প্রতীকী ছবি।
গত ডিসেম্বর থেকে রান্নার গ্যাসের দাম মোট ১৭৫ টাকা বেড়েছে। কিন্তু বছরে ১২টি সিলিন্ডারের দামে গ্রাহকের যে ভর্তুকি পাওয়ার কথা, তার পরিমাণ সেই জুন থেকে স্থির, দাবি ডিলার ও তেল সংস্থা সূত্রের। যদিও ক্ষুব্ধ গ্রাহকের মতে, ভর্তুকি যেখানে নেমেছে, তাতে ওই টাকা দেওয়া না-দেওয়া সমান। যেমন, কলকাতায় তা ১৯.৫৭ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে দু’দফায় বেড়ে সিলিন্ডার ৮০০ টাকার দোরগোড়ায় পৌঁছলেও, ওই অঙ্ক বদলায়নি। গত অগস্টে একবার শুধু ২০.০৭ টাকা হয়েছিল। এ রাজ্যের হলদিয়া-সহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় আবার ভর্তুকি সম্পূর্ণ উধাও। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, মধ্যবিত্তের হেঁশেলে যখন কার্যত আগুন লেগেছে, তখন কেন্দ্র পাশে দাঁড়ানোর বদলে কার্যত ‘চুপিসাড়ে’ ভর্তুকি তুলে তাঁদের আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে ভারত বেশি আমদানি নির্ভর হওয়ার জন্য সম্প্রতি আগের ইউপিএ সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্ব বাজারে বর্ধিত দামের যুক্তি টেনে মধ্যবিত্তের দুরবস্থার জন্য দায়ী করেছেন তাদেরই। এ দিন কার্যত সেই সুরেই দামি রান্নার গ্যাস আমদানির বদলে সস্তায় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় রান্নার পক্ষে সওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। রান্নার জন্য বৈদ্যুতিক পণ্যে ভর্তুকির দাবিও তুলেছেন।
ভর্তুকিহীনের থেকে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দামের ফারাকই আগে হাতে পেতেন গ্রাহক। ‘অচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন ফেরি করা মোদী সরকার গোড়ায় বেশি আয়ের গ্রাহকের ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয় নিঃশব্দে মধ্যবিত্তের প্রাপ্যেও কোপ পড়েছে। গত জুলাইতে খোদ তেল মন্ত্রক জানিয়েছিল ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম ১০০ টাকা বাড়ানোর কথা। বছর দেড়েক আগে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম ও ভর্তুকির অঙ্ক ঘোষণা বন্ধ করে কেন্দ্র। অথচ আগে প্রতি মাসে গ্যাসের দাম পর্যালোচনার সময় সেটা করাই ছিল দস্তুর। যাতে গ্রাহক বুঝতে পারেন কত টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। আর এখন সিলিন্ডার কেনার পরে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়লে বোঝা যায় কত মিলল।
গত ডিসেম্বর থেকে সিলিন্ডারের দাম সংশোধনেও বদল এনেছে তেল সংস্থাগুলি। নভেম্বরের শেষ দিনে তারা বলেছিল, ডিসেম্বরে দাম বাড়বে না। কিন্তু দু’দফায় মাঝরাতে মোট ১০০ টাকা বেড়েছে। একই ঘটনার পুরনাবৃত্তি ঘটে ফেব্রুয়ারিতে। দু’দফায় মাঝরাতে দাম বাড়ে ৭৫ টাকা। তেল সংস্থাগুলির অবশ্য যুক্তি, বিশ্ব বাজারের বর্ধিত দামই এর কারণ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে মধ্যবিত্তকে সাহায্যের বদলে ভর্তুকিতে হাত দেওয়া হচ্ছে কেন?