রায় ৬০,০০০ কোটি টাকা ঘরে আনার অপেক্ষায় দিন গুনছিল সরকার, সেটাও হাতছাড়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক তাঁরা রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যের মধ্যে বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই ১৫ মার্চ থেকে কর সংগ্রহ-সহ রাজস্ব আদায় এবং খরচের ওই নতুন কৌশল।
সূত্রের দাবি, একে তো এলআইসি-র আইপিও না-এলে বিলগ্নিকরণ খাতে আয় কম হবে। অন্য দিকে, কেন্দ্র ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজকোষে চাপতে চলছে খরচের বাড়তি বোঝা। যে কারণে প্রতি দিন কর এবং তার বাইরের সমস্ত রাজস্ব আদায়ে এবং খরচে নজর রেখে চললে সময় মতো ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সরকার। যদিও ঘাটতিকে মাত্রা ছাড়াতে দেখলে শেষ মুহূর্তে কী করা হতে পারে, তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
অর্থ মন্ত্রকের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর পর্ষদকে বলা হয়েছে, ১৫ তারিখ থেকে প্রতি দিন দুপুর ১২টার মধ্যে আগের দিন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর সংগ্রহের রিপোর্ট দিতে হবে। কর নয় এমন খাতে রাজস্ব আয় এবং বিলগ্নিকরণ থেকে হাতে আসা তথ্যও দেখা হবে দৈনিক। কন্ট্রোলার জেনেরাল অব অ্যাকাউন্টস-কে বলা হয়েছে, ওই ১৭ দিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রকের আয় ও খরচের পরিসংখ্যান জানাতে হবে ব্যয় সচিবকে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, সরকার রাজকোষ ঘাটতি নিয়ে যে উদ্বিগ্ন সেটা পরিষ্কার। বিলগ্নিকরণ খাতে চলতি অর্থবর্ষে প্রথমে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য নিয়েছিল তারা। সেটা সম্ভব নয় বুঝে কমিয়ে ৭৮,০০০ কোটি টাকায় নামিয়েছে। কিন্তু তার সামনেও প্রশ্ন চিহ্ন বসিয়েছে মার্চে এলআইসি-র আইপিও আসা নিয়ে সংশয়। কারণ, এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে বা সেই সব সংস্থায় সরকারের হাতে থাকা শেয়ারের কিছুটা বিক্রি করে তাদের সিন্দুকে এসেছে ১২,৪২৩ কোটি টাকা।