—প্রতীকী চিত্র।
সর্বনাশের প্রহরে কেউ কেউ পৌষের ফসল তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ। যেমন বিভিন্ন উড়ান সংস্থা। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বছরে অন্তত দু’বার চেন্নাই যেতে হয় নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা জয়ন্ত বিশ্বাসকে। আজ, সোমবারের ট্রেনের টিকিট আগেই কাটা হয়েছিল। কিন্তু তা বাতিল হয়েছে বালেশ্বরের বাহানাগায় ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে। উড়ানের টিকিট কাটতে গিয়ে তিনি হতভম্ব। বিমানের আগেই আকাশ ছুঁয়েছে টিকিটের দাম! জয়ন্তের অভিযোগ, ‘‘দুর্ঘটনার সুযোগ নিচ্ছে উড়ান সংস্থাগুলি। এই হয়রানি না-করলেই ভাল হত।’’
রবিবার কলকাতা থেকে চেন্নাইয়ের বিমানের সর্বোচ্চ ভাড়া ৫০,০০০ টাকা ছাড়ায়। অন্য সময়েসাধারণত তা থাকে ৭০০০-১০,০০০ টাকা। বৃদ্ধি পাঁচ গুণ! আজ, সোমবার ন্যূনতম ভাড়া দেখাচ্ছে ২৬,০০০ টাকা। মঙ্গলবার প্রায় ১৬,০০০ টাকা। চেন্নাই থেকে ফেরার ভাড়াও বেড়েছে। একই অবস্থা বেঙ্গালুরুর উড়ানেরও।
এখন মূলত শিক্ষা, চাকরি ও চিকিৎসার জন্য কলকাতা থেকে ওই দুই শহরের যান মানুষ। বেশিরভাগ ট্রেনেই যাতায়াত করেন। দুর্ঘটনার পরে বাতিল হয়েছে দক্ষিণ ভারতগামী বিভিন্ন ট্রেন। উদ্ধারকাজ শেষে দুমড়েমুচড়ে থাকা কামরা সরিয়ে কবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে, রবিবার রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে জানায়নি রেল। ফলে জরুরি কাজে যেতে মানুষ বিমান টিকিটের খোঁজ করছেন। কিন্তু তার দাম শুনেই তাঁদের মাথায় হাত।
দুর্ঘটনার পরে বিমান সংস্থাগুলিকে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছিল নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ। কিন্তু তাতেও যে লাভ হয়নি, হঠাৎ এতটা দাম বাড়াতেই বুঝতে পারছেন মানুষ। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “এই দুঃসময়ে দাম বাড়ানো অনুচিত।”
তবে উড়ান সংস্থার কর্তাদের দাবি, দাম বাড়ছে স্বাভাবিক নিয়মেই। কেন্দ্র অনুমোদিত যে-ব্যবস্থায় টিকিট বিক্রি হয়, তাতে বিমানের আসন যত ভরতে থাকে, তত বাড়ে দাম। শেষের কয়েকটি আসনের জন্য তা সর্বাধিক হয়। উড়ান সংস্থার এক কর্তা বলেন, “লুকিয়ে কিছু করছি না। সবটাই তো সাইটে দেওয়া আছে। কেন্দ্র দেখতে পাচ্ছে।” অন্য এক সংস্থার কর্তার দাবি, “কলকাতা থেকে চেন্নাইয়ের উড়ান খুব কম। চিকিৎসার জন্য প্রচুর বাংলাদেশি নাগরিক তা ব্যবহার করেন। ফলে শেষ মুহূর্তে টিকিটের দাম বাড়বেই। ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।”
কংগ্রেসের মুখপাত্র শক্তিসিংহ গোহিল বলেন, “যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করাটা মোদী সরকারের দায়িত্ব। এটা সংস্থাগুলির ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়ের সময় নয়। কেন্দ্রের অতিরিক্ত উড়ানের ব্যবস্থা করা উচিত। এয়ার ইন্ডিয়া হাতে থাকলে তাদের বিমান কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু সরকার তো সেই সংস্থা বেচেই দিয়েছে!”