৮০সি ধারায় বিভিন্ন প্রকল্পে বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করলে ৩০% পর্যন্ত কর ছাড় মেলে পুরনো কর ব্যবস্থায়। প্রতীকী ছবি।
পাঁচ দিন হল সংসদে বাজেট পেশ হয়েছে। অনেক মানুষ এখনও হিসাব কষছেন, কোন কর কাঠামোটি কার পক্ষে বেশি লাভজনক। ২০২০ সালের বাজেটে পেশ করা হয়েছিল একটি বিকল্প কর কাঠামো। কিন্তু তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি সেটি। এ বার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে এবং ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে করের হার কম রেখে চেষ্টা করা হয়েছে তার আকর্ষণ বাড়ানোর। এটি এখন আর বিকল্প নয়, বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী মূল কর কাঠামো। কেউ চাইলে অবশ্য পুরনো কর ব্যবস্থায় থাকতে পারেন। ব্যবসা অথবা পেশাগত আয় না থাকলে যে কোনও বছর একটি থেকে অন্যটিতে সরে আসা যাবে, থাকলে এই সুবিধা মিলবে একবারই।
নতুন বিকল্পে বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। পুরনো কর ব্যবস্থায় এই সুবিধা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে এ ক্ষেত্রে আয়কর আইনের বিভিন্ন ধারায় সঞ্চয় এবং খরচের উপর বেশ খানিকটা কর ছাড়ের সুবিধা মেলে। নতুনটিতে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ৫০,০০০ টাকা বাদে আর কোনও ছাড় নেই। ফলে মানুষকে হিসাব কষতে হচ্ছে কোনটি বেশি লাভজনক।
আপাতদৃষ্টিতে নতুন কর কাঠামোকে আকর্ষণীয় লাগছে। কিন্তু যাঁদের গৃহঋণ আছে, রয়েছে জীবন বিমা, স্বাস্থ্য বিমা এবং পিপিএফ অ্যাকাউন্টে মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প, তাঁদের অনেকে ছাড়ের হিসাব কষে পুরনোটিতেই লাভ দেখতে পারেন। পুরনো কাঠামোয় করছাড়গুলি সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল।
সরকার মনে করছে বেশিরভাগ মানুষ সরে আসবেন নতুন কাঠামোয়। কারণ, তাতে করের হার কম। নিজের পছন্দ না জানালে ধরে নেওয়া হবে তিনি নতুন কাঠামোকেই (ডিফল্ট রেজিম) বেছে নিয়েছেন। তবে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে তলিয়ে দেখলে পুরনোটির গুরুত্ব বহাল। অর্থাৎ নয়া কাঠামোয় সরে যাওয়ার ‘পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া’ কম নয়। একটু দেখে নেওয়া যাক—
৮০সি ধারায় বিভিন্ন প্রকল্পে বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করলে ৩০% পর্যন্ত কর ছাড় মেলে পুরনো কর ব্যবস্থায়। অনেকটা বাধ্যতামূলক এই সঞ্চয় বন্ধ হলে মানুষের টাকা জমানোর অভ্যাস কমবে। যাঁদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং পেনশনের সুবিধা নেই, তাঁদের ভবিষ্যতের তহবিল গড়ে উঠবে না। নতুনটিতে বেশি মানুষ নাম লেখালে আকর্ষণ কমবে পেনশন প্রকল্প এনপিএস-এরও। যেখানে বছরে ৫০,০০০ পর্যন্ত টাকায় কর ছাড় আছে পুরনো ব্যবস্থায়। শর্তসাপেক্ষে ছাড় মেলে কিছু বিমার প্রিমিয়ামেও। নতুন ব্যবস্থায় তা না থাকায় জীবন বিমা কেনার উৎসাহ কমতে পারে। একই ব্যাপার স্বাস্থ্য বিমায়। নতুন কাঠামোতে দাতব্য সংস্থায় (এনজিও) অনুদানেও ছাড় নেই। অধিকাংশ এই কাঠামোর দিকে ঝুঁকলে তাদের অনুদান পাওয়া শক্ত হবে।
পুরনো ব্যবস্থায় গৃহঋণের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদে ছাড় মেলে। নতুনটিতে তা না থাকায় বাড়ি এবং ঋণের চাহিদা কমতে পারে। এমনিতেই ঋণে সুদের হার এখন চড়া। তার উপরে করের সুবিধা না থাকলে নতুন কাঠামোয় যাওয়ার আগে করদাতাদের দু’বার ভাবতে হবে। বাড়ির চাহিদা কমলে ভুগবে নির্মাণ শিল্প।
একটি কাল্পনিক হিসাবে দেখা যায়, সবক’টি কর ছাড় নিলে পুরনো ব্যবস্থায় ১০.১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। নতুন বিকল্পে প্রবীণদের জন্য আলাদা করের হার নেই। ছাড় থাকবে না সুদেও।
কিছু প্রস্তাব অবশ্য মানুষের মনে ধরেছে। যেমন, প্রবীণ নাগরিকদের প্রকল্প এবং ডাকঘর মাসিক আয়ে জমার ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি, করমুক্ত ছুটি বিক্রির টাকা বৃদ্ধি, মহিলাদের জন্য বিশেষ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প।
(মতামত ব্যক্তিগত)